শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআন মাজিদে সফলতার কথা

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

সফলতা ও ব্যর্থতা অতি পরিচিত দুটি শব্দ। সবার কাছে এর সংজ্ঞা এক না হলেও দুনিয়ার সবাই সফলতা লাভ করতে চায়। ছোট থেকে ছোট কোনো কাজে সফল হওয়া। বড় থেকে বড় কোনো উদ্দেশ্যে সফল হওয়া। সুচিন্তিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হওয়া। জীবনে সফল হওয়া। দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়া। এজাতীয় বিভিন্ন ভাগ-বিভাগে মানুষ সফলতাকে ভাগ করে থাকে। এর মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি ও অগ্রগতির হিসাব করে। তবে একজন মুমিনের জীবনে প্রকৃত সফলতা সেটাই, যার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করে। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন পাড়ি দিয়ে চিরস্থায়ী আখিরাতের জীবনে সুখ ও শান্তি লাভ করে। আল্লাহ তাআলার নায ও নিআমতপূর্ণ জান্নাত লাভ করে। আযাব ও গযবের জাহান্নাম থেকে চিরমুক্তি লাভ করে।
যেকোনো মুসলমান জাগতিক বিষয়াদির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে ফিকির করলে সফলতার এই সংজ্ঞায় একবাক্যে ঐকমত্য পোষণ করবে। এবং মনে-প্রাণে এই সফলতাকে কামনা করবে। এই সফলতার কথা কোরআন মাজিদেও এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন : প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সকলকে কিয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)।

হযরত সাহল ইবনে সা‘দ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, হযরত নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কারও চাবুক (-এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ) পরিমাণ জান্নাতের জায়গা, দুনিয়া ও দুনিয়ায় অবস্থিত সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম। হযরত সাহল (রা.) বলেন, একথা বলার পর নবী (সা.) সূরা আল ইমরানের ১৮৫ নং আয়াতের অংশ বিশেষ তেলাওয়াত করেন : যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/১৭৮)।

সূরা মুমিনে মুমিনদের জন্য ফিরিশতাদের দুআর একটি অংশ লক্ষ করুন : (হে আমাদের প্রতিপালক!) তাদেরকে সব রকম মন্দ বিষয় থেকে রক্ষা করুন। আর সেদিন আপনি যাকে মন্দ বিষয়গুলো (অর্থাৎ জাহান্নাম ও জাহান্নামের শাস্তি) থেকে রক্ষা করলেন, নিশ্চয় তার প্রতি দয়া করলেন। আর সেটাই মহা সফলতা। (সূরা মুমিন : ৯)।

কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার মাধ্যমে মুমিনদের সফলতা লাভের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন : (হে নবী) সেদিন আপনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে দেখবেন, তাদের সামনে ও ডান দিকে তাদের নূর ছুটাছুটি করছে। (তাদেরকে বলা হবে) আজ তোমাদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, যাতে তোমরা সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সফলতা। (সূরা হাদীদ : ১২)।

যে সফলতা কোরআন মাজিদের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত, যে সফলতা হাদীসে নববীর বক্তব্য দ্বারা সাব্যস্ত এবং বিবেকবান প্রত্যেক মুসলমানের চিন্তা ও ভাবনায় যা সুপ্রতিষ্ঠিত, সেই সফলতার প্রতি প্রত্যেকেরই আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেই সফলতা একজন মুমিনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। অতএব এর জন্য যে কোনো ধরনের ত্যাগ ও সাধনাকে গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য জীবন-প্রাণ বিলিয়ে কাজ করা উচিত। যেমন কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় এটাই প্রকৃত অর্থে মহা সফলতা। এমন সফলতার জন্যই আমলকারীদের আমল করা উচিত। (সূরা সাফফাত : ৬০-৬১)।

এই সফলতার প্রসঙ্গে কোরআন মাজিদে বেশ কয়েকটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে কয়েকটি আগামী আলোচনায় উল্লেখ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন