সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ আলকুরআন। মানবজাতিকে হেদায়েতের দিশা দিতে আল্লাহ তাআলা সর্বশেষ নবী, খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি নাজিল করেছেন এ মহাগ্রন্থ। হক-বাতিল, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ, লাভ-ক্ষতি ও আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্যরেখা টেনে দেয়ার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ তাআলার এ শাশ্বত ও চিরন্তন বাণী। যে কুরআনকে সবচে’ বেশি ভালোবাসবে, তাকে বুকে আগলে রাখবে এবং জীবনের প্রতিটি পর্বে একে মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করবে সে সঠিক পথের দিশা লাভ করবে। হক-বাতিল ও আলো-অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে।
কুরআন কারীম উপরোক্ত বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। আজ আমরা দেখব, কুরআন কারীম কত স্পষ্ট ও গুরুত্বের সঙ্গে মানুষের জন্য ক্ষতির বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে। যেসব আয়াত আমাদের ক্ষতিকর নানা বিষয়ে সতর্ক করেছে বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে তার মধ্য থেকে কিছু আয়াত সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরার প্রয়াস পাব। ইনশাআল্লাহুল আযীয।
ইসলামকে যারা দ্বীন হিসেবে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি তারা ক্ষতিগ্রস্ত : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অবলম্বন করতে চাইবে, তার থেকে সে দ্বীন কবুল করা হবে না। এবং আখেরাতে সে মহা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)।
আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন ইসলামই।’ ইসলাম বলতে বোঝায়, আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত ওহীর আলোকে মানুষকে পথনির্দেশ করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ পথনির্দেশকে মনেপ্রাণে মেনে নেয়া ও তার সামনে নিজেকে সঁপে দেয়ার নামই ইসলাম। প্রত্যেক যুগে নবীদের সফল ও সৌভাগ্যবান অনুসারীগণ তাদের নিজের জীবনকে নবীদের হাতে সঁপে দিয়েছেন।
আল্লাহর নাজিলকৃত হেদায়েতের সামনে সমর্পিত হয়েছেন। সে হিসেবে সকল আসমানি দ্বীনই ইসলাম। কিন্তু একটা সময় গত হওয়ার পর সেসব নবীর উম্মত তাদের এ দ্বীন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি; বরং তাদের হাতে নানা বিকৃতির শিকার হয়েছে। ফলে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী দ্বীনকে রহিত করে আমাদের নবী খাতামুন্নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআনে কারীম দান করেছেন। এতে পূর্ববতী দ্বীনের অনেক কিছুই আর অনুসরণীয় থাকেনি; বরং কুরআন কারীম যা অনুসরণযোগ্য বলেছে শুধু তাই অনুসরণ করার সুযোগ রয়েছে। তাই এখন ইসলাম বলতে এ সর্বশেষ বার্তা দ্বীনে মুহাম্মদীকেই বোঝানো হয়। হেদায়েতের এ বার্তাকেই এখন অনুসরণ করা গোটা মানবজাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হাদিস শরীফেও রাসূল (সা.) এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : আগের যুগে নবী তাঁর আপন গোত্রেই প্রেরিত হতেন আর আমি সমস্ত মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি। (সহীহ বুখারী : ৩৩৫)। তাই দ্বীনে মুহাম্মাদী ছেড়ে ভিন্ন কোনো ধর্ম বা মতাদর্শের অনুসরণের সুযোগ নেই। কেউ মনেপ্রাণে এ দ্বীনকে গ্রহণ না করলে সে ক্ষতিগ্রস্ত। আখেরাতে জাহান্নামের ভয়ানক শাস্তি থেকে বাঁচার কোনো উপায় তার থাকবে না।
আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি যারা ভঙ্গ করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : সেই সকল লোক, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি পরিপক্ক করার পরও ভেঙে ফেলে এবং যেই সম্পর্ক রক্ষা করতে তিনি আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি বিস্তার করে; বস্তুত এমন সব লোকই অতি ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা বাকারা : ২৭)। এখানে আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার বলতে অনেক মুফাস্সিরগণের মতে মানুষ সৃষ্টির বহু আগে সমস্ত রূহকে একত্র করে যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল তা বোঝানো হয়েছে।
সূরা আরাফের ১৭২ নং আয়াতে তার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : এবং (হে রাসূল! মানুষকে সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দাও) যখন তোমার রব আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করেছিলেন এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষী বানিয়েছিলেন। (আর জিজ্ঞেস করেছিলেন যে,) আমি কি তোমাদের রব নই? সকলে উত্তর দিয়েছিল, কেন নয়? আমরা সকলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। (এবং এ স্বীকারোক্তি আমি এজন্য নিয়েছিলাম), যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম। (সূরা আরাফ : ১৭২)।
এভাবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদের থেকে তাঁর আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। এ অঙ্গীকারের দাবি হলো, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে আদেশ এসেছে তা পালন করা এবং যে বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত থাকা। আলোচ্য আয়াতে সে অঙ্গীকার ভঙ্গ করার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, যারা এ অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তারা হবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন