শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অপচয় নয় : চাই সম্পদের যথার্থ মূল্যায়ন-২

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

দুইদিনের এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমাদেরকে খুবই সামান্য কিছু সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। জগতের সেরা ধনী যে, সেই-বা কতটুকু সম্পদের অধিকারী? দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যত নিআমত আমরা ভোগ করি সচেতনভাবে ও অবচেতনভাবে, কারও পক্ষে কি এর এক ক্ষুদ্র অংশেরও বিনিময় আদায় করা সম্ভব? জগতের যা কিছু সবই তো আল্লাহর। তিনিই প্রকৃত মালিক-ঈমানদার যে কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে। অল্প সময়ের জন্য তিনি কিছু সম্পদের বাহ্যিক মালিকানা আমাদের দান করেন। এ মালিকানা পরিবর্তনও হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়। পথের ভিখারি রাজা হয়, রাজা সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামে। চারপাশে এ বাস্তবতা দেখার পরও আমরা আমাদের মালিকানাধীন সম্পদকে প্রকৃত অর্থেই আমাদের সম্পদ মনে করে ভুল করি। এ থেকেই সৃষ্টি হয় অপচয়ের মানসিকতা-আমার টাকা আমি আমার ইচ্ছামতো খরচ করব, এতে কার কী বলার আছে! আল কোরআনে আল্লাহ সতর্ক করছেন আমাদের এ বলে : তোমরা তাদের (অর্থাৎ তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের) আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। (সূরা নূর : ৩৩)।

এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দান করেছেন, উক্ত আয়াতে তা আল্লাহর সম্পদ বলে আলোচিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরাও বলি-এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য। এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নিআমত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও। তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা-অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হবে।

হাদীসের ভাষ্য খুবই স্পষ্ট এবং কঠিন! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কেয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে নাÑ তার জীবন সে কীসে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কীসে নষ্ট করেছে? (জামে তিরমিজি : ২৪১৭)।

অর্থাৎ নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শারীরিক আরাম বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করলেই তাতে নিজের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। এ সম্পদ যেহেতু আমাদের হাতে আমানত, তাই এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের দায়িত্ব। এখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো সুযোগ নেই। খরচ করতে চাইলে যিনি এর প্রকৃত মালিক, তার অনুমতিক্রমেই তা খরচ করতে হবে। অন্যথায় আটকে যেতে হবে কেয়ামতের ময়দানের সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে।
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন : ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা/না জেনে আন্দাজে কথা বলা, ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। (সহীহ বুখারী : ১৪৭৭)।

বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তাআলার নিকট একটি ঘৃণ্যবিষয়। এ সম্পদ যখন তিনি মানুষকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে বলেছেন, তা যদি নষ্ট করা হয়, অনর্থক খরচ করা হয়, তাহলে তিনি তা অপছন্দ করবেনই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সম্পদরূপী এ নিআমতের কদর অবশ্যই করতে হবে।

অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয়ই ইসলাম অপছন্দ করে। অহেতুক কথা, অহেতুক কাজ, অহেতুক ব্যয়-বর্জনীয় সবই। হাদীস শরীফের ব্যাপক নির্দেশনা : ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য-এর অনুসারী অনর্থক সব কিছু বর্জন করবে। (জামে তিরমিজি : ২৩১৮)।

প্রিয় নবীজী (সা.)-এর এ বাণীর মর্ম হচ্ছেÑ প্রয়োজন ছাড়া মুসলমান কোনো কাজই করতে পারে না। প্রয়োজনটা যেমনই হোক, দ্বীনি হোক, দুনিয়াবি হোক, নিজের হোক, অন্যের হোক, কম হোক, বেশি হোক, উপকারিতা এর থাকবেই। তবে আরেকটা শর্ত হল, প্রয়োজনীয় কাজ এবং এর পদ্ধতিটাও অবশ্যই শরীয়তের বিবেচনায় বৈধ হতে হবে। অবৈধ কাজ কিংবা অবৈধ পন্থা যত প্রয়োজনীয়ই হোক, তা করা যাবে না।

আমাদের হাতে থাকা আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত এ ধন-সম্পদ ব্যয় করতে গেলে এ দুই বিষয় অবশ্যই সামনে রাখতে হবে-ব্যয়ের খাতটা প্রয়োজনীয় কি-না এবং প্রয়োজনটা বৈধ প্রয়োজন কি-না। তাহলেই সম্ভব অপচয়ের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার প্রয়োজন পূরণ হয় কতটুকুতে তাও অবশ্য লক্ষণীয়। হাদীসের ভাষ্যানুসারে, নদীর পারে বসেও যদি কেউ অজু করে তবুও অপ্রয়োজনীয় পানি ব্যয় করার অনুমতি তার নেই। এটাও অপচয়।

অপচয় যে শুধু টাকা-পয়সার ক্ষেত্রেই হয় এমন নয়, বরং আল্লাহ মানুষকে যত রকম নিআমতের অধিকারী করেন, অপচয় হতে পারে সেসব নিআমতের ক্ষেত্রেও। আল্লাহর দেয়া প্রতিটি নিআমতকেই যথাস্থানে ব্যবহার করতে হবে। যে কোনো হারাম ও অবৈধ কাজে সেসবের ব্যবহার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বিরত থাকতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার থেকেও। অপচয়ের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে হলে এভাবেই আমাদের পথ চলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Rabbul Islam Khan ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১০ এএম says : 0
রান্নাবান্নার কাজ ছাড়া বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখতে হবে। ঘর ত্যাগ করার আগে বাতি, ফ্যান, এসি বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন শেষ হলে পানির কল বন্ধ রাখতে হবে। যানবাহনে বিনা প্রয়োজনে ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে। রাস্তাঘাটের বিভিন্ন বাতি ঠিক সময়ে চালু আর বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১০ এএম says : 0
রান্নাবান্নার কাজ ছাড়া বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখতে হবে। ঘর ত্যাগ করার আগে বাতি, ফ্যান, এসি বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজন শেষ হলে পানির কল বন্ধ রাখতে হবে। যানবাহনে বিনা প্রয়োজনে ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে। রাস্তাঘাটের বিভিন্ন বাতি ঠিক সময়ে চালু আর বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।’ -সূরা আল ইমরান: ১৮০
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদের বেলায় কৃপণতা প্রদর্শন করে তারা যেন এ ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত না থাকে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যে সম্পদের বেলায় তারা কৃপণতা প্রদর্শন করেছে সে সম্পদ কিয়ামতের দিন তাদের গলায় হার রূপে পরিয়ে দেয়া হবে।’ -সূরা আল ইমরান: ১৮০
Total Reply(0)
Ismail Sagar ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
কৃপণতা একটি সামাজিক ব্যাধিও বটে। এটি সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে। একটি সুস্থ সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো- ভ্রাতৃত্ববোধ। এটা ছাড়া কখনও একটি সুস্থ-সুশীল সমাজ গঠিত হতে পারে না।
Total Reply(0)
Antara Afrin ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
কৃপণতার শাস্তি সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে। কোরআনে কারিমের একাধিক আয়াতে এটিকে অকল্যাণকর বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং কোরআনে কৃপণ ব্যক্তিকে কষ্টদায়ক শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন