জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন যে, সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছে তার বাহিনী। তারা ইউক্রেনের অনেক গ্রাম এবং রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলের বিশাল অংশ মুক্ত করেছে। ‘সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ইউক্রেনের মোট এক হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি ভূখণ্ড মুক্ত করা হয়েছে,’ তিনি বলেছিলেন।গত শুক্রবার ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ান সামরিক অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক হাব ইজিয়াম শহরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমারা ইজিয়ামের আশেপাশের এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর তেমন কোন অবস্থান খুঁজে পাননি। বরং স্যাটেলাইট ডেটা, স্বাধীন সামরিক বিশ্লেষক এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর ফটো এবং ভিডিওগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, তারা দ্রুত ইজিয়ামের উত্তরে আরেকটি লজিস্টিক্যাল হাব কুপিয়ানস্কের দিকে চলে গেছে।
এদিকে রাশিয়ান বাহিনীও তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে বলেছে যে, খারকিভ অঞ্চলকে শক্তিশালী করার জন্য সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইউক্রেনীয় এবং পশ্চিমা কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, ইউক্রেনীয় সেনাদের আক্রমণাত্মক অভিযানগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে এবং তারা যতটুকু অগ্রগতি অর্জন করেছে তাও নিরাপদ নয়। ইউক্রেনের অগ্রগতির সমস্ত দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি এবং ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণ উভয় অঞ্চলে লড়াইয়ের অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে ছেয়ে গেছে কারণ কিয়েভের সরকার একটি মিডিয়া ব্ল্যাকআউট প্রয়োগ করে যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করেছে।
কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের নেতারা উচ্চস্বরে এবং প্রায়শই বন্দর শহর খেরসনকে ঘিরে দক্ষিণে পাল্টা আক্রমণ চালানোর তাদের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন এবং তারা এ অঞ্চলে রাশিয়ান সরবরাহ লাইন, গোলাবারুদ ডিপো এবং কমান্ড সেন্টারগুলোকে রকেট দিয়ে আঘাত করার চেষ্টাও করে। তারা শত্রু লাইনের অনেক পেছনে সামরিক ঘাঁটি এবং রাশিয়ান সহযোগীদের ওপর গোপন আক্রমণ পরিচালনা করে। কিন্তু তারা এ সপ্তাহ পর্যন্ত বলার মতো কার্যত কিছুই অর্জন করতে পারেনি। উত্তর-পূর্ব ইউক্রেন থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর উপকূল পর্যন্ত ১,৫০০ মাইল প্রসারিত ফ্রন্ট লাইনে অধিকৃত অঞ্চল রক্ষা করা রাশিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনারা প্রায়শই অনুপ্রবেশ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু তারা একেই বড় সাফল্য বলে দাবি করে।
মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক এ. মিলি বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, ইউক্রেন সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হয়তো বাস্তব কিছু অগ্রগতি লাভ করেছে। তবে তিনি যুদ্ধ আরো তীব্র হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং ইউক্রেনকে নিয়ে বেশি কিছু প্রত্যাশা না করার কথা বলেছেন। জার্মানিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘খারকিভ থেকে শুরু করে খেরসন পর্যন্ত যুদ্ধ আছে- তার সাথে আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষাও আছে। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হিমারস মিসাইল ব্যবস্থার কারণে ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধে কিছু সুবিধা পাচ্ছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, রাশিয়া এখনও যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো ধরে রেখেছে। ‘যুদ্ধ শেষ হয়নি,’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া একটি বড় দেশ এবং ইউক্রেনের ব্যাপারে তাদের গুরুতর উচ্চাকাক্সক্ষা রয়েছে।’
শীতের প্রস্তুতি চলছে দোনেৎস্ক-লুগানস্কে -পুতিন : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন গতকাল বলেছেন যে, মস্কোর বিশেষজ্ঞরা কঠিন পরিস্থিতিতে দোনেৎস্ক এবং লুগানস্কে কাজ করছেন এবং শীতের প্রস্তুতির জন্য সবকিছু করছেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘মস্কোর বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই দোনেৎস্ক এবং লুগানস্কের জনপ্রিয় প্রজাতন্ত্রগুলোর রাজধানী পুনরুদ্ধারে প্রায়শই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্দান্ত কাজ করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি, রাস্তা এবং স্কুল মেরামত করে শীতের জন্য দোনেৎস্ক এবং লুগানস্ককে প্রস্তুত করার জন্য সবকিছু করছেন’।
ন্যাটো মহাসচিবের হুঁশিয়ারি : মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেন কঠিন শীতকাল পার করতে যাচ্ছে। এ সময় ইউক্রেনকে অবশ্যই রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে তা না হলে দেশটি নিজের স্বাধীনতা হারাতে পারে। ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করে তাহলে আমরা শান্তি পাবে। কিন্তু ইউক্রেন যদি যুদ্ধ বন্ধ করে তাহলে তারা স্বাধীন জাতির মর্যাদা হারাবে’। জার্মানির রামস্টেইন সামরিক ঘাঁটিতে এক বৈঠকের অবকাশে বার্তা সংস্থা এপি-কে একথা বলেন তিনি। রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান সঙ্ঘাত কতদিন অব্যাহত থাকবে সে ব্যাপারে সময়সীমা উল্লেখ করতে অস্বীকৃতি জানান ন্যাটো মহাসচিব। তবে আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে এ সঙ্ঘাত বন্ধ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে এখনো পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনে তার লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে ক্ষান্ত দেয়ার কোন ইঙ্গিত দেয়নি। ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ দাবি করেন, ‘রাশিয়ার আসল লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়া। সেক্ষেত্রে অন্তত আগামী শীতকালের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে’। ন্যাটো মহাসচিব আরো বলেন, চলমান সঙ্ঘাতে ইউক্রেনকে অবশ্যই সব ধরনের সমর্থন এবং সহযোগিতা দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে, এমনকি আসন্ন শীতে প্রয়োজনীয় ইউনিফর্ম, জেনারেটর, তাঁবু এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ইউক্রেনের সেনাদেরকে দিতে হবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, তাস, এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন