সকল মৃত্যুই মানুষের জন্য বেদনাদায়ক, দুঃখজনক। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী তথা আপন-স্বজনের ক্ষেত্রে মৃত্যু বেদনাদায়ক। এ স্মৃতি মানুষকে বেদনা দেয়, শোকাভিভূত করে, মৃত্যুর কথা শুনলে কখনো হৃদয় বিগলিত হয়। বিশেষত পিতা-মাতার কাছে সন্তানের মৃত্যু হয় সবচেয়ে বেদনাদায়ক। তবে শৈশবে কারো সন্তান মারা গেলে বলা হয় কলিজার টুকরা চলে গেল। ইসলাম মৃত্যুর সকল স্তরে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্য ও সহনশীলতা ও সংযম অবলম্বনের শিক্ষা দিয়েছে। শৈশবে কারো সন্তানের মৃত্যু ঘটলে (কন্যা শিশু হোক বা পুত্র হোক) ইসলামের উপদেশ ধৈর্য ধারণ করা, যার সুফল পিতা-মাতা পরকালে ভোগ করবে। এ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি নিম্নে প্রদত্ত হলো :
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে মুসলমানের তিনটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এ দানের কারণ, সে অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে আল্লাহ তা’আলা সে শিশুদের প্রতি দান করেছেন (বোখারী)। অর্থাৎ আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে সিক্ত এ শিশু সন্তানদের কারণে তাদের পিতা-মাতা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়।
হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তিন শিশুর মৃত্যুতে সবর অবলম্বন করেছে- ধৈর্যধারণ করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এ কথা শুনে এক নারী দাঁড়িয়ে আরজ করল, হে আল্লাহর রসূল! যার দুই শিশু মারা যায়। হুজুর (সা.) বললেন, দুই শিশুর মৃত্যু হলেও। নারীটি বলল, আমি যদি এক শিশু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম কতই না ভালো হতো! (নাসায়ী)।
হজরত উতবা ইবনে আব্দুস সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যার অপ্রাপ্ত বয়স্ক তিন শিশু মৃত্যুবরণ করেছে তারা (তাদের পিতা-মাতা) আট বেহেস্তের সকল প্রবেশ দ্বারে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবে, সে যে দরজা দিয়েই প্রবেশ করুক না কেন! (ইবনে মাজা)।
হজরত কারত ইবনে ইয়াস (রা.) বর্ণনা করেন যে, এক সাহাবী স্বীয় ছোট্ট শিশুকে খুবই ভালোবাসত। হুজুর (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কি তাকে খুবই ভালোবাস? সে আরজ করল, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যত ভালোবাসেন এ শিশুর প্রতি আমার তত ভালোবাসা। কিছুদিন পর হুজুর (সা.) ঐ শিশুকে লোকটির কোলে না দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ শিশু কোথায়? সে আরজ করল সে তো মরে গেছে! তিনি বললেন, তুমি ওটা পছন্দ করো যে, তুমি জান্নাতের যে দরজায় পৌঁছবে তোমার ওই শিশু সেখানে স্বাগত জানাতে পারে। (মেশকাত)।
হজরত আবু মূসা আ’শারী (রা.) বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দার ছোট শিশু মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা কি বান্দার শিশু ও তার অন্তরের ফল ছিনিয়ে নিয়েছ? তারা আরজ করবেন, হে আল্লাহ! এমনটি হয়েছে। আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন, অতঃপর সে বান্দা এ বেদনার খবর শুনে কি বলেছে? ফেরেশতারা আরজ করবেন, সে তোমার হামদ-প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ বলেছে। আল্লাহ বলবেন, এ বান্দার জন্য জান্নাতে ঘর বানাও এবং উহার নাম রাখো ‘বায়তুল হামদ’ প্রশংসার ঘর। (তিরমিজি)।
হজরত মো’আজ (রা.) এর বর্ণনায় রয়েছে যে, হুজুর (সা.) কেবল এক শিশুর মৃত্যুতে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, অথচ তিনি এমনটিও বলেছেন, যে নারীর অসময়ে গর্ভপাত হয়ে যায় এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে, তাহলে সে অপূর্ণ শিশু তার মাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। (আহমদ তিবরানী)।
শহীদের শ্রেণি ও মৃত শিশুরা তাদের পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস বর্ধিত হলো। পিতা-মাতা সন্তানের আশায় ধৈর্য ধারণ করলে এরূপ সম্ভব। এ ধৈর্যের অধিকারী পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৃত শিশুদের সুপারিশ আল্লাহ কবুল করবেন বলে রসূলুল্লাহ (সা.) এর সুসংবাদের ভাগী যারা, তারা সে ভাগ্যবান পিতা-মাতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন