কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা কোরবানির পশু উঠেছে। এছাড়াও ময়নসিংহসহ আশে পাশের এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশু আনছেন। দক্ষিণাঞ্চলের গরু ব্যবসায়ীদের ঘাটের কষ্ট পদ্মা সেতুতে অবসান হলো।
দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের দ্রæত ট্রাক নিয়ে পদ্মা পাড়ে এলেও ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ক্লান্ত হতে হয়। সঙ্গে গরুগুলোও নিস্তেজ হয়ে পড়ত। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর আগের সেই চিত্র বদলে গেছে। মাত্র কয়েক মিনিটেই পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো সেতু দিয়ে পার হচ্ছেন। ঘাটের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে এমন হাজার হাজার পশু ব্যবসায়ীর মনে তৃপ্তির রেখা এঁকে দিয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে গরু নিয়ে এসেছেন দক্ষিণঞ্চালের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, একদিকে স্বপ্নপূরণ হইছে। আরেক দিকে ফেরির কষ্ট শেষ হইলো। ঘাটের যত কষ্ট ছিল সেতুতে ওঠার পর সব শেষ। এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র ৮ দিন। এরই মধ্যে স¤প্রতি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবার প্রতি আহŸান জানিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এতে কোরবানির হাটে ১৬টি নির্দেশনা পালনের কথা বলা হয়েছে।
নির্দেশনাগুলো হলো : হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোনো অবস্থায় বদ্ধ জায়গায় হাট বসানো যাবে না। হাট ইজারাদারদের মাধ্যমে হাট বসানোর আগে মহামারি প্রতিরোধী সামগ্রী যেমন-মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল সাবান বা সাধারণ সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা এবং মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
হাটের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীর স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিতে হবে। জনস্বাস্থ্যের বিয়ষগুলো যেমন মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব, হাত ধোয়া, জীবানুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাট কর্তৃপক্ষ চাইলে বিনামূল্যে মাস্ক সরবরাহ করতে পারেন বা এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। প্রতিটি হাটে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল পর্দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করতে হবে। পশুর হাটে প্রবেশের জন্য গেট (প্রবেশপথ ও বাহিরপথ) নির্দিষ্ট করতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রæত পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও পানিবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টিম গঠন করে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মেডিকেল টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার রাখা যেতে পারে, যাতে প্রয়োজনে হাটে আসা সন্দেহজনক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রæত চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করে রাখার জন্য প্রতিটি হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট (একটি আলাদা কক্ষ) রাখা যেতে পারে।
একটি পশু থেকে আরেকটা পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতারা কমপক্ষে ৩ ফুট বা ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু ক্রয় করতে পারেন। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর সময়কাল যেন কম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাকতে হবে। লাইনে ৩ ফুট বা কমপক্ষে ২ হাত দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিতে হবে। সব পশু একসঙ্গে হাটে প্রবেশ না করিয়ে, হাটের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পশু প্রবেশ করাতে হবে। হাটের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করা সম্ভব, এমন সংখ্যক ক্রেতাকে হাটে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অবশিষ্ট ক্রেতারা হাটের বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন। ১টি পশু ক্রয়ের জন্য ১ বা ২ জনের বেশি ক্রেতা হাটে প্রবেশ করবেন না। অনলাইনে পশু কেনা-বেচার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব কাজ নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পোস্তাগোলা এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী মিলে ট্রাকে করে মোট ৮০টি গরু এই বাজারে নিয়ে এসেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে হাট বসার কয়েকদিন বাকি থাকলেও গরু নিয়ে কিছু কিছু পাইকার ঢাকায় ঢুকেছেন। তাদের মূল হাটের বাইরে আপাতত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ধোলাইখাল এলাকায় এক পশু বিক্রেতা বলেন, আমরাও এবার আগের সময়ের চেয়ে বেশি গরু এনেছি। এখন বাজার শুরু কয়েকদিন দেখে প্রয়োজনে আরো গরু আমাদের কাছে রয়েছে। এখন যেগুলো এনেছি সেগুলো তারাতাড়ি বিক্রি হলে আরো আনতে পারবো। কিন্তু গরুর ট্রাকে যাতে কোন ধরনের চাঁদাবাজি না হয় সেই ব্যবস্থা করলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন