দুনিয়াতে মানুষের জীবন এক অবস্থায় থাকে না। অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। আর এটা যেমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সত্য জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও। এ জীবনে যেমন আসে সুখের পর দুঃখ, সুস্থতার পর অসুস্থতা, তেমনি আবার আসে দুঃখের পরে সুখ এবং অসুস্থতার পরে সুস্থতা। সচ্ছলতার পর অসচ্ছলতা আবার অসচ্ছলতার পর সচ্ছলতা। পরিবর্তনের এই চলমান ধারাই হলো পার্থিব জীবন।
মানুষের এ জীবন এরূপ পরিবর্তনশীল বানানোর পেছনে রয়েছে অনেক তাৎপর্য ও হিকমত। যার সম্যক জ্ঞান রয়েছে মানুষের খালিক ও মালিক আল্লাহতায়ালার কাছে। তবে আল্লাহ যাদের চিন্তাশক্তি দান করেছেন তারা কিছু কিছু হিকমত অনুধাবনও করে থাকেন।
বাহ্যদৃষ্টিতে যেরূপ অবস্থার মুখোমুখিই হোক না কেন মুমিনের সৌভাগ্য এই যে, সকল অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকার। শর্ত হলো, যে অবস্থার সে সম্মুখীন হয়েছে, তাতে আল্লাহর কী হুকুম রয়েছে, সে সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সে হুকুমের অনুগত থাকা।
কখনো কোনো বড় ধরনের মুসিবত এসে পড়লে কিংবা কোনো দুর্যোগে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলে তা কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হবে এবং কী কর্মপন্থা অবলম্বন করা হবে এসব বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে কখনো কখনো আমরা ভুলত্রুটির শিকার হয়ে পড়ি। এমন বেফাঁস মন্তব্যও মুখ থেকে বেরিয়ে যায় যা একেবারেই ভুল ও অসমীচীন। আর করণীয় সম্পর্কে গাফেল হয়ে অকরণীয় কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে যাই। এজন্য বিভিন্ন আসমানী মুসিবতে ও সাধারণ বিপদাপদে চিন্তা ও কর্মের গতি কোন পথে চালিত হবে, সে সম্পর্কে অবগতি থাকা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহতায়ালা যদি তাওফিক দেন, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা রয়েছে। বর্তমান আলোচনায় শুধু কয়েকটি বিষয় ছুঁয়ে যেতে চাই। আশা করি, এর মাধ্যমেও আল্লাহতায়ালা কিছু না কিছু উপকার আমাদের দান করবেন।
১. বিভিন্ন আসমানি মুসিবত যথা বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির কিছু পরিবেশগত কার্যকারণ রয়েছে, যা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নির্ণিত। এ কারণগুলো যদি শুধু ধারণা ও অনুমানভিত্তিক না হয়ে সঠিক পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নির্ণিত হয়ে থাকে, তবে এগুলো স্বীকার করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, এসব বাহ্যিক ও পরিবেশগত কার্যকারণের পশ্চাতে এমন কিছু কার্যকারণ ও উপযোগিতা রয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানের বস্তুনির্ভর পর্যবেক্ষণ-দৃষ্টির আওতাবহির্ভূত। শুধু ‘ওহী’র মাধ্যমে এগুলোর জ্ঞান অর্জিত হয়। এরূপ কিছু কার্যকারণ আল্লাহতায়ালা বান্দাদের জানিয়ে দিয়েছেন ওহির মাধ্যমে। এই ওহিভিত্তি দৃষ্টিকোণ থেকেই একজন মুমিন এ ধরনের আসমানি মুসিবতগুলোকে বিশ্লেষণ করে থাকেন। বসত্তগত কার্যকারণগুলোকে তারা স্থান দিয়ে থাকেন দ্বিতীয় পর্যায়ে।
২. এসব দুর্যোগ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো, এগুলো অবশ্যই আযাব ও গযব, যা ব্যাপক পাপাচারের শাস্তিরূপে আপতিত। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, সে অবশ্যই এ পরিস্থিতিতে আল্লাহতায়ালার দিকে রুজু করে, সবর করে এবং তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে সংশোধিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ঈমানী দুর্বলতার কারণে কারো কারো মনে বিভিন্ন প্রশ্নেরও উদ্রেক হয় এবং আল্লাহ মাফ করুন, কখনো কখনো তা উচ্চারিত হতেও দেখা যায়। যথা : এ প্রশ্ন হয় যে, যদি এটা গুনাহ ও অপরাধের শাস্তিই হয়ে থাকে তাহলে সবচেয়ে বড় যে অপরাধী আমেরিকা ওখানে কেন আযাব আসে না? আবার যদি এই ভূখণ্ডেই আযাব আসার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে এ ভূখণ্ডেরই অন্যান্য অংশেও তো পাপাচার হয়ে থাকে। সে অংশগুলো কেন ক্ষতিগ্রস্ত হলো না? আর দুর্যোগগ্রস্ত এলাকায় সবাই কি পাপী-গোনাহগার? ওখানেও তো মসজিদ আছে, মাদরাসা আছে, নিষ্পাপ শিশু আর নেককার মানুষ আছে? তাদের অপরাধ কী? তাহলে কি বড়লোকের পাপের সাজা গরিব-দুঃখীকে ভুগতে হচ্ছে?
আবার কারো মনে এই ওয়াসওয়াসাও সৃষ্টি হতে পারে যে, এগুলো যখন আযাব-গযব তাহলে আমাদের বোধ হয় দুর্যোগগ্রস্ত স্থানে যাওয়া উচিত নয়। কেননা, আযাব-গযবের স্থান থেকে দূরে থাকাই হল হাদীস শরীফের নির্দেশনা।
এগুলো ভুল চিন্তা এবং এক ধরনের অবাধ্য মানসিকতা থেকে সৃষ্ট ওয়াসওয়াসা। এ অবাধ্য ও ভ্রান্ত চিন্তা বিদূরিত হওয়ার জন্য খাঁটি দিলে আল্লাহর দরবারে তওবা করা কর্তব্য। আর ‘লা হাওলা’ পড়ে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা কর্তব্য যে, ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে বিশুদ্ধ ঈমান দান করুন। আপনার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দান করুন। শোকরের সময় শোকর আর সবরের সময় সবর করার তাওফিক নসিব করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন