শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে শুরু করায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র, দুর্ভোগে হাজারও মানুষ

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২২, ১:১৪ পিএম

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। এরই সাথে ভেসে উঠছে ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র। বিধ্বস্ত রাস্তা ও ব্রীজের কারণে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন গ্রামের যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াই এ দূর্ভোগের কারণ। ভারি বর্ষণ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘরের পানি নদীতে নেমে গেছে। এতে কমেছে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা। উজানে পানি কমলেও আজ সকাল থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ও হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ১০ গ্রামের নি¤œাঞ্চলে পানি ঢুকেছে।

উপজেলা সুত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানে এবং উপজেলার গ্রামীণ ও পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঢলের পানির প্রবল তোড়ে ১৮০ ফুট এলজিইডির পাকা সড়ক, দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, মহারশি নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের দেড় কিলোমিটার এবং সোমেশ্বরী নদীর বাঁধের বিভিন্ন স্থানের এক কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধশত কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ২০ গ্রামের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিলো। এতে ঝিনাইগাতী সদর, কাংশা ও ধানশাইল ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। ইতিমধ্যে নামতে শুরু করেছে পাহাড়ি ঢলের পানি। আর এতে ভেসে উঠতে শুরু করেছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। আর এখন দূর্ভোগে হাজার হাজার মানুষ। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া মধ্যপাড়া, ঘাগড়া কামারপাড়া, হাতিবান্দাসহ ছয়টি গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষের একমাত্র রাস্তা সোশ্বেরীর শাখা নদী পাড়ের একটি রাস্তা আর এ নদীর উপরদিয়ে নির্মিত একটি কাঠের ব্রীজ। পাহাড়ী ঢলের পানির তোরে ভেঙ্গে নিয়ে গেছে কাঠের ব্রীজটি। অপর প্রান্তে ভাঙ্গা রাস্তার ওপর নির্মিত বাঁশের সাকোটিরও কোন হদিস নেই। এতে এ এলাকার ২০ হাজার মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশের সব জায়গার সাথে। কেউবা জীবনের ঝুকি নিয়ে পায়ে হেটে, কেউ সাতরিয়ে পাড় হচ্ছে, কেউবা ভাড়া করা নৌকায়। আর স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া তো বন্ধই রয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় এলাকাবাসী। এছাড়াও আহম্মেদনগর-দীঘিরপার সড়ক, গুরুচরণ দুধনই-পানবর সড়ক ও রামেরকুড়া সড়কসহ অন্তত ১০টি স্থানে বেশ কয়েক জায়গায় সড়ক ভেঙে ওইসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘিœত হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার জনগনের চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই। বাধ ভেঙ্গে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ ঝিনাইগাতী বাজার ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। এতে পরিষদের কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয় এবং ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা প্রতিবছর বাধের মেরামত করি। কিন্তু এখানে একটি স্থায়ীভাবে বাধের ব্যবস্থা করলে সবাই ক্ষতির হাত থেকে বাচঁবে।

হাতিবান্ধা ইউনিয়নের মো: রুপচান মিয়া বলেন, এই কাঠের ব্রিজ দিয়া চারগ্রামের মানুষ পার হয়। পাহাড়ি ঢলে তো ব্রিজ ভাইঙ্গা নিয়া গেছে গা। এহন তো কেউ বাড়ি থাইক্কা বাইর হবার পাইতাছে না। বাড়ি থাইক্কা বার হবার চাইলে নৌকা না হই সাতার পাইরা যাইতে হইতাছে। বাজার সদাইও করবার পাইতাছি না। গরু-বাছুরের খাবারও দিবার পারতাছি না।
হাতিবান্ধা ইউনিয়নের তমছের আলী বলেন, হঠাৎ করেই পানি উজান থেকে নেমে আমাদের ইউনিয়নে ঢুকছে। আর এখানে একটা ব্রিজ ছিলো। ব্রিজটাও পানি আইসা ভেঙ্গে গেছে। পানি বেড়ে এই ইউনিয়নের ৬ গ্রামের মানুষ খুব দূর্ভোগে পরেছে।

মোছা: রাহেলা বেগম বলেন, আমরা খুব কষ্টে পরছি। পানি আওয়ার জন্য গরু-ছাগলগুইলা না খাইয়া আছে। পানি আমাগো এনো রাতেই আছিল না। সকাল থাইক্কা এই পানি আইছে।

মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: মামুন মিয়া বলেন, রাত থেকে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামে পানি ঢুকা শুরু করছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রান্না করে খাওয়ার চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। আজ রান্নাও করবার পাই নাই। চিড়া- মুড়ি খাইয়া আছি।

আহম্মদনগরের বাসিন্দা মো: আছমত আলী বলেন, আমার প্রজেক্টের মাছ পাহাড়ি ঢলে ভাসায় নিয়া গেছে গা। পানির চেয়ে মাছ আগে গেছে গা। কর্জধার কইরা মাছ চাষ করছিলাম এহন কি কইরা খামু।

এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে দেড় শতাধিক পুকুরের কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে পাহাড়ি ঢলের পানিতে কৃষির তেমন কোন ক্ষতি সাধিত হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আমিনূল হক জানান, শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে ছোট-বড় দেড় শতাধিক মাছের প্রজেক্টের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ ও অবাকাঠামোসহ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির দিলদার জানান, এবার আগাম ধান কেটে ফেলায়। ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। তবে ৬ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে ছিলো। আর পানি যেহেতু অতিদ্রুত নামছে। সবজির এখন বেশি ক্ষতি হবে না আশা করি।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী শুভ বসাক বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এলজিইডির মাধ্যমে ভাঙনকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামতে কাজ শুরু করা হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হওয়ার পথে। উপজেলার দুই কিলোমিটার কাঁচা পাকা সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এসব ভাঙ্গা সড়ক ও ব্রীজ কালভার্টের দ্রুতই মেরামত করা হবে। যেখানে যে অবস্থা ছিলো সে অবস্থায়ই ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১০ মেট্রিক টন জিআর এর চাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের মাঝে উপ-বরাদ্দ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন