শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইউক্রেন থেকে দর্প চূর্ণের শিক্ষা-১

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৫ এএম

করোনাকালে বিশ্বে যুদ্ধ ছিল না। পৃথিবীতে করোনার পর একটি যুদ্ধ শুরু হয়ে এখনো চলছে। রাশিয়া বনাম ইউক্রেন। ইউক্রেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশ না হলেও নানা কারণে এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদনের একটি বড় অংশ সেখানে হয়। জ্বালানিও তাদের রয়েছে প্রচুর। এই ভৌগোলিক জায়গাটি অনেক সম্ভাবনাময়। অঞ্চলটিও কোরআনের তাফসিরে বর্ণিত বিশ্বজয়ী সম্রাট জুলকারনাইনের শাসনাধীন এলাকার অংশ বলে প্রমাণিত।

দেশটিকে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিমারা তাদের শিখণ্ডিরূপে ব্যবহার করে। গোটা ইউরোপ ও আমেরিকা সাথে ইসরাইল জোট বেঁধে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করে। বড় পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত করে। কিন্তু তারা যে এখানে তেমন কিছু করতে পারবে না সেটা আগে তাদের বুঝে আসেনি। রাশিয়া তাদের চেয়ে অগ্রসর চিন্তা করে তা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। আল্লাহর কুদরত এই যে, তিনি যখন কাউকে লাঞ্ছিত ও পরাজিত করতে চান, তখন তাদের চিন্তাশক্তি সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা নিজেরাই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

যেমনÑ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় কাফেররা নিজেদের সুবিধামতো সব শর্ত জুড়ে দেয় আর আল্লাহ তার রাসূল (সা.)-কে এমন চুক্তি মেনে নেয়ার নির্দেশ দেন। বলে দেন, এটাই হবে আপনার বিজয়ের কারণ। উপস্থিত মুমিনগণ এর কৌশল বুঝতে না পেরে মনে কষ্ট পান। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে নিজেদের বিপক্ষে যাওয়া সব শর্ত মেনে নেন। ফলাফল দাঁড়ায় উল্টো। আল্লাহ কাফিরদের কৌশলের বিরুদ্ধে নিজে মহা কৌশল প্রদর্শন করেন। দুই বছর পর ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় সংঘটিত হয়।

হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তিতে কাফিররা যেমন নিজেরাই নিজেদের দেয়া শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল এবং একপর্যায়ে মুসলমানরা বিজয় অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, তুলনা চলে না তবুও ঘটনা মিলে যাওয়ায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমারাও বুদ্ধি নষ্ট হয়ে নিজেদের খাদ্য ও জ্বালানির ভাণ্ডারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে, যা তারা নিজেরাই লঙ্ঘন করতে বাধ্য হয়। অযৌক্তিক ও অসহনীয় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার তেল বিক্রির পথ খুলে দেয় এবং রাশিয়া মূল্য কম বেশি করে তেল কূটনীতি ও একচেটিয়া বাণিজ্য করে যুদ্ধের সময়ও নানাভাবে লাভবান হয়।

এই যুদ্ধ যদিও ইসলামের ইতিহাসের সাথে তুলনীয় নয়, তথাপি এর পরিস্থিতি অনেকটা ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়। অথচ রাশিয়ার খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়া তারা অচল। এই ফাঁকে রাশিয়া ইচ্ছামতো তার তেল বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় ফান্ড সমৃদ্ধ করে নেয়। জ¦ালানির অস্ত্র ব্যবহার করে ন্যাটো জোটকে দ্বিধা-বিভক্ত করে।

জার্মানিকে গ্যাসের ফাঁদে ফেলে দলছুট করে। ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের আরো পাঁচ সাতটি রাষ্ট্রকে জোটের পথ ছেড়ে রাশিয়ার স্বনির্ধারিত নীতি অনুসরণে বাধ্য করে। আমেরিকা দূর থেকে সমর্থন দিয়ে চললেও কার্যত দূরে সরে যায়। এদিকে ইউক্রেন ভবিষ্যতে রাশিয়ার জন্য হুমকি হওয়ার মতো সব বন্দর, শিল্প এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমি হারায়। রাশিয়া অতি সামান্য সৈন্য ও সাধারণ কিছু অস্ত্র প্রয়োগ করে সুকৌশলে রাজধানী কিয়েভ ও পাশর্^বর্তী কিছু অঞ্চল ছাড়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সব জায়গা দখল করে নেয়।

যুদ্ধের ভেতরেই তারা এসব জায়গা সহজগম্য বানায়। ব্রিজ, রেললাইন চালু করে। বন্দরগুলো ব্যবহার উপযোগী করে এবং রুশ সমর্থক লোকজনকে রাশিয়ান পাসপোর্ট দিতে শুরু করে। এককথায় রাশিয়া যা চেয়েছিল তা তারা অর্জন করে নেয়। বর্তমানে তার বিপক্ষের সব শক্তি খাদ্য ও জ¦ালানির সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ইউক্রেনকে কেবলই নীতিগত সমর্থন ও জরুরি লিপ সার্ভিস দিয়ে চলেছে। মিডিয়ায় বানোয়াট সংবাদ, যুদ্ধ জয়ের গল্প আর দেশ- বিদেশের নেতা, পাতি নেতার কিয়েভ সফর ছাড়া ইউক্রেনের আর কোনো অগ্রগতি নেই। যুদ্ধ প্রলম্বিত করা ও অস্ত্র ব্যবসা ছাড়া পশ্চিমাদের ইউক্রেনে আর করার তেমন কিছুই নেই। রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনে তারা রুশপন্থী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Jhumu Ahmed ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
I remember this Palestinian girl saying, "I will go to God and tell you everything."If this is the case then maybe your should be included in 2003 This Ukraine indirectly belongs to the then Palestine The aggression that has been carried out on human beings has shown its brutality As a result, barbarism is going on in his own house today. ""God forgives but does not forgive""
Total Reply(0)
True Mia ১ আগস্ট, ২০২২, ১:২৫ এএম says : 0
Allah will help Russia because Russia banned same sex marriage. It is illegal In Russia
Total Reply(0)
M. Hasan Mahmud ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
আল্লাহ ছারদেয়ে কিনতু ছেরেদেয়ে না মুসলমানদের মারার সময়ে মজা পাইছিলা দেখো এখন কেমন লাগে সেদিন আমাদের খারাপ লেগেছিলো আজ লাগেনা
Total Reply(0)
Md Anowarul Hoque Khondaker ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
রাশিয়া অনেক ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে, আরও অনেক আগেই ইউক্রেনে হামলা চালানো উচিত ছিল, যারা ভূ- রাজনীতি বুঝেন নাহ তাদের কাছে একটু অদ্ভুত মনে হবে। রাশিয়া যখন ইউক্রেনকে স্বাধীনতা দেয়, তখন তারা রাশিয়ার সাথে থাকতে চেয়ে পতিশ্রুতি দেন, কিন্তু সময়ে পেরনের সাথে সাথে তারা পশ্চিমাদেশগুলোর সাথে মিত্রতা করতে শুরু করে, আর পুতিন বার বার বৈঠক করে বলেছেন ইউক্রেনকে যেন কোনো ভাবেই ন্যাটো সদস্য করা না হয়, তারপর যখন কথা শোনে না তখন ইউক্রেনে হামলার আর বিকল্প ছিল না। কারণ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে, আমেরিকা পরিচালিত ন্যাটো বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক মহড়া বসাতো, তখন রাশিয়া আমেরিকার সবমসময় চাপে থাকতো, কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন পাশাপাশি সীমান্ত দুটি দেশ, যেমন বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি। এখন নিজের বাড়ির এলাকায় যদি অন্য গ্রামের মানুষ এসে রাজত্ব কায়েম করতে চায় সেটা কি আপনি মেনে নিবেন, না আমি মেনে নিবো।
Total Reply(0)
Md Omar Faruk ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
এই সেই ইউক্রেন যারা ২০০১ সালে আ'ফ'গানিস্তানে তা'লে'বা'নের বিরুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসনের পক্ষে লড়াই করেছে। আবার এই ইউক্রেনই ইরাকে যখন(২০০৩ সাল) আমেরিকা বোমা মেরে লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের হত্যা করছিল, তখন তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছে। সাদা চামড়ার দুই মুসলিম হত্যাকারী দেশের পরস্পর লড়াইয়ে বাংলাদেশের যেসব মানুষ ইউক্রেনের পক্ষে নিচ্ছেন, তাদের উচিত পেছনের ইতিহাস থেকে একবার ঘুরে আসা।লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের জীবন শেষ করেছে কত শিশুকে করেছে এতিম । যুদ্ধের পরিণতি কি যে হৃদয় বিধারক তা ১৭ টি বছর উপলব্ধি করেছে আফগানিস্তান । ইউক্রেনের জনগণ আজ হয়তো আফগানিস্তান এবং ইরাকের সেই নির্যাতিত মানুষগুলোর যন্ত্রণা স্বয়ং উপলব্ধি করতে পারছে। আসলে - আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।
Total Reply(0)
MD Al-amin ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
মুসলমান রা এত সহজে ভুলে যায় শত্রুদের। এই সেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যে গত বছর ফিলিস্তিনের উপর চলা হত্যাযজ্ঞ কে সমর্থন দিয়েছিলো। তখন তার মানবিকতা দেখা যায়নি। এখন সেই শহীদদের অভিশাপ নিজের জাতির উপর এসে পড়েছে। আর নিজেই যুদ্ধ করতে রাশিয়া কে ডাকলো, এখন যুদ্ধের ময়দানে নেমে যখন তার প্রানপ্রিয় বন্ধু আমেরিকা, ইসরায়েল কে পাশে পাচ্ছেনা তখন বলছে " যুদ্ধ খারাপ আমরা শান্তি চাই "
Total Reply(0)
Mohammad Rubel ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
ইউক্রেন - রাশিয়ার যুদ্ধে আমি কোন পক্ষকেই সমর্থন করতেছিনা। তবে আমি চাই আরো কয়েকদিন যুদ্ধ স্থায়ী হোক। ইউরোপীয়রা বুঝক যুদ্ধের ভয়াবহতা কেমন! যুদ্ধ কেমন করে একটি শান্তির শহর কে ত্রাসের শহর তৈরি করতে পারে। তারা বুঝক ইরাক, সিরিয়া,ইয়ামেন,লিবিয়ায় যুদ্ধের সময় পিতামাতারা কত ভয় নিয়ে রাত্রি পার করেছে। একটা ক্ষেপণাস্ত্র এই বুঝি এসে তার শান্তির সংসার তছনছ করে দিবে, এই ভয় নিয়ে তারাও রাত্রি পার করুক ইরাকের কোন এক পিতার মত। ইউরোপীয়রা বুঝক যুদ্ধের ফল কত ভয়াবহ হয়। ইউরোপীয়রা বুঝুক নিজের প্রিয়জনের লাশ দেখতে কতটা কষ্টের। এই ন্যাটো, এই ইউরোপ,রাশিয়া ইরাক সিরিয়া তছনছ করে দিয়েছে, লাশে লাশ করে দিয়েছে ইরাক সিরিয়াতে। আজ তারাও টের পাচ্ছে লাশের বোঝা টানা কত কষ্টের।
Total Reply(0)
Jahanur Rahman Rony ১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫০ এএম says : 0
আমি ইউক্রেনের জনসাধারণের কান্না দেখে মোটেও বিচলিত নই,কারন আমি ফিলিস্তিন,ইরাক,আফগানিস্তান, সিরিয়া,মিয়ানমার, লিবিয়ান বৃদ্ধ যুবক নারী এবং, শিশুদের বিবস্ত্র আহাজারি দেখে দেখেই বড় হয়েছি।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন