শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আকাশের পানে চেয়ে থাকা অসহায় মানুষের করণীয়

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আল্লাহ কত বড় তা ধারণা করার ক্ষমতাও মানুষের নেই। নেই জান্নাতের নেয়ামতগুলো সম্পর্কে কল্পনা করার শক্তি। আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন। যাকে মানুষ মহাকাশ বা সৌরজগৎ বলে জানে। সাত আসমান তারচেয়েও বড়। যত গ্রহ, উপগ্রহ, মিল্কিওয়ে, গ্যালাক্সি ইত্যাদি আছে এসব প্রথম আসমানের নিচে। একথা পবিত্র কোরআনের সুরা সফ্ফাতে আল্লাহ বলেছেন : আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্রের বাতি দিয়ে সাজিয়েছি। আর এসব অবাধ্য শয়তানদের প্রতিরোধ করে। (আল কোরআন)।

আল্লাহ মানুষকে বলেছেন, তোমরা আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে অবিলম্বে প্রতিযোগিতা করে দৌড়ে আস, যে জান্নাতের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, সীমানা পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলীর মতো। (আল কোরআন)।

মানুষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সৌরজগতের সামান্যের চেয়ে সামান্য অংশ সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে সুসজ্জিত গ্রহ-তারার কিছু ছবি তুলতে পেরেছে। পৃথিবীর যত ধূলিকণা আছে, সাগরের যত বারিবিন্দু আছে, আসমানের তারার সংখ্যা কি তারচেয়েও বেশি কি-না, সে প্রশ্নই এখন বিজ্ঞানের সামনে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মুসলিমরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ সপ্তাকাশ তৈরি করেছেন। শক্ত কোনো সাপোর্ট ছাড়া এর মধ্যকার অগণিত গ্রহ তারাকে নিজ কুদরত ও হুকুমের দ্বারা মহাশূন্যে সন্তরণ করাচ্ছেন। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্ব ৫০০ বছরের রাস্তা।

কোন গতির কেমন বাহনের ৫০০ বছর তা হাদিসে বলা হয়নি। এক আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্ব যত সেই আকাশটিও সমান আয়তনের পুরো। এমন সাতটি আকাশের পর আল্লাহর আরশ কুরসি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, তাঁর ক্ষমতার কুরসি পৃথিবী ও সাত আকাশকে পরিবেষ্টন করে আছে। (আল কোরআন)। আর পরম করুণাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহ আরশের উপর নিজ ক্ষমতাকে সুসংহত করেছেন। (আল কোরআন)।

যারা আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় বা মারেফত লাভ করেছেন তারা আল্লাহর বড়ত্ব, কুদরত ও অকল্পনীয় ক্ষমতা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন। স্বভাবতই তারা মহাসৃষ্টির সামনে এই পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা এবং মানুষের অসহায়ত্ব সম্পর্কে ঠিকমতো ধারণা রাখেন। খলিফা হজরত ওসমান রাযি. মানুষ হিসাবে নিজের দুর্বলতা অসহায়ত্ব ও বিনয়ের অনুভূতি থেকেই জীবনে কখনো বুকটান করে দাঁড়াননি। গর্বভরে মাটির বুকে চলেননি। বলতেন, আল্লাহর সামনে নিজেকে শক্তিমান বা সক্ষম বলে তুলে ধরতে আমার খুবই লজ্জা হয়।

এ জন্যই দুনিয়ার কোনো নবী রাসুল, পীর-আউলিয়ার জীবনে দম্ভ গর্ব কঠোরতা বা দুর্বিনীত ভাব খুঁজে পাওয়া যায় না। যত অহংকার বড়ত্ব ও উদ্ধৃতভাব দেখা যায় শয়তান ও তার অনুসারীদের মাঝে। ঈমানদাররাও নিজেদের ক্ষুদ্রতা অসহায়ত্ব ও আল্লাহনির্ভরতা সম্পর্কে অবগত। আর তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তারা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনায় কাটান। আল্লাহু আকবার তাদের প্রাণের ধ্বনি। জীবনের প্রতিটি শ্বাস তারা আল্লাহর স্মরণে ব্যবহার করেন। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেন। সুবহানাল্লাহ বলেন, তাসবিহ পাঠ করেন। সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করেন। আলহামদুলিল্লাহ বলেন। নিজেদের অপরাধ ও উদাসীনতা থেকে তাওবা করেন। ইস্তেগফার পড়েন।

একথা স্বীকার করেন যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের নিজের কোনো সক্ষমতা বা সামর্থ্য নেই। যার আরবি ভাষ্য হচ্ছে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। যাকে আল্লাহর নবী জান্নাতের একটি ভাণ্ডার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও মিজানে অধিক ভারী উচ্চারণে সহজ দুটি বাক্য হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’। হাদিস শরিফে এসেছে, সুবহানাল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ মিজাননামক পাল্লাকে নেকিতে ভরে দেয়। এ দুটি বাক্য পৃথিবী থেকে আকাশের শেষ সীমানা পর্যন্ত মহাশূন্যকে নেকিতে ভরে দেয়। নবী করীম (সা.) আরো বলেন, মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর জিকিরের চেয়ে বড় কিছু নেই। তাই জীবনের প্রতিক্ষণ, প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাসে আল্লাহর স্মরণ অপরিহার্য। কাথনা রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা ইয়াজকুরুল্লাহা ফী কুল্লি আহইয়া নিহি। নবী করীম (সা.) (এবং যুগে যুগে তার অনুসারীগণ) সদা সর্বদা আল্লাহর জিকিরে নিমগ্ন থেকেছেন।

বর্তমানেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পৃথিবীর দুর্বল ও অসহায় মানুষের কর্তব্য সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের আশায় আকাশের পানে তাকানো। তাঁর বড়ত্ব ও উচ্চতার সামনে সেজদায় মাথানত করা। পবিত্র কোরআনে এ মর্মে আল্লাহ বলেছেন, আকাশ ও পৃথিবী স্বেচ্ছায় অনুগত হয়ে আমার গোলামীতে লেগে আছে। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র সবাই সেজদাবনত। সৃষ্টিজগতে এমন কোনো বস্তু নেই যা আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতার তাসবিহ পাঠ করে না। নবী করীম (সা.) বলেছেন, উদয় অস্তের এই ভ্রমণে সূর্য আরশে আল্লাহকে সেজদা করে। মানুষের ধারণা ও কল্পনার ক্ষমতার চেয়েও অধিক বড় ব্যাপক ও রহস্যপূর্ণ সৃষ্টিজগৎ মানুষের চিন্তাভাবনা ও হেদায়েতের জন্য দিশাস্বরূপ। মানুষের ভাগ্য যে তাদের কৌতূহল ও আবিষ্কারের পরিমাপের তুলনায় বহুগুণ স্পষ্ট ও নিখুঁতভাবে মহান আল্লাহ তাদের এসব তথ্য ও জ্ঞান কোরআন সুন্নাহর মাধ্যমে দান করেছেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও নতুন সব আবিষ্কার মানুষের বিশ্বাস ও শেষ পরিণামের দিব্য জ্ঞানের পক্ষে আরো জোরদার সমর্থন হয়ে দাঁড়াবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন