বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আজ পবিত্র আশুরা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

আজ পবিত্র আশুরা। মুহাররম মাসের ১০ তারিখ। মুহাররম সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি। বছরের ১২ মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আশহুরে হুরুম বা হারাম মাস তথা সম্মানিত মাস বলা হয়েছে। উক্ত চার মাস হচ্ছে- মুহাররম, রজব, যিলক্বাদাহ ও যিলহিজ্জাহ।

এই চারটি মাসকে আল্লাহতায়ালা বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। এই মাসগুলো ‘হারাম’ বা সম্মানিত মাস হিসেবে পরিগণিত, যার মধ্যে ঝগড়া-ফাসাদ, লড়াই, খুন-খারাবি ইত্যাদি অন্যায়-অপকর্ম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এই মাসগুলোতে তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম-অত্যাচার করো না।’ (সুরাহ তাওবা : ৩৬)। বিশেষভাবে মুহাররম মাসের ১০তম দিবস আশুরা নামে অভিহিত, যার মর্তবা অত্যধিক।

এ দিনকে তার পূর্বের দিন কিংবা পরের দিনের সাথে মিলিয়ে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ তাকীদ দিয়েছেন। আশুরার রোযার হুকুম : রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম ১০ মুহাররমে সিয়াম পালন করেছেন। কিন্তু ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ১০ মুহাররমকে সম্মান করত এবং এ দিন তারা সিয়াম পালন করত। তা জেনে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের নিয়ম থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করার জন্য ৯ ও ১০ মুহাররম অথবা ১০ ও ১১ মুহাররম রোযা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার সিয়াম পালন করলেন এবং সকলকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা এই দিনটিকে (১০ মুহাররম) পালন করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ আমরা ৯ মুহাররমসহ সিয়াম রাখব। রাবী বলেন, কিন্তু পরের বছর মুহাররম আসার আগেই তার ওফাত হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম : ১১৩৪)।

অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা আশুরার দিন রোযা রাখো এবং ইহুদিদের বিরোধিতা করো। তোমরা আশুরার সাথে তার পূর্বে একদিন অথবা পরে একদিন রোযা রাখ। (সুনানে বাইহাকী : ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৮৭)। ফজিলতের দিক দিয়ে রমজানের রোযার পরেই আশুরার রোযার অবস্থান। এটা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়। এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানের পরে সর্বোত্তম রোযা হলো মুহাররম মাসের রোযা (অর্থাৎ আশুরার রোযা) এবং ফরজ নামাযের পর সর্বোত্তম হলো রাতের নফল নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। (সহীহ মুসলিম : ১১৩০)। অন্য হাদিসে এসেছে, হযরত আবু ক্বাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি আশা করি, আশুরার (১০ মুহাররমের) সিয়াম আল্লাহর নিকট বান্দার বিগত এক বছরের (সগীরা) গুনাহের কাফফারা হিসেবে গণ্য হবে। (সহীহ মুসলিম : ১১৩০)।

আশুরার রোযা রাখার উদ্দেশ্য : ১০ মুহাররম তারিখে অত্যাচারী পাপিষ্ট ফিরআউন ও তার কওম আল্লাহর প্রিয় নবী মূসা (আ.)-কে হত্যা করার ঘৃণিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে, আল্লাহতায়ালা ফিরআউনকে তার দলবলসহ সাগরে ডুবিয়ে দেন এবং মূসা (আ.) ও তার কওম বনী ইসরাঈলকে অত্যাচারী ফিরআউনের হাত থেকে মুক্তি দান করেন। এ নিয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে মূসা (আ.) এ দিন নফল রোযা রাখেন। তখন তার অনুসারীগণও এদিন রোযা রাখেন। সে জন্য হজরত মূসা (আ.)-এর তাওহীদি আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এদিন নফল রোযা পালন করেছেন এবং তার উম্মতকে পালন করতে বলেছেন।

এ সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার সিয়াম রাখতে দেখেন। তখন তাদের এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন এটি একটি মহান দিন। এদিকে আল্লাহতায়ালা মূসা (আ.) ও তার কওমকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফিরআউন ও তার লোকদের ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তার শুকরিয়া হিসেবে মূসা (আ.) এ দিন সিয়াম পালন করেন। তাই আমরাও এ দিন সিয়াম পালন করি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চাইতে আমরাই মূসা আ.-এর (আদর্শের) অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সিয়াম রাখেন এবং সকলকে রাখতে বলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Antara Afrin ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
এটাই মহররমের শিক্ষা। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’। অন্যায়-অবিচার ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে ত্যাগের মহিমা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
আশুরার মূল চেতনা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত।
Total Reply(0)
salman ৯ আগস্ট, ২০২২, ৩:১৪ এএম says : 0
Alhamdulillah, ami o aj SIAM ase, InshaAllah kal o thakbo.....ameen
Total Reply(0)
Ismail Sagar ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩০ এএম says : 0
আশুরার এই দিনে আল্লাহ হজরত মুসাকে (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, আর ফেরাউন ও তার দলবলকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।
Total Reply(0)
Mohammod Joynal Abedin ৯ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩১ এএম says : 0
ইসলামের ইতিহাসে মহররমের ১০ তারিখ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। আবার এই দিনেই তিনি কেয়ামত ঘটাবেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন