উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে দেশের জনগণকে আর ভোলানো যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং করবেন আর উন্নয়নের কথা বলবেন। উন্নয়নের ট্যাবলেট বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না। উন্নয়নের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে এখন শ্রীলংকা বমি কইরা দিছে। সেখানে খালি উন্নয়ন বলতে বলতে সব শেষ করে দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছে। আপনাদের যাওয়ার জায়গা আছে অবশ্য। ঠিকানা বলতে হবে না, আপনাদের ঠিকানা আগেই করা আছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং শাহবাগ থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
কুইক রেন্টাল কেন করা হলো প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে লোড শেডিংয়ের। অথচ বললেন, জনগণের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল দিয়ে বিদ্যুত দিয়েছেন, বিদ্যুতের আর অভাব নেই। এখন আবার বলছেন উল্টো কথা- লোড শেডিং করতে হবে। তাহলে এতো টাকা দিয়ে কুইক রেন্টাল কেনো করলেন? বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিক তারা কিন্তু বসে বসে টাকাটা পাবেন। আমাদের প্রশ্ন- তাহলে এতো টাকা নিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়া প্ল্যান্ট কেনো করা হলো? এতো টাকা নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে কেনো সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র করা হচ্ছে? বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের নামে এতো চুরি করার পরেও যদি লোড শেডিং হয় আমার তো মনে হয় এই লোড শেডিংই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হতে পারে। এভাবে মানুষ কিন্তু অসহিষ্ণু হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অসহিষ্ণু হচ্ছে।
সিইসির বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ‘তলোয়ার নিয়ে আসলে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে’ বলেছেন। এইটা নির্বোধ ব্যক্তি (কাজী হাবিবুল আউয়াল)। আগে তো ছিলো ছাগল নুরুল হুদা (কে এম নুরুল হুদা), এটা একটা পাডা একটা, এনার (কাজী হাবিবুল আউয়াল) কোনো বুদ্ধিসুদ্ধি নেই। তলোয়ারের যুগ তো অটোম্যান সামাজ্যের পরে নেই। আপনি এখন তলোয়ার কোত্থেকে আবিস্কার করলেন? তলোয়ার আনবে কে? রাইফেল হাতে নেবে আনবে? এটা উনাকে ঠিক করতে হবে। উনি কী রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটাও তো পারবেন না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- এরকম এই নির্বাচন কমিশন, এই ফালতু নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।
কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি বাহারকে ভোটের সময়ে এলাকা থেকে বের করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতার সমালোচনাও করে তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে যদি বিদেশ থেকে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আসা হয় তবুও এই সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে না। এখানে পুলিশ প্রশাসন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেথানে দলীয়করণ করা হয়েছে সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সংসদ ভাঙতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ভাবে গঠন করতে হবে। তারপরে নির্বাচন হবে।
ডলার সংকট প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বলা হচ্ছে বিদেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আমি ব্যবসা করবো এটা আমার লিবার্টি। আমি এলসি খুলবো, আমার ডলার যাবে, মালামাল আসবে। আমার দেশে ডলার নেই। কেনো নেই। কারণ ট্রাংকে ট্রাংকে ভর্তি করে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশের বহু ডলার বিদেশে পাঁচার হয়ে গেছে। সুইস ব্যাংকে ৩/৪ হাজার কোটি ডলার রেগুলার জমা হচ্ছে। আমার দেশের ডলার যদি সুই ব্যাংকে চলে যায় এদেশের মানুষ বাঁচবে কিভাবে?
আন্দোলনের সময় আসছে উল্লেখ করে বিএনপির অন্যতম এই নীতি নির্ধারক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানের সাথে বলতে চাই, আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোত ঘর থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় যাবো। সমস্ত মিছিল যেকোনো একটা চৌরাস্তায় গিয়ে আমরা মিলিত হবো। সব একসঙ্গে আমরা ওই বঙ্গভবন কিংবা সরকারের সচিবালয়ে ঘেরাও করবো- মনে রাইখেন। সময় আসতেছে, গুলি করবে? অনেক গুলি কিনেছেন বিদেশ থেকে। তিনি বলেন, খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি অস্ত্রসহ একটা বিমান বিধ্বংস হলো। এই অস্ত্র কার জন্য ওরা আনতে গিয়েছিলো? এ বিষয়ে একটা পরিস্কার ব্যাখ্যা আমরা চাই।
মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও এমএ হান্নানের পরিচালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস মৃধা ও মোশাররফ হোসেন খোকন বক্তব্য রাখেন।#