রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কাবা গৃহ বরকতময় ও কল্যাণের আধার

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০৯ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২২

আল্লাহ জাল্লা শানুহু প্রথম থেকেই পবিত্র কা’বা গৃহকে বরকতময় ও কল্যাণের আধার হিসেবে নির্ধারণ করে রেখেছেন। এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, যা বাক্কায় (মক্কার পূর্ববর্তী নাম) অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের হেদায়েতের জন্য ও বরকতময়। (সূরা আলে ইমরান : ৯৬)।

এই আয়াতে কারীমায় মহান আল্লাহপাক কা’বা গৃহের তিনটি ফজিলতের কথা বিবৃত করেছেন। প্রথমত, কা’বা গৃহ হচ্ছে মানুষের জন্য প্রথম ইবাদত গৃহ। দ্বিতীয়ত, কা’বা গৃহ হচ্ছে সারা দুনিয়ার মানুষের হেদায়েতের নিদর্শন এবং তৃতীয়ত, কা’বা গৃহ হচ্ছে বরকতময়। বক্ষমান ক্ষুদ্র নিবন্ধে আমরা কা’বা গৃহের বরকতময় ও কল্যাণের আধার হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করতে প্রয়াস পাব। আসুন, এবার সেদিকে নজর দেয়া যাক।
উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় কা’বা গৃহকে ‘মুবারক’ অর্থাৎ বরকত ও কল্যাণের আধার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরবী ‘মোবারক’ শব্দটি শব্দমূল ‘বরকত’ থেকে উদ্ভূত। বরকত শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, বর্ধিত হওয়া, বিস্তৃত হওয়া ইত্যাদি। তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, কোনো বস্তুর বৃদ্ধি দু’ভাবে হতে পারে। প্রথমত, বস্তুর প্রকাশ্য আকার অবয়ব ও পরিধি বেড়ে যাওয়া। যেমন মানব দেহ বৃক্ষ ও লতার বৃদ্ধি পাওয়া।

এসব বস্তুর বাহ্যিক বৃদ্ধি অতি সহজেই অনুধাবন করা যায়। দ্বিতীয়ত, অর্থগত, মর্মগত ও গুণগত দিক থেকে বৃদ্ধি পাওয়া। মোট কথা, তদ্বারা এত বেশি কাজ নিষ্পন্ন হওয়া যা তদপেক্ষা বেশি বস্তুর দ্বারা ও সাধারণত সম্ভব হয়ে উঠে না। অর্থগত দিকের এই পরিবৃদ্ধির শেষ সীমানা নিরূপণ করা যায় না। বস্তুত, কা’বা গৃহের বরকতময় হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশত ও অর্থগত উভয় দিকে থেকেই সুমহান মর্যাদার শৈল শিখরে অধিষ্ঠিত আছে এবং থাকবে। এর কোনো পরিবর্তন সাধিত হবে না।

কা’বা গৃহের প্রকাশ্য ও বাহ্যিক বরকতময় হওয়ার নজির এই যে, এই গৃহের মূল ভিটি বা ভিত্তি মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু স্থির করেছেন। একই সাথে এই গৃহকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানাদি সুষ্ঠুভাবে নিষ্পন্ন করার লক্ষ্যে এর চত্বর বা চার পাশ বর্ধিত হয়েই চলেছে। প্রয়োজন অনুসারে এই বৃদ্ধি হবেই। আর এর দ্বিতীয় নজির এই যে, ভৌগোলিক দিক থেকে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকা পাহাড়, পর্বত, টিলা, টক্কর, অনুর্বর বালুকাময় মরুভূমি সদৃশ। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় পানির বড় অভাব। বালুকাময় এই বিশুষ্ক মরুতে খাদ্যশস্য, ফল-মূল, তরিতরকারি এবং মানব জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিছুই উৎপাদিত হয় না।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও মক্কা নগরীর অধিবাসীরা এবং বহিরাগতরা, এমনকি হজের সময় সমবেত লক্ষ লক্ষ হাজী সাহেবানদের খাওয়া-পরা, চলাফেরা এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সমারোহ এত বিপুল পরিমাণে মক্কায় মজুদ থাকে, যা কল্পনার অতীত। সেখানকার লোকজনদের অভাব বলতে কোনো কিছু পূর্বেও ছিল না, এখনও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। এর তৃতীয় নজির এই যে, আদিকাল হতে শুরু করে মক্কা নগরীর জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের সাথে সারা বছরই বহিরাগত ওমরা আদায়কারীরা মিলিত হচ্ছে এবং হজের সময় বহিরাগত হাজীদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এত কিছুর পরও কুরবানির পশু উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়ার কোনো অভাব সেখানে দেখা দেয় না। এমনকি, মক্কার অধিবাসীরাও সারা বছরই এসব হালাল পশুর গোশ্ত ও দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং মক্কায় এত সব আয়োজন এবং এত সব প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা কা’বা গৃহের মর্যাদার কারণেই হয়ে থাকে। তা নতুন করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

বস্তুত, কা’বা গৃহের প্রকাশ্য ও বাহ্যিক বরকতময় হওয়ার বিষয়টির পাশাপাশি এর অর্থগত, গুণগত ও আধ্যাত্মিক বরকতের বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য। আধ্যাত্মিক বরকত যে কি পরিমাণ হয়ে থাকে তার সীমা-পরিসীমা নির্ণয় করা একান্তই দুরূহ ব্যাপার। হজ ও ওমরাসহ অন্যান্য সকল শ্রেণির এবাদতই কা’বা গৃহে সম্পন্ন করা যায়। এসব ইবাদতের সওয়াব বিরাট অঙ্কের হয়ে থাকে এবং এতে বেশি কল্যাণ লাভ করা যায়, যা কা’বা গৃহ ব্যতীত অন্য স্থানে আদায়কৃত ইবাদতে আশা করা যায় না।

এ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেছেন : বাসগৃহে নামায আদায় করলে এক নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু মহল্লার মসজিদে আদায় করলে পঁচিশ নামাযের সওয়ার লাভ করা যায়। জামে সমজিদে আদায় করলে পাঁচশত নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে আকসায় আদায় করলে এক হাজার নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার নামাযের সওয়াব পাওয়া যায়। আর মসজিদে হারামে (কাবা গৃহের মসজিদে) আদায় করলে এক লক্ষ নামাযের সওয়াব লাভ করা যায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ; ত্বাহাভী)।

আর একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, বিশ্বের সকল শ্রেণির মানুষই কাবা গৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং মনের গহন হতে এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে অত্যন্ত আবশ্যকীয় বলে মনে করে। এমনকি হরমে কাবার অভ্যন্তরে যুদ্ধ বিগৃহ করা ও খুনখারাবি করাকে জঘন্যতম অপরাধ বলে গণ্য করে। এমনটি হওয়া সারা দুনিয়ায় কেবলমাত্র

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ইমরান ১৩ জুলাই, ২০২২, ১:৫৩ এএম says : 0
কা’বা গৃহের প্রকাশ্য ও বাহ্যিক বরকতময় হওয়ার নজির এই যে, এই গৃহের মূল ভিটি বা ভিত্তি মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু স্থির করেছেন।
Total Reply(0)
ইমরান ১৩ জুলাই, ২০২২, ১:৫০ এএম says : 0
আল্লাহ জাল্লা শানুহু প্রথম থেকেই পবিত্র কা’বা গৃহকে বরকতময় ও কল্যাণের আধার হিসেবে নির্ধারণ করে রেখেছেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন