রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে কিছু মাসআলার ভুল প্রয়োগ-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

অনেকে দুধের শিশুর বমিকে নাপাক মনে করে না। বিশেষ করে দুধ পান করার পরক্ষণে যদি বমি করে আর ওই বমি দুর্গন্ধযুক্ত না হয় তাহলে ঐ বমিকে নাপাক মনে করা হয় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল। এ ব্যাপারে সঠিক মাসআলা হলো, শিশুর দুধবমির হুকুম বড়দের বমির মতোই। মুখভরে বমি হলে সেই বমি নাপাক। চাই দুধ পানের পরক্ষণেই বমি করুক বা পরে, বমি দুর্গন্ধযুক্ত হোক বা না হোক। আর মুখভরে না হলে ওই বমি নাপাক নয়। (শরহুল মুন্য়া ১২৯)।

অনেকে শিশুর অল্প বমিকেও নাপাক মনে করে। কাপড়ে-শরীরে লাগলে তা নাপাক হয়ে গেছে, ভাবে। অথচ অল্প বমি নাপাক নয়। বমি যতই দুর্গন্ধপূর্ণ হোক না কেন। সুতরাং ঐ বমি কোনো কিছুতে লাগলে সেটি নাপাক হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার ১/১৪০)।
তিন-চার বছর বয়সী শিশুর ওপর সতরের বিষয় নেই ঠিকই, কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন ছাড়াও তাদের উলঙ্গ করে রাখতে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। হ্যাঁ, এক-দেড় বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এতে তেমন একটা দোষ নেই। কিন্তু এর চেয়ে বেশি বয়সী বাচ্চার প্রয়োজন ছাড়া সতর খুলে রাখা ঠিক নয়। আর বাচ্চার বয়স চার বা তার বেশি হলে তার সামনে ও পেছনের সতরের অংশ ঢেকে রাখা জরুরি। এ বয়সের পরও তাদের সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন রাখা গুনাহ।

এরপর বাচ্চার শারীরিক গড়ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে এমন বয়সে উপনীত হলে সতরসহ আশপাশের অঙ্গ যথা উরু ইত্যাদি ঢেকে রাখা জরুরি। এ বয়স থেকেই বাচ্চাকে পূর্ণ পোশাক যথা পায়জামা পরানো ভালো। যেন সাত বছর থেকেই পূর্ণ পোশাকে শিশু অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর নয়-দশ বছর থেকে বাচ্চার সতর বালেগদের মতোই, একই হুকুম। আজকাল ৬-৭ বছর বয়সী বাচ্চাদের হাফপ্যান্ট পরানো হয়, যা আদৌ সমীচীন নয়। আর ৯-১০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে তো হাফপ্যান্ট পরানো নাজায়েজ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪০৭-৪০৮)।

কোনো কোনো মা-বোন অধিক উত্তম মনে করে নবজাতককেও পূর্ণ পোশাক পরান। যেমন- ছেলে হলে পায়জামা, আর মেয়ে হলে ফুলহাতা জামা ও পায়জামা পরিয়ে থাকেন। আসলে এ বয়সেও এই পূর্ণ পোশাক পরিধান করানো বাচ্চার জন্য নিঃসন্দেহে কষ্টের কারণ। আর এটি বিড়ম্বনাকরও বটে। শরীয়তের কোনো দলিলে এ বয়সেই পূর্ণ পোশাক পরানো উত্তম হওয়াটা প্রমাণিত নয়। বরং শিশুর আরাম ও মায়ের কম কষ্ট উভয়টি বিবেচনায় আনলে অন্তত এ বয়সে পূর্ণ পোশাক না পরানোই উত্তম বিবেচিত হয়। হ্যাঁ, শিশুর জন্য পূর্ণ পোশাক কষ্টকর নয় এমন বয়স থেকে পূর্ণ পোশাক পরানোটা উত্তম।

মনে করা হয় শিশুদের পোশাক সম্পর্কে শরীয়তের কোনো নীতিমালা নেই। যেমন ইচ্ছা পরানো যাবে। অথচ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বড়দের ব্যাপারে পোশাকের যে নীতিমালা, ছোটদের ক্ষেত্রেও তাই। বিজাতীয় পোশাক যেমন বড়দের জন্য নিষিদ্ধ তেমনি ছোটদের জন্যও নিষিদ্ধ। একইভাবে ছেলেদের মেয়েদের পোশাক এবং মেয়েদের ছেলেদের পোশাক পরানোও গুনাহ। নাবালেগ সন্তানদের এ ধরনের নিষিদ্ধ পোশাক পরালে এর গুনাহ হবে মা-বাবার; অথচ এর খারাপ প্রভাব তো সন্তানদের ওপর পড়বেই। আজকাল মেয়েরা যেমন ছেলেদের পোশাক প্যান্ট-শার্ট পরে তদ্রƒপ ছোট মেয়েদেরও প্যান্ট-শার্ট পরাতে দেখা যায়, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৭ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরও সন্তানের নামাযের প্রতি গুরুত্ব না দেয়া অনেক বড় একটি ভুল কাজ। হাদিস শরীফের সুস্পষ্ট হুকুম, ‘সন্তানের বয়স সাত হলে তাদের নামাযের নির্দেশ দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ- ৪৯৫)। হাদিসের এই হুকুম থেকে বোঝা যায় যে, এ বয়সের পূর্বেই শিশুকে নামাযের প্রয়োজনীয় সূরা-কেরাত, দুআ ও নিয়মকানুন ধীরে ধীরে শেখাতে থাকা চাই, যেন সে সাত বছর বয়সে নামাযের হুকুম পালনের যোগ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আফসোস! সাত বছর কেন দশ বছরেও সন্তানের নামায শুদ্ধ হওয়ার মতো সূরা-কেরাত অধিকাংশ পরিবারে শেখানো হয় না। নামাযের নিয়মকানুন ইত্যাদির প্রতি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করা হয় না।

হাদিসে নেক সন্তানকে মা-বাবার জন্য সদকায়ে জারিয়া হওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক মা-বাবার দুর্ভাগ্য যে, সামান্য বেখেয়ালির কারণে তাদের সন্তান গুনাহে জারিয়ার কারণ হয়ে যাচ্ছে। মা-বাপ ছোটকালে শেখায়নি বিধায় বড় হয়ে কর্মব্যস্ততার মাঝে নামাযটাও শুদ্ধ করে পড়ার সুযোগ হয় না অনেকের। এসব সন্তান শুধু গুনাহে জারিয়াই নয় বরং কিয়ামতের দিন নিজের দুরবস্থার জন্য আহকামুল হাকেমীনের দরবারে মা-বাবার বিরুদ্ধে আপিল করতেও ছাড়বে না। আল্লাহ তাআলা সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন