বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত মুসলিম জাতি। তবু তাঁরাই কেন মানবতার শত্রুদের চক্ষুশূল? কেন তাঁদেরকেই আরো বিপর্যস্ত করার এই প্রাণান্ত প্রয়াস? কারণ, একমাত্র মুসলিম জাতির অধিকারেই আছে ঐ ‘অমর-করা’ আবে হায়াত- কোরআন ও সুন্নাহ, যা মূর্খতা ও বর্বরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এক জনপদ থেকে বের করে এনেছিল এক নূরানী মানব-কাফেলা, যাঁদের হৃদয় ও মস্তিষ্কের আলো থেকে দিকে দিকে প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল চিন্তা ও কর্মের অসংখ্য প্রদীপ। শত্রুর এইসব কর্মকাণ্ড এই অমর আলোক থেকে বিচ্ছিন্ন করার ও বিচ্ছিন্ন রাখার কিছু অপপ্রয়াস।
এই সকল ঘটনা প্রমাণ করে আল কোরআনের বিধান ও বিবরণের যথার্থতা। কোরআন তো বারবার বর্ণনা করেছে ইয়াহূদ-জাতির দুবৃত্তপনা। যারা, কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছাড়া, সর্বদা অভ্যস্ত ছিল আসমানী পয়গামের বিরোধিতায় এবং আল্লাহর নবী-রাসূলগণের অবাধ্যতায়। এমনকি এদের জাতীয় ইতিহাস কালিমালিপ্ত আল্লাহর নবীগণকে হত্যার ঘটনায়। হযরত ঈসা আ.-কেও এদের হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছে। পরিশেষে আল্লাহ নিজ কুদরতে তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আসমানে। এ শতকের সবচেয়ে বড় পরিহাস এই যে, বর্তমান খৃস্টজগত তাদের চরম শত্রু ইহুদী-জাতির ক্রীড়নক হয়ে আছে।
আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কষ্ট দেওয়ার কোন সুযোগটা এরা হাতছাড়া করেছে? ইসলামকে ধরাপৃষ্ঠ থেকে নির্মূল করার কোন চেষ্টাটা ওরা বাদ রেখেছে? কিন্তু এ তো আল্লাহর দ্বীন। আল্লাহই একে রক্ষা করেছেন এবং রক্ষা করবেন। এই সকল দুস্কৃতির ফল ওদের ভুগতে হয়েছে যুগে যুগে। এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা ঘুরে ঘুরে আসবে- এটাই ওদের ভাগ্যলিপি।
আল্লাহ তাআলা তো চৌদ্দশ বছর আগেই বিধান দিয়েছেন- ‘কাফিররা যেন মনে না করে যে, তারা পরিত্রাণ পেয়েছে। কখনো তারা মুমিনদের হতবল করতে পারবে না। ‘তোমরা তাদের মুকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে। এর দ্বারা তোমরা সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এছাড়া অন্যদেরকে, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন।’ (সূরা আনফাল : ৫৯-৬০)।
কে না জানে, বর্তমান সময়টা যতটা না যুক্তির, তার চেয়ে বেশি শক্তির। এখন যুক্তি শোনা হয় শক্তিমানের, দুর্বলের নয়। সুতরাং হে মুসলিম! তোমার যুক্তি তখনই ওদের শোনাতে পারবে, যখন তোমার যুক্তির পিছনে থাকবে শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা।
যারা শুধু ‘শান্তির কথা’ শুনতে ও শোনাতে চান তাদের উপলব্ধি করা উচিত, দুষ্টের দমন ছাড়া সমাজে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয় সমাজের ক্ষেত্রেই তা সত্য। এ কারণেই শান্তির ধর্ম ইসলামে আলাদাভাবে আছে জিহাদ ও নাহি আনিল মুনকারের বিধান।
এইসব ঘটনা আরো প্রমাণ করে, ‘আলকুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদা’- সকল কাফির এক ধর্মের, এক সম্প্রদায়ের। একারণেই দেখি, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় খৃস্ট-সমাজে, ইহুদি-সমাজে, নাস্তিক সমাজে এবং পৌত্তলিক সমাজে। ইসলাম-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতায় এরা সব একজোট।
সুতরাং এটাই এখন সত্য যে, ভাষা ও ভূখণ্ডের সকল বৈচিত্র্যের মাঝে পৃথিবীতে বাস করে দুটোমাত্র সম্প্রদায় : মুসলিম এবং অমুসলিম। তাই আজ বড় প্রয়োজন, সকল বিভেদ-বৈচিত্র্য ভুলে ইসলাম ও ইসলামের নবীর মর্যাদার প্রশ্নে সকল মুসলিমের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো এবং সীসাঢালা প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
এসব ঘটনা আরো প্রমাণ করে, বর্তমান যুগের উদারতা-অসাম্প্রদায়িকতা এবং মানবাধিকার ও পরমতসহিষ্ণুতার মতো শব্দগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। এই সকল শব্দ-শর শক্তিমানের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। এ কারণেই ব্যাপক মুসলিম-নিধন, মুসলিম জাহানের সম্পদ ও আব্রু লুণ্ঠন এবং ইসলাম ও ইসলামের নবীর অবমাননার পরও ওরা উদার, অসাম্প্রদায়িক; সভ্য ও শান্তি প্রিয়। পক্ষান্তরে প্রাণ ও মাতৃভূমি; সম্পদ ও আব্রু সব হারিয়েও মুসলিম সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক!
সুতরাং হে মুসলিম! তুমি সন্ত্রাসী, তুমি সাম্প্রদায়িক। কারণ তুমি মুসলিম। এখন তোমার ইচ্ছা, এইসব শব্দ-জুজুর ভয়ে নিজ আদর্শ ও অধিকারের দাবি ত্যাগ কর কিংবা এসবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আদর্শ ও অধিকার রক্ষায় সোচ্চার হও।
সারা জাহানের রব তো চৌদ্দশ বছর আগেই তাঁর পাক কালাম নাযিল করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ইহুদি ও খৃস্টানরা কখনো তোমার প্রতি প্রসন্ন হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। বল, আল্লাহর পথনির্দেশই প্রকৃত পথনির্দেশ। (সূরা বাকারা : ১২০)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন