কিয়ামতের বড় বড় নিদর্শনাবলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘দাজ্জালের আগমন।’ হাদীসের কিতাবসমূহে অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে দাজ্জালের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। প্রত্যেক নবীই তাঁর উম্মতগণকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কতিপয় চিহ্ন বর্ণনা করেছেন। মোটকথা, হাদীসে মুতাওয়াতির ও উম্মতের ইজমা দ্বারা দাজ্জালের বিষয়টি প্রমাণিত।
দাজ্জাল শব্দের অর্থ ও মর্ম : (১) আরবি দাজ্জাল শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে ‘দাজলুন’। দাজলুন শব্দের অর্থ হলো মিশ্রিত করা। যেমন কোনো বস্তু খলত-মলত ও মিশ্রিত হলে আরবিতে তাকে ‘দাজালা’ বলা হয়। এই নিরিখে দাজ্জাল হলো মিথ্যাবাদী কানা। সে মিথ্যা ও যাদুকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করে দেবে। (লিসানুল আরব : ১২/২৮৪-২৮৫)।
(২) দাজ্জাল শব্দের অভিধানগত অর্থ প্রতারক, মিথ্যাবাদী, সত্যমিথ্যার মিশ্রণকারী। অভিধানের এই দৃষ্টিকোণ থেকে উপরোল্লিখিত বিশেষণ যুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকে দাজ্জাল বলা যেতে পারে।
(৩) ব্যবহারিক দিক থেকে দাজ্জাল অর্থ মিথ্যাবাদী। কেননা, মিথ্যা ও অসত্য নিয়েই তার কাজকারবার চলবে। (৪) অভিধানকারদের কেউ কেউ বলেনÑ দাজ্জাল যেহেতু লোকদের সামনে সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ঘটাবে তাই উক্ত নাম তার জন্য নির্ধারিত। (শরহে আকীদায়ে সিফারা নিয়্যাহ : ২/৮৬, ৯৯)।
(৫) কারো কারো মতে মূল ধাতু দাজালুন শব্দ হতে দাজ্জাল শব্দের উৎপত্তি। তাই, সে হলো এক বিশেষ কাফির ব্যক্তি। কিয়ামতের আলামত অধ্যায়ে সংকলিত হাদীসসমূহে বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতার সাথে যার আলোচনা বর্তমান। তাই, দাজ্জাল হলো পথভ্রষ্টতা, কুফর ও ফিতনার উৎস। পূর্ববর্তী নবীগণ তাদের উম্মতগণকে তার সম্পর্কে সচেতন করেছেন ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
(৬) দাজ্জালুন শব্দটি এক বচন। এর বহু বচন হলো দাজ্জা-লুনা, অর্থাৎ মিথ্যাবাদী ও প্রতারকগণ। সুতরাং হাদীসসমূহের বর্ণনায় বহুবচনজ্ঞাপক দাজ্জা-লুনা শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তাই, অনুমান করা যায় যে, কিয়ামতের পূর্বে দুনিয়া জোড়া মিথ্যার জোয়ার ও মিথ্যার প্রচার ও ব্যবহার বহুল পরিমাণে বেড়ে যাবে। যেমনটি আমরা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মিথ্যার সয়লাব দেখতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে জনৈক চারণ কবি কত সুন্দরইনা বলেছেন : ‘যে দিকে তাকাই, শুধু দেখতে পাই, মিথ্যা আর মিথ্যা।’ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও বলেছেন : ‘বিশ্বের যত বড় বড় ধোঁকাবাজ, জাতিসংঘেতে আজ।’
দাজ্জালের পরিচিতি : বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) দাজ্জালের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বিবৃত করেছেন। যথা : (ক) দাজ্জাল ইহুদী বংশোদ্ভূত হবে। বিশ্বের বুকে ইহুদীরা মিথ্যাবাদী নবী ও রাসূল হত্যাকারী এবং আল্লাহ ও রাসূলদ্রোহীতার উদাহরণ হয়ে আছে। এ পর্যায়ে ইহুদীদের সম্যক পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
আরবি ইয়াহুদী শব্দটি হুদ শব্দ হতে গৃহীত। যার অর্থ তাওবাহ করা। অথবা শব্দটি ইয়াহুদা শব্দ হতে গৃহীত। ইয়াহুদা ছিলেন হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাই, বনী ইসরাঈলের একজন সদস্য। সাধারণত সকল বনী ইসরাঈলের ওপর শব্দটির প্রয়োগ হয়ে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন