কোরবানির গোশত রক্ত কিছুই আল্লহর নিকট পৌছেনা। পৌছে শুধু মাত্র বান্দার তাকওয়া। কাজেই গোশত খাওয়ার নিয়তে নয়, কোরবানি হওয়া চাই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। কোরবানির পশু আল্লাহর দাসত্যের নিদর্শন। কোরবানি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের বহিঃপ্রকাশ। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীসহ সারাদেশের মুসজিদগুলোতে জুমার বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা কোরবানির মহত্ত্ব ও ফযিলতের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পেশ ইমামরা ঈদের দিন কোরবানির জবাইকৃত পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন বলেন, আরবসহ বিশ্ব মুসলিম জিলহজ মাসের প্রথম দশ তারিখের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। হাদিস শরিফে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন জিলহজ্ব মাসের ইবাদত আল্লাহর কাছে অত্যাধিক প্রিয়। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকে একটি রোজার বিনিময়ে আল্লাহ তায়লা একবছর রোজা রাখার সওয়াব দান করেন। এক রজনীতে ইবাদত করলে শবে কদরের রাতের ইবাদতের সমপরিমাণ সওয়াব দান করেবেন।
খতিব বলেন, হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা তাঁর পিছনের এবং সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। খতিব বলেন, কোরবানির দিন পশু কোরবানি করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় আমল। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌছে যায়। এ জন্য যাদের সমর্থ আছে প্রত্যেকের জন্য কোরবানির দিনে কোরবানি করা আবশ্যক। যাঁরা সমর্থ থাকার পরেও কোরবানি করেন না তাদের ব্যাপারে হযরত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাদের সমর্থ থাকার পরেও কোরবানি করে না। তাঁরা যেন ঈদগাহে না আসে।
আমরা যাঁরা কোরবানির করতে ইচ্ছা করেছি প্রথমেই আমরা আমাদের নিয়্যাত খালেছ করে নিবো। এখানে গোশত খাওয়া বা লোক দেখানো বা লৌকিকতা মুক্ত রেখে সম্পূর্ণ আল্লাহর জন্য কোরবানি করবো। সাথে হালাল অর্থ দ্বারা কোরবানির পশু ক্রয় করবো। হারাম টাকা দিয়ে কোরবানি করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।
ঈদের রাতে অনর্থক আনন্দ-ফুর্তি না করে কিছু সময় ইবাদত বিন্দেগীতে কাটানোর আহ্বান জানিয়ে খতিব বলেন, হযরত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ইবাদতের মধ্যে কাটাবে কেয়ামতের কঠিন ময়দানে তার অন্তরআত্মা প্রশান্ত থাকবে। এ জন্য ঈদের রাতে অনার্থক কাজে নষ্ট না করে আল্লাহর ইবাদতে কাটানোর আহ্বান জানান তিনি। আল্লাহ আমাদের ভালো আমলগুলো কবুল করেন। আমীন।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কোরবানির গোশত রক্ত কিছুই আল্লহর নিকট পৌছেনা । পৌছে শুধু মাত্র বান্দার তাকওয়া। কাজেই গোশত খাওয়ার নিয়তে নয়, কোরবানি হওয়া চাই একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। হালাল উপার্জিত সম্পদের মাধ্যমে। কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য নিয়তের পরিশুদ্ধতা ও মালের পবিত্রতা জরুরি। কোরবানির গোশত শুধু নিজেরাই নয় বরং অসহায়, গরীব, মিসকিন ও আত্মীয় স্বজনের মাঝেও কিছু অংশ বন্টন করার মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব। আর এর মধ্যেই একজন প্রকৃত মুমিন খুজে পায়। ঈদুল আজহার আনন্দ খুশি, আত্মার তৃপ্তি, মানসিক শান্তি। মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা একনিষ্ঠ ভাবে পরিশুদ্ধ নিয়তে আল্লাহর ইবাদাত করে। (সূরা বাইয়্যিনাহ, আয়াত নং ৫ ) । সূরা আনয়াম এর ১৬২ নং তিনি আরও ইরশাদ করেন : বল ! আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, জবাহকৃত এ পশুর গোশত, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু মাত্র তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হজ্ব, আয়াত নং ৩৭)। আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সূরা হজ্ব-২৮)। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোরবানির গোশত তোমরা খাও এবং দান কর। (সহিহ মুসলিম)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোরবানির গোশত বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েল ফকিরদের দিতেন। (আল হাদিস)।
খতিব ঈদুল আজহার আনন্দ খুশি উপভোগে শয়তানের সকল প্রবঞ্চনা উপেক্ষা করে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর সুন্নাতের অনুসরনে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এর চেতনায় পশু কোরবানি করত: সর্ব প্রকার অশ্লিলতা বেহায়াপনা, গান বাজনা ও অন্যায় অসামাজিক কার্য্যকালাপ থেকে বেচে থাকার এবং কোরবানির শিক্ষা নিয়ে পরস্পরে আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশ ও দশের কল্যাণে নিজেকে আত্ম নিয়োগ করার জন্য মুসল্লীদের প্রতি আহবান জানান।
ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি বলেন, ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফযিলতপূর্ণ ইবাদত হলো জিলহজ্জ মাসের ১০,১১,১২ এই তিন দিনের কোনো এক দিনে নির্ধারিত পশু জবাই করা। কোরবানি করার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহভীতি অর্জন করে জীবনযাপন করা।
কোরবানিকারী শুধুমাত্র পশুর গলায় ছুরি চালাবে না বরং তার সকল কুপ্রবৃত্তির উপর ছুরি চালানোর নিয়ত করে তা নির্মূল করবে। শুধু গোশত খাওয়া আর রক্ত প্রবাহিত করার নাম কোরবানি নয় বরং আমাদের সবকিছুই মহান আল্লাহর জন্যে এবং তার পথেই সবকিছু উৎসর্গ করার নামই হচ্ছে কোরবানি। উল্লেখিত অনুভূতির সাথে কোরবানি করা হযরত ইবরাহিম এবং ইসমাঈল (আ.) এর সুন্নাত। অন্যথায় এটা একটা জাতীয় প্রথায় পর্যবশিত হবে। খতিব বলেন, কোরবানির পশু আল্লাহর দাসত্যের নিদর্শন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে কোরবানির উটগুলোকে আমি তোমাদের জন্যে মহান আল্লাহর (দাসত্যের) নিদর্শনাবলীর একটি বানিয়ে দিয়েছি। (সূরা হজ্জ,৩৬)। কোরবানিকারী কোরবানি করার সময় এই আবেগও প্রকাশ করবে যে তার জীবনও মহান আল্লাহর পথে ওইভাবে কোরবানি করা হবে যেভাবে এ পশু সে কোরবানি করছে। কোরবানি মহান আল্লাহর নেয়ামত সমূহের বাস্তব কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। কোরবানি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের বহিঃপ্রকাশ"
অর্থাৎ আল্লাহর নামে পশু জবেহ করা এই কথারই প্রমাণ যে তিনিই এসব পশুর প্রকৃত মালিক এবং এ কথারও বাস্তব বহিঃপ্রকাশ যে ঈমানদার কোরবানিকারী অন্তর থেকে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি অঘাত বিশ্বাস রাখে। পরিশেষে সকলের কাছে এই আবেদন করছি যে আসুন উল্লেখিত উদ্দেশ্যগুলোকে সামনে রেখে আমরা কোরবানি করি। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বলেন, যে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হল রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত এবং কোরআন সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় হতে হবে। লোক দেখানো বা দুনিয়াবী কোন স্বার্থের জন্য হতে পারবে না। কেননা যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করবে, সে ছোট শিরক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবে। তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে। সুতরাং আসছে কোরবানি হতে হবে লৌকিকতা এবং পার্থিব যাবতীয় স্বার্থমুক্ত। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কে কার চেয়ে সুন্দর গরু কিনতে পারে, কার গরু মহল্লার মধ্যে সবচেয়ে দামি। অনেকে আবার ক্রয়কৃত গরুকে সাজিয়ে মহল্লায় চক্কর দেয়। যাতে এলাকাবাসী জানে যে, তার গরু এত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। কেউবা নতুন জামাইয়ের বাড়িতে আস্ত রানের গোশত পাঠাতে কোরবানি দেন। এগুলো অনুচিত। এর মাধ্যমে কোরবানির মতো বহু সওয়াবপূর্ণ ইবাদতকে আমরা নষ্ট করে ফেলি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য কোন কাজ করে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে কেয়ামতের দিন তাকে শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তায়ালা তার পরিবর্তে কেয়ামতের দিন তাকে দেখিয়ে দিবেন (অর্থাৎ সে তার আমলের কোন বিনিময় পাবে না বরং এটা তার শাস্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে)। (বুখারি, হাদিস নং-৬৪৯৯)।
খতিব আরও বলেন, কোরবানিকৃত পশুর রক্ত, বর্জ্য ইত্যাদি দ্রুত অপসারণের ব্যাপারে আমরা যতœবান হই। ড্রেনসহ যত্রতত্র এগুলো না ফেলে নির্ধারিত স্থানে রেখে দিয়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাজে সহায়তা করি। এই শহর, নগর পরিস্কার রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। যারা যত্রতত্র ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষিত করবে; তাদেরকে আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে। কারণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজনের পরিচ্ছন্নতার প্রশংসা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, "সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।" (সূরা আত-তাওবা-১০৮)। হাদীসেও বিভিন্ন ভাবে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। আবু মালেক আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, "পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।" (মুসলিম, হাদিস নং- ২২৩)। ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, গৃহের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা; কোনোটাই বাদ যায়নি। তাই আমাদের উচিত, পশু কোরবানির পর পরিচ্ছন্নতার দিকটিও খেয়াল রাখা। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদে খতিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী বলেন, ফজিলতপূর্ণ জিলহজ্ব মাসেই শুধু ইসলামের সমস্ত মৌলিক ইবাদত করার সুযোগ আছে। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, কোরবানি। কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শি’য়ার বা মহান নিদর্শন। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি করো।’ (সূরা কাউসার, আয়াত-২)। কোরবানির ফজিলত অসংখ্য ও অপরিসীম। কোরবানির দিনগুলিতে আল্লাহ পাকের নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোরবানি করা। কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে এটাও জানতে পারি যে কোরবানিকৃত পশুর শিং, পশম ও হাড় ইত্যাদি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। সর্বোপরি কোরবানিকৃত পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর দরবারে সে কোরবানি পেশ করা হয় এবং মাকবুলিয়াত পেয়ে যায়, যদি সে কোরবানি পরিপূর্ণ ইখলাস ও খুশি মনে করা হয়। কোরবানিকৃত পশুর রক্তের ফোঁটা ঝরার পূর্বেই আল্লাহ সে বান্দার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। কোরবানিকৃত পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে আল্লাহপাক নেকি দিবেন। ইবনে মাজাহতে বর্ণিত হযরত যায়েদ ইবনে আরক্বাম রা. এর এক দীর্ঘ হাদিসের এক অংশে এভাবে এসেছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেছেন। পরিপূর্ণ ইখলাসের সাথে সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি আদায় করলে উক্ত কোরবানি তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে প্রতিবন্ধকতার কাজ করবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভৎসর্ণা করে বলেছেন, সে যেনো ঈদগাহের নিকটবর্তীও না হয়।
এছাড়াও হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত একটা হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি কোরবানি আদায় করলে আল্লাহপাক তার ঋণ পরিশোধের সু-ব্যবস্থা করে দিবেন। অন্য এক হাদিসের মধ্যে এসেছে কোরবানির পশু পুলসিরাতে আমাদের বাহন হিসাবে থাকবে। কারবানির মূল শিক্ষা তাকওয়া অর্জন ও আত্মার সংশোধন। বাহ্যিকভাবে কোরবানিদাতার মনের এই অবস্থা অনুধাবন করা যায় না। এটি যার যার অন্তরের ব্যাপার। অন্তর যদি মানুষের বিশুদ্ধ হয় তাহলে গোটা দেহই বিশুদ্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ অন্তর দেখে বান্দার বিচার করবেন। কার অন্তর কতটা স্বচ্ছ ও সুন্দর আল্লাহর কাছে তা পরীক্ষা দেয়ার উপযুক্ত সময় কোরবানি। কোরবানি ছাড়া মুসলমানের জীবন মূল্যহীন। কোরবানি ছাড়া পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায় না। সর্বশেষে মহান রব্বুল আলামীনের নিকট এই দোয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে সকল বিধি-বিধান মেনে, পরিপূর্ণ এখলাসের সাথে সন্তুষ্টচিত্তে ইসলামের এই গুরুত্বপূর্ণ আহকাম কোরবানি তথা সুন্নাতে ইবরাহীমীকে যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করেন! আমীন। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেছেন, ঈদুল আজহায় পশু জবাই করার পাশাপাশি মানুষের ভেতরে থাকা পশুত্বকে কোরবানি করার চেষ্টা করা উচিত। কেননা মানবের ভেতর যে পশুশক্তি লুকিয়ে আছে তা বিসর্জন দিয়ে তাকওয়া অর্জনই হলো কোরবানির শিক্ষা। লোক দেখানোর জন্য কোরবানি নয় বরং পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করার নামই কোরবানি।
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করলো তার কোরবানি পরিপূর্ণ হলো ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। (বুখারী ৫৫৪৫ ও মুসলিম:১৯৬১ ) সুতরাং কোরবানির পশু জবাহের বিকল্প কোন ইবাদত নেই। আজকাল অনেকেই কোরবানির পরিবর্তে গরিব দুঃখীদের সাহায্যের কথা বলে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। যা ইসলাম সমর্থন করে না। বন্যা ও করোনার অযুহাতে পশু কোরবানির পরিবর্তে দান সদকা বা অসহায়দের আর্থিক সহায়তা প্রদানে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। তিনি কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কোরবানির পশু জবাহের মাধ্যমে শরিয়তের ওয়াজিব হুকুম আদায় এবং নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন