বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বালা ও মুসিবত : সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা-২

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আসমানি মুসিবত সর্বদা আযাবরূপে আসে না। কখনো পরীক্ষার জন্যও আসে। সূরা আ’রাফে (আয়াত ১৬৮) তা উল্লেখিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আবার কখনো আযাব হিসেবে আসে। সূরা রূমের-৪১ নম্বর আয়াতে ও সূরা শূরার-৩০ নম্বর আয়াতে এটা উল্লেখিত হয়েছে। এজন্য যেকোনো দুর্যোগ ও বিপদ-আপদকে দ্ব্যর্থহীনভাবে আযাব-গযব বলে আখ্যায়িত করা উচিত নয়। কেননা, তা যেমন আযাব-গযব হতে পারে, তেমনি পরীক্ষাও হতে পারে।

কোথাও কোনো বিপদ-আপদ যদি আযাব হিসেবেও আসে তবুও অপরিহার্য নয় যে, এটা শুধু ওইসব লোকের গোনাহর কারণে এসেছে যারা এ বিপদে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। বরং ভূপৃষ্ঠে সংঘটিত সকল গোনাহই এর কার্যকারণ হিসেবে গণ্য। তবে যেহেতু কেয়ামতের আগে সকল জনপদ একসঙ্গে ধ্বংস করে দেওয়া আল্লাহ তাআলার অভিপ্রায় নয় আর তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোয়ার বরকত তাই বালা-মুসিবত একেক সময় একেক স্থানে আপতিত হয়। অতএব, মুসিবত যেখানেই আসুক ভাবতে হবে যে, এর পেছনে আমারও গোনাহর কার্যকারিতা রয়েছে অতএব গোনাহ পরিহার করা আমার কর্তব্য।

যে মুসীবত আযাব হিসেবে এসেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্যই তা আযাব- এটা অপরিহার্য নয়। বরং এ মুসীবতই আল্লাহ কারো জন্য রহমত বানিয়ে থাকেন। আল্লাহর নেককার বান্দা যারা এ মুসীবতে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা শহীদের ছওয়াব লাভ করবেন আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আল্লাহ তাদের মর্যাদা বুলন্দ করবেন।
যে বিপদ আযাব হিসেবে আসে তার সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার নীতি এই যে, তাতে শুধু অপরাধীরাই আক্রান্ত হয় না, সবাই আক্রান্ত হয়। এজন্য আল্লাহতায়ালা সতর্ক করেছেন যে, অর্থাৎ ওই ফিতনা ও মুসীবত সম্পর্কে সতর্ক হও, যা এসে গেলে শুধু অপরাধীদের উপরই আসবে না, সবার উপর আসবে।

এজন্য গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আগে একথা স্মরণ করা উচিত যে, আমি এ গোনাহর মাধ্যমে শুধু আমার নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের ক্ষতিসাধন করছি। নেককার মানুষদেরও শুধু নিজের চিন্তা করাই যথেষ্ট নয়, পরিবার-পরিজন ও সমাজের মানুষেরও সংশোধনের চিন্তা করতে হবে। দাওয়াত ও তালীমকে ব্যাপক করতে হবে এবং সাধ্যমতো ‘আমর বিল মা’রূপ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। মোটকথা, এটা নিশ্চিত যে, বিপদগ্রস্ত যেসব মানুষ গোনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত কিংবা শরীয়তের বিধান এখনো তার জন্য কার্যকর হয়নি তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা এ মুসিবতকে রহমত বানিয়ে থাকেন।

ব্যাপকভাবে সংঘটিত গোনাহ ও অপরাধের সাজা আল্লাহ তাআলা শুধু আসমানী বালা-মুসীবতের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন এ ধারণা ঠিক নয়। বরং এটা আযাবের একটি প্রকার মাত্র। সবচেয়ে বড় আযাব হচ্ছে সমাজ থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিদায় নেওয়া, সততা ও আমাতদারী বিলুপ্ত হওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, শান্তির সমস্ত উপকরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকা ইত্যাদি। এসব আযাবে আক্রান্ত লোকেরা যদি এই সুখ চিন্তায় বিভোর থাকে যে, আমাদের উপর আযাব আসেনি, আযাব এসেছে ওই দুর্যোগগ্রস্ত অঞ্চলে, তবে এটা তাদের ভ্রান্তিবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এটাও হচ্ছে এক স্বতন্ত্র আযাব।

তাছাড়া একটি বড় মুসীবত যদি কোনো অঞ্চলে আসে তাহলে তা পরোক্ষভাবে আশপাশের গোটা ভূখণ্ডকে, বরং কখনো গোটা পৃথিবীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই মুসীবতের প্রত্যক্ষ আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে একথা ভাবতে থাকা যে, ‘বেঁচে গেলাম’, এক ধরনের অপরিণত চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।

যে বিপদাপদ পরীক্ষা হিসেবে আসে সেগুলো শুধু তাদের জন্যই পরীক্ষা নয় যারা এগুলোতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে; বরং এটা সবার জন্য, গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য পরীক্ষা। পাকিস্তানের ভূমিকম্প শুধু পাকিস্তানীদের জন্য পরীক্ষা নয়। তদ্রূপ বাংলাদেশের বন্যা, তাপদাহ শুধু বাংলাদেশিদের জন্য পরীক্ষা নয়; বরং গোটা পৃথিবীর সবার জন্যই পরীক্ষা ও তাম্বীহ। আল্লাহতায়ালা পরীক্ষা করছেন- কে সবর করে আর কে ইলাহী ফয়সালার সমালোচনা করে। কে মুসীবত দেখে সজাগ-সতর্ক হয় এবং তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে আর কে পূর্বের মতোই উদাসীন নিদ্রায় বিভোর থাকে। কে সামর্থ্য অনুযায়ী বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর কে নিজ স্বার্থ-চিন্তাতেই ডুবে থাকে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় এই যে, ১. ‘সবর’ ও ‘তাফবীয’ অর্থাৎ নিবেদিত চিত্তে ধৈর্যধারণ এবং ‘রিযা বিল কাযা’ অর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। ২. সকল রকম গোনাহ থেকে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে নিজের সংশোধনে আত্মনিয়োগ করা। আর অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ikram Ul Hoque ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
অনেক মানুষ তার কুপ্রবৃত্তির দাস; আল্লাহ্‌র দাস নয়। সে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, সে আল্লাহ্‌র দাস। কিন্তু যখন কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হয় তখন সে বিপরীত দিকে ধাবিত হয়, দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টার লোকসান দেয়। এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট লোকসান।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মুমিন নর-নারীর জীবন, সন্তান ও সম্পদের উপর পরীক্ষা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে সে আল্লাহ্‌র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে, তার কোন গুনাহ থাকে না।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৯)]
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি আল্লাহ্‌ কোন বান্দার ভাল চান দুনিয়াতে অগ্রিম তাকে শাস্তি দিয়ে দেন। আর যদি বান্দার অকল্যাণ চান বান্দার পাপটাকে ধরে রাখেন যাতে করে কিয়ামতের দিন পূর্ণভাবে এর শাস্তি দিতে পারেন।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৬), আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (১২২০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যদি আল্লাহ্‌ কোন বান্দার ভাল চান দুনিয়াতে অগ্রিম তাকে শাস্তি দিয়ে দেন। আর যদি বান্দার অকল্যাণ চান বান্দার পাপটাকে ধরে রাখেন যাতে করে কিয়ামতের দিন পূর্ণভাবে এর শাস্তি দিতে পারেন।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৯৬), আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (১২২০) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
Total Reply(0)
Antara Afrin ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
মুসিবতের শিকার হওয়া নিজের দোষত্রুটি নিয়ে ও অতীত জীবনের ভুলভ্রান্তি নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ তৈরী করে দেয়:
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২৪ জুলাই, ২০২২, ৬:০৬ এএম says : 0
বালা-মুসিবতের হেকমতের মধ্যে রয়েছে যে, মানুষ প্রকৃত বন্ধু ও সুবিধাভোগী বন্ধুদের চিনে নিতে পারে: যেমনটি কবি বলেছেন: আল্লাহ্‌ বিপদমুসিবতকে উত্তম প্রতিদান দিন যদিও সেই বিপদগুলো আমার গলায় লালাকে আটকে দেয়। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যেহেতু তার মাধ্যমে আমি শত্রু থেকে বন্ধুকে চিনতে পেরেছি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন