বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের চাপ

পরিবহনে ধীরগতি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের স্তÍুপ বাড়ছে। কন্টেইনারে ঠাসা বিভিন্ন ইয়ার্ড। বন্দরে শেডগুলোতে খোলা পণ্যের পাহাড় জমছে। ঈদের ছুটি শেষ হলেও বাড়েনি আমদানি পণ্য পরিবহন। গত কয়েকদিনে জাহাজ থেকে যে পরিমাণ পণ্য ও কন্টেইনার খালাস হয়েছে ডেলিভারি-পরিবহন হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। তাতে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার প্রায় কাছাকাছি চলে গেছে। আমদানি পণ্য পরিবহন না বাড়লে বন্দরে পণ্য ও কন্টেইনার জটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও এখনো হ্যান্ডলিংয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ধীরে ধীরে ডেলিভারি বাড়ছে। আগামীকাল রোববার থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ কলকারখানাগুলো পুরোদমে চালু হলে পণ্য পরিবহনে আরো গতি আসবে। আর তাতে কন্টেইনারের চাপ কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরে এবারের ঈদের ছুটিতে জাহাজ জট নেই। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় জাহাজের সংখ্যা ছিল আটটি।
বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডের কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস। স্বাভাবিক অবস্থায় বন্দরের ইয়ার্ডে ৩৫-৩৬ হাজার কন্টেইনার থাকে। গতকাল শুক্রবার কন্টেইনারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৪৯৯ টিইইউএস। এখন স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় থেকে সাত হাজার বেশি কন্টেইনার রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়ে থাকে। এখন তা এক হাজার থেকে ১২শ’তে নেমে এসেছে। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে।
গতকাল বন্দর এলাকায় কন্টেইনারবাহী ভারি যানবাহনের ভিড় দেখা গেছে। জানা গেছে ঈদের ছুটি শেষে কলকারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিতে শুরু করেছে। কারখানা পুরোদমে সচল রাখতে আমদানি কাঁচামাল বন্দর থেকে কারখানায় নেওয়ার হার বাড়ছে। বন্দর থেকে বেসরকারি ডিপোতেও আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহন বাড়ছে।
প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে জট পরিস্থিতি এড়াতে বন্দরের পক্ষ থেকে পণ্য ডেলিভারি স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে ঈদের ছুটিতে কলকারখানা বন্ধ থাকায় আমদানিকারকেরা কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে চান না। আবার ভারী যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকে। ছুটিতে থাকেন পণ্য ডেলিভারিতে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরাও। তাই এই সময়ে কন্টেইনারের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। ঈদুল ফিতরের সময় লম্বা ছুটির কারণে বন্দরে জট পরিস্থিতি তৈরী হয়।
তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভাল বলে জানান বন্দরের কর্মকর্তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ঈদের ছুটিতে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার পরিবহনের হার ছিল অনেক কম। ঈদের দিন কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও পণ্য ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। তবে আমদানিকারকদের অনাগ্রহের কারণে ডেলিভারি তেমন হয়নি। তবে গত দুই দিনে ডেলিভারি পরিবহনের হার বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে তা এখনো ধারণ ক্ষমতার নিচে আছে। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ডেলিভারি, পরিবহন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এবারের ঈদের ছুটিতে বন্দরে জাহাজ জট হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় বর্তমানে আটটি জাহাজ বর্হিনোঙরে রয়েছে।
এদিকে বন্দরের শেডগুলোতে ঠাঁই নেই। এতে খোলা পণ্যবাহী জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। খোলা পণ্য যথা সময়ে ডেলিভারি না নিলে আগামী ২৫ জুলাই থেকে চারগুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের পরিচালকের দফতর থেকে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বাল্ক ও ব্রেক বাল্ক জাহাজে আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরনের কার্গো (পণ্য) বন্দরের শেডগুলোর ভেতরে ও বাইরে ডাম্পিং অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে।
এতে বন্দরের বাল্ক জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজের বার্থিংপেতে বিলম্বসহ বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে দ্রুত এসব পণ্য ডেলিভারি নিতে হতে হবে। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ২৫ জুলাই থেকে স্বাভাবিক ভাড়ার ওপর চারগুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপ করা হবে।
এদিকে চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতেও আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার জানান, চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে ৪২ হাজারের বেশি কন্টেইনার রয়েছে। এরমধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের সংখ্যা আট হাজার ২০০ আর রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার রয়েছে নয় হাজার ১০০ টিইইউএস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন