সাবেক কমেডিয়ান প্রেসিডেন্ট জেলোনেস্কি এখন হিটলারের তথ্যমন্ত্রীর ভাষায় বড় বড় ফাঁকা বুলি ছাড়ার কাজটিই নিয়মিত করে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতি তার পক্ষে নয়। যারা মনে করেছিলেন যে, এটিই হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা, তাদের ধারণাও সঠিক বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা, এককালের অহঙ্কারী ইউরোপীয়দের এখন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই। খাদ্য, জ্বালানি, জলবায়ু ও জীবনমান ধরে রাখার সঙ্কট গোটা ইউরোপকে বর্তমানে ঘিরে ধরেছে। বিশ্ব প্রেক্ষাপট দ্রুততার সাথে বদলে যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃতি বা প্রযুক্তির যেখানে তেমন কোনো হাত নেই।
খাদ্য ও জ¦ালানি বিক্রি করতে না পেরে ইউক্রেনের মানুষ চরম হতাশ। তাদের কৃষিপণ্য জমা রাখার সাইলোগুলো পূর্ণ। এসব সারা দুনিয়ায় বিক্রি না করতে পারলে আগামী ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হবে। অনেক কৃষক গম ক্ষেত পুড়িয়ে ফেলছে। রাশিয়া এই বিরক্তি ও অসন্তোষটি কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছে।
অথচ এই ইউক্রেন এবং এর কমেডিয়ান প্রেসিডেন্ট কিছুদিন আগেও কত অহঙ্কারী ছিল। আল্লাহ তাদের দর্প চূর্ণ করে দিয়েছেন। এটিই আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতির নিয়ম। এটি আল্লাহরই বিধান, যা দ্রুত বা বিলম্বে অবশ্যই কার্যকর হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : যদি তোমাদের কোনো আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদের জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদের গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ যালিমদের ভালোবাসেন না। (সূরা আল ইমরান : ১৪০)।
পাঠকের হয়তো মনে আছে, কয়েক বছর আগে ইসরাইলিরা যখন গাজার শিশুদের গোলাবর্ষণ করে হত্যা করছিল, তখন ফুলের মতো নিষ্পাপ এ শিশুদের দেখে দুনিয়ার মানুষ কাঁদত। কিছু বৈষম্য ও বিদ্বেষে বিশ^াসী পশুমনা মানুষ ছাড়া পৃথিবীর সবাই গাজায় নিহত শিশুদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেছে। তখন এই জেলোনেস্কি তার টুইটারে লিখেছিল, ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যায় সে দুঃখিত না। এরা নাকি সাপের বাচ্চা, বড় হয়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা হবে। তাই ইসরাইলিরা তাদের মেরে কোনো অন্যায় করছে না’।
আমাদের প্রশ্ন রাশিয়ার গোলায় যখন তার দশ হাজার সৈন্য আর বহু সংখ্যক আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা বেসামরিক অঞ্চলে নিহত হয়, তখনও কি তার মনে কোনো ব্যথা হয়নি? ফিলিস্তিনের শিশুরাও তো ইউক্রেনের শিশুদের থেকে ভিন্ন কিছু নয়।
রাশিয়ার এই যুদ্ধে মূল ভূমিকা রাখে চেচেনরা। চেচেনরা ইসরাইল ও পশ্চিমা শক্তির বিরোধী একটি ন্যায়ের যুদ্ধে নেমেছিল। তারা নিজ অঞ্চলকে, নিজ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরকে, মুক্তিকামী ইউক্রেন জনতাকে, ডনবাস ও দোনেস্কের বহু মুসলিম স্বাধীনতাকামীকে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষার জন্য রাশিয়ার হয়ে একটি অন্তর্গত ঈমানী লড়াই জিতেছে। রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে এরা কালেমা পাঠ করত। অভিযানের আগে তারা দোয়া দরুদ ও জিকির করে রওনা হতো। রাশিয়ার সাথে অন্যায় যুদ্ধে পশ্চিমা শক্তি হেরে যাচ্ছে। এ লজ্জা আমেরিকার। এ লজ্জা ইউরোপের।
পাঠকের মনে আছে বাগদাদ যুদ্ধের সময় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার ধারক জাদুঘর লুট হয়েছিল। সেখানে ইউক্রেন বাহিনী ছিল আগে আগে। শহীদ প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের প্রাসাদ দখলেও ইউক্রেনীয়রা আগে আগে ছিল। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কল্যাণে বিশ্বের মানুষ সবই দেখতে পেয়েছে। মিত্রদের মাঝে শক্তি ও অবস্থানের তুলনায় তাদের দম্ভ ছিল বেশি। সূর্যের চেয়ে বালুর তাপ বেশি হয়ে যাওয়ার মতোই। রাশিয়ান গোলায় ইউক্রেনের এক শহরে জাদুঘর ভেঙে পড়ার সময় মানুষের মনে পড়েছিল মিত্র শক্তির বাগদাদ ধ্বংসের কথা।
আমেরিকা, ইউরোপ এখন এই যুদ্ধে পিছুটান দিয়েছে। ইউক্রেনের পরাজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। মাথা নত করে শস্য বিক্রির চেষ্টায় আছে তারা। চাপিয়ে দেয়া কৌশলগত আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করে রাশিয়া এখন সব দিক দিয়ে লাভবান রয়েছে। গোটা অঞ্চল পশ্চিমাদের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্থানীয় নতুন নেতৃত্ব শক্তিশালী হচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে বিশে^ যে জ¦ালানি ও খাদ্য সঙ্কট তা নিরসনে মধ্যস্থতাকারী নতুন নায়কের ভূমিকায় উঠে এসেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক এক হয়েছে অঞ্চলের শৃঙ্খলা পুনর্বিন্যাসে। চীন তার প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনায় আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। আফ্রিকা মধ্য এশিয়া ককেশাস অঞ্চলে নতুন মেরুকরণ সম্পন্নের পথে।
সূরা বাকারার ২৫১ নং আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই যমিন ফাসাদপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর ওপর অনুগ্রহশীল।
মানুষের জ্ঞান সীমিত। চিন্তা পরিকল্পনা ক্ষুদ্র। আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন আল্লাহর সিদ্ধান্তের সামনে তুচ্ছ। মানুষ কোটিবার চাইলেও কিছুই হবে না। আল্লাহ যা চাইবেন সেটাই হবে। ‘ওয়ামা তাশা ঊনা ইল্লা আই ইয়াশা আল্লাহু রাব্বুল আলামীন’। তাছাড়া মানুষ জানে না যে, কিসে তার ভালো-মন্দ। মন্দকে সে ভালোবাসে। ভালোকে সে অপছন্দ করে। এ জন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের ওপর লড়াইয়ের বিধান দেয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় এবং হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোনো বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। (সূরা বাকারাহ : ২১৬)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন