ইউক্রেনের দক্ষিণে ব্যাপকভাবে সেনা সমাবেশ করছে রাশিয়া। এ দাবি করে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে যে, এটি নতুন হামলার জন্য প্রস্তুতি হতে পারে। রাশিয়ান সামরিক ট্রাক, ট্যাঙ্ক এবং অস্ত্রের দীর্ঘ কনভয় ডনবাস অঞ্চল থেকে দূরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে দেখা গেছে, যা রাশিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধ প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
বিট্রিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে যে, ভøাদিমির পুতিনের সৈন্যরা ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের প্রত্যাশায় বা একটি সম্ভাব্য নতুন অভিযানের জন্য জড়ো হয়েছিল। তাদের দাবি, এর ফলে বিরোধ ‘একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে’, যেখানে যুদ্ধটি পশ্চিম ও দক্ষিণে মোটামুটি ৩৫০-কিলোমিটার ফ্রন্ট লাইনে স্থানান্তরিত হবে যা জাপোরিজিয়া শহরের কাছে থেকে রাশিয়ান-অধিকৃত খেরসন পর্যন্ত বিস্তৃত। মন্ত্রণালয় বলেছে যে, সামরিক সরঞ্জাম ‘রুশ-অধিকৃত মেলিটোপোল, বার্দিয়ানস্ক, মারিউপোল এবং রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে কের্চ ব্রিজ হয়ে ক্রিমিয়াতে সরে যাচ্ছে’ বলে জানা গেছে, যখন নতুন কৌশলগত ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮০০ থেকে ১,০০০ সৈন্য রয়েছে। এদেরকে ক্রিমিয়া এবং প্রায় নিশ্চিতভাবে খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ান সৈন্যদের সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা হবে।
ইতিমধ্যে, আরও চারটি জাহাজ সফলভাবে ইউক্রেনের বন্দর ত্যাগ করেছে, এটি আশা জাগিয়েছে যে ইউক্রেনের বন্দরগুলিতে রাশিয়ার অবরোধের অবসান ঘটাতে তুরস্ক এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চুক্তিটি টিকে থাকতে পারে। চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য বৈধ এবং উভয় পক্ষ সম্মত হলে পুনর্নবীকরণ করা যেতে পারে। পোপ ফ্রান্সিস এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘পদক্ষেপ দেখায় যে সুনির্দিষ্ট ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য সংলাপ পরিচালনা করা সম্ভব, যা সবাইকে সাহায্য করে’।
পতনের মুখে ডোনেৎস্কের আরও কিছু শহর : ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া বর্তমানে বাখমুত এবং আভদিভকা শহরগুলি দখল করতে দুটি আক্রমণ চালাচ্ছে এবং সমস্ত দিক থেকে কয়েক ডজন শহর ও গ্রামে গোলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। আইএসডব্লিউর মতে, রাশিয়ান বাহিনী এখন আভদিভকার কাছে ডোনেৎস্ক ওব্লাস্টের একটি গ্রাম পিস্কি দখল করছে বলে মনে হচ্ছে, সেইসাথে বাখমুত থেকে ১১ মাইল দক্ষিণে ত্রাভনেভের ছোট বসতিও তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সেখান থেকে পালিয়ে যেয়ে অন্যত্র প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে বলে জানানো হয়েছে।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফরা রোববার বলেছেন যে, রাশিয়া বেলারুশে সেনা ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। যাইহোক, একই ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা সূত্র বলেছে যে, বেলারুশে কোন আক্রমণাত্মক গঠন সনাক্ত করা যায়নি, যদিও তার উত্তর প্রতিবেশী থেকে রকেট হামলা একটি হুমকি হিসাবে অব্যাহত রয়েছে।
জেলেনস্কির হুমকির পরপরই গণভোটের ডিক্রি জারি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি রোববার স্থানীয় সময় রাতে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল দখল করেছে, সেগুলোকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে যদি কোনো ধরনের গণভোট আয়োজন করে তা হলে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। জেলেনস্কি এমন হুশিয়ারি দেয়ার পরপরই জাপোরোজিয়ায় রাশিয়ার প্রতিষ্ঠিত প্রশাসন একটি ডিক্রি জারি করেছে। এই ডিক্রির মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করে রাশিয়ার সঙ্গে জাপোরোজিয়ার যুক্ত হওয়ার পথ সুগম হলো।
পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের সম্ভাবনা নেই : গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠকের পরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান জানান, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির সাথে পুতিনের বৈঠকের আয়োজন করতে আগ্রহী। এরদোগানের এ প্রস্তাবের ব্যাপারে গতকাল রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভকে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে দিমিত্রি পেসকোভ জানান, এখন জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেছেন, পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক তখনই হবে যখন দুই দেশের প্রতিনিধিরা তাদের ‘হোম ওয়ার্ক’ (শান্তি চুক্তির একটি ভিত্তি স্থাপন করা) শেষ করবেন। তিনি আরও বলেন, এটিই নেই। তার মানে বৈঠক হওয়ার কোনো কারণ নেই।
পারমাণবিক কেন্দ্রে কিয়েভের হামলা সমগ্র ইউরোপকে ঝুঁকিতে ফেলেছে : কিয়েভ সরকারী বাহিনীর দ্বারা জাপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (এনপিপি) গোলাবর্ষণ ইউক্রেন এবং সমগ্র ইউরোপের জন্য তেজস্ক্রিয় হুমকি তৈরি করেছে। ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস রোববার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে।
‘জাপোরোজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিস্থিতির জন্য রাশিয়াকে দায়ী করতে আমরা মার্কিন মিডিয়াতে প্রকাশিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করছি। সেখানে নির্বিচারে দাবি করা হয় যে, ‘রাশিয়ান সামরিক বাহিনী পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূখণ্ডে আর্টিলারি হামলা চালায়,’ দূতাবাস জানিয়েছে, ‘আমরা লক্ষ্য করি যে, বিকিরণ-বিপজ্জনক সাইটে এটি কিয়েভের প্রথম উস্কানি নয়। ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা জাপোরোজিয়ে এনপিপিতে গোলাগুলি ইচ্ছাকৃত। রাশিয়াকে অসম্মান করার জন্য, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বাস্তব হুমকি তৈরি করে কিছু এড়িয়ে চলে না। শুধু ইউক্রেনেরই নয়, ইউরোপেরও পারমাণবিক নিরাপত্তার জন্য এটি হুমকি,’ এতে বলা হয়েছে।
মানবিক প্রতিক্রিয়ার জন্য রাশিয়ার যৌথ সমন্বয় সদর দপ্তর অনুসারে, ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূখণ্ডে ৫ আগস্ট একটি আর্টিলারি স্ট্রাইক শুরু করে। গোলাগুলির ফলে দুটি উচ্চ-ভোল্টেজ পাওয়ার লাইন এবং একটি পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ান দূতাবাস বলেছে, ‘শুধুমাত্র পারমাণবিক শক্তি সুবিধার কভার করার জন্য রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর কার্যকর এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ, এর মূল অবকাঠামো প্রভাবিত হয়নি।’
রাশিয়ান কূটনীতিকরা জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) ‘কিয়েভের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করার জন্য এবং ইউক্রেনের বিকিরণ-বিপজ্জনক স্থাপনায় উস্কানি রোধ করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য,’ সেইসাথে আমেরিকান সাংবাদমাধ্যমের রুসোফোবিক বানোয়াট ‘প্রচার’ বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র : তাস, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন