শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অনুমতি ছাড়া ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না

৬ মাসে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আইনের খসড়া অনুযায়ী ভিকটিমকে চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন করতে হলে আগে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। সাক্ষ্য আইনের (সংশোধন) খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি সভায় অংশ নেন। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ১৪ মার্চ এ খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সংশোধনীর বিষয়বস্তু বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় বিপক্ষের লোকজনের ভিকটিমকে চরিত্রহীন প্রমাণ করার প্রবণতা থাকে। এ জন্য অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ করে দেওয়া হয়েছে। কারও চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন করতে হলে আগে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালতই বিবেচনা করবেন কারও চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে কি-না। এ ছাড়া ডিজিটাল আদালত, ডিজিটাল সাক্ষ্য ইত্যাদি কিছু বিষয়েও সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে আইনের খসড়ায়।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আদালত সংশোধন আইন-২০২২-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিয়েছে। আগে গ্রাম-আদালতে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। গ্রাম আদালত আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আদালতে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। তিনি বলেন, গ্রাম আদালত হলোÑ গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গঠিত আদালত। গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তির জন্য ইউনিয়ন পরিষদে এ আদালত বসে। গ্রাম আদালতে বিচারযোগ্য মামলার ক্ষেত্রে বিবাদের যে কোনো পক্ষ বিচার চেয়ে গ্রাম আদালত গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ৪ টাকা (দেওয়ানি মামলা হলে) অথবা ২ টাকা (ফৌজদারি মামলা হলে) ফি দিয়ে আবেদন করতে পারেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গ্রাম আদালতের এখতিয়ার সম্পন্ন মামলা অন্য কোনো আদালত গ্রহণ করতে পারে না। গ্রাম আদালতে মামলা করলে কোনো আইনজীবী লাগে না। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গণ্যমান্য বিচারকের উপস্থিতিতে এ আদালত বসে। আদালতের বিচারক সংখ্যা ৫ জন। দুইজন মনোনীত সদস্য থাকবেন আবেদনকারীর পক্ষে এবং দুইজন সদস্য হবেন প্রতিবাদীর পক্ষে। যার মধ্যে একজনকে অবশ্যই হতে হবে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য। স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই বিচার অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় নিয়ে এসেছে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা হয়েছে, অনুমোদন দেওয়া হলো। এটার ইকোনমিক সাইডটা (অর্থনৈতিক দিক) আরো ভালো করে দেখে এ থেকে আমাদের কী কী বেনিফিট আসবে, সেটা দেখে তারপর করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আফ্রিকাতে আমাদের সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। এটা ইমিডিয়েট শুরু হবে না। অনুমোদন দিয়ে বলা হয়েছে, এটার ইকোনোমিক সাইটটা দেখে তারপর চুক্তিতে সই করতে বলা হয়েছে। রুয়ান্ডা থেকে সাউথ আফ্রিকা, কেনিয়া বা নাইজেরিয়াতে বা যেখানে আমাদের লোকজন আছে বা ফোর্স আছে, সেসব জায়গায় যোগাযোগের কী সুবিধা হবে এগুলো যদি আমাদের বেনিফিট দেয়, সেগুলো দেখে নিতে বলা হয়েছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ১৪টি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মোট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ১২১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০টি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৪১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ১২ শতাংশ। করোনাভাইরাস মহামারির মাঝে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬২টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪০টি। ২২টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয় সাতটি, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৭টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় ৩৭টি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন ছিল ২০টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৬৫ শতাংশ। চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি নীতি বা কর্মকৌশল, চারটি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদন হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি। গত বছর একই সময়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতি বা কর্মকৌশল, একটি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদন হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ৬টি।

বৈঠকে বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইনের খসড়া, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা এবং বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচলসংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় সরাসরি বিমান চলাচল করবে। এজন্য বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন