করোনাকালে বিশ্বে যুদ্ধ ছিল না। পৃথিবীতে করোনার পর একটি যুদ্ধ শুরু হয়ে এখনো চলছে। রাশিয়া বনাম ইউক্রেন। ইউক্রেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশ না হলেও নানা কারণে এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদনের একটি বড় অংশ সেখানে হয়। জ্বালানিও তাদের রয়েছে প্রচুর। এই ভৌগোলিক জায়গাটি অনেক সম্ভাবনাময়। অঞ্চলটিও কোরআনের তাফসিরে বর্ণিত বিশ্বজয়ী সম্রাট জুলকারনাইনের শাসনাধীন এলাকার অংশ বলে প্রমাণিত।
দেশটিকে রাশিয়া ও সাবেক সোভিয়েত অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিমারা তাদের শিখণ্ডিরূপে ব্যবহার করে। গোটা ইউরোপ ও আমেরিকা সাথে ইসরাইল জোট বেঁধে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করে। বড় পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত করে। কিন্তু তারা যে এখানে তেমন কিছু করতে পারবে না সেটা আগে তাদের বুঝে আসেনি। রাশিয়া তাদের চেয়ে অগ্রসর চিন্তা করে তা বাস্তবায়নে নেমে পড়ে। আল্লাহর কুদরত এই যে, তিনি যখন কাউকে লাঞ্ছিত ও পরাজিত করতে চান, তখন তাদের চিন্তাশক্তি সঠিকভাবে কাজ করে না। তারা নিজেরাই ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
যেমনÑ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় কাফেররা নিজেদের সুবিধামতো সব শর্ত জুড়ে দেয় আর আল্লাহ তার রাসূল (সা.)-কে এমন চুক্তি মেনে নেয়ার নির্দেশ দেন। বলে দেন, এটাই হবে আপনার বিজয়ের কারণ। উপস্থিত মুমিনগণ এর কৌশল বুঝতে না পেরে মনে কষ্ট পান। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে নিজেদের বিপক্ষে যাওয়া সব শর্ত মেনে নেন। ফলাফল দাঁড়ায় উল্টো। আল্লাহ কাফিরদের কৌশলের বিরুদ্ধে নিজে মহা কৌশল প্রদর্শন করেন। দুই বছর পর ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় সংঘটিত হয়।
হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তিতে কাফিররা যেমন নিজেরাই নিজেদের দেয়া শর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল এবং একপর্যায়ে মুসলমানরা বিজয় অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, তুলনা চলে না তবুও ঘটনা মিলে যাওয়ায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমারাও বুদ্ধি নষ্ট হয়ে নিজেদের খাদ্য ও জ্বালানির ভাণ্ডারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে, যা তারা নিজেরাই লঙ্ঘন করতে বাধ্য হয়। অযৌক্তিক ও অসহনীয় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার তেল বিক্রির পথ খুলে দেয় এবং রাশিয়া মূল্য কম বেশি করে তেল কূটনীতি ও একচেটিয়া বাণিজ্য করে যুদ্ধের সময়ও নানাভাবে লাভবান হয়।
এই যুদ্ধ যদিও ইসলামের ইতিহাসের সাথে তুলনীয় নয়, তথাপি এর পরিস্থিতি অনেকটা ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা দেয়। অথচ রাশিয়ার খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়া তারা অচল। এই ফাঁকে রাশিয়া ইচ্ছামতো তার তেল বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় ফান্ড সমৃদ্ধ করে নেয়। জ¦ালানির অস্ত্র ব্যবহার করে ন্যাটো জোটকে দ্বিধা-বিভক্ত করে।
জার্মানিকে গ্যাসের ফাঁদে ফেলে দলছুট করে। ইতালি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের আরো পাঁচ সাতটি রাষ্ট্রকে জোটের পথ ছেড়ে রাশিয়ার স্বনির্ধারিত নীতি অনুসরণে বাধ্য করে। আমেরিকা দূর থেকে সমর্থন দিয়ে চললেও কার্যত দূরে সরে যায়। এদিকে ইউক্রেন ভবিষ্যতে রাশিয়ার জন্য হুমকি হওয়ার মতো সব বন্দর, শিল্প এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমি হারায়। রাশিয়া অতি সামান্য সৈন্য ও সাধারণ কিছু অস্ত্র প্রয়োগ করে সুকৌশলে রাজধানী কিয়েভ ও পাশর্^বর্তী কিছু অঞ্চল ছাড়া ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত সব জায়গা দখল করে নেয়।
যুদ্ধের ভেতরেই তারা এসব জায়গা সহজগম্য বানায়। ব্রিজ, রেললাইন চালু করে। বন্দরগুলো ব্যবহার উপযোগী করে এবং রুশ সমর্থক লোকজনকে রাশিয়ান পাসপোর্ট দিতে শুরু করে। এককথায় রাশিয়া যা চেয়েছিল তা তারা অর্জন করে নেয়। বর্তমানে তার বিপক্ষের সব শক্তি খাদ্য ও জ¦ালানির সঙ্কট থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ইউক্রেনকে কেবলই নীতিগত সমর্থন ও জরুরি লিপ সার্ভিস দিয়ে চলেছে। মিডিয়ায় বানোয়াট সংবাদ, যুদ্ধ জয়ের গল্প আর দেশ- বিদেশের নেতা, পাতি নেতার কিয়েভ সফর ছাড়া ইউক্রেনের আর কোনো অগ্রগতি নেই। যুদ্ধ প্রলম্বিত করা ও অস্ত্র ব্যবসা ছাড়া পশ্চিমাদের ইউক্রেনে আর করার তেমন কিছুই নেই। রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনে তারা রুশপন্থী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন