শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

জান্নাত আমার কত কাছে

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শ্বাস-নিঃশ্বাস, যে প্রয়োজন পূর্ণ হয় বাতাসের মাধ্যমে। কিছুক্ষণের জন্য সেই বাতাস বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। জীবনের অতি প্রয়োজনীয় এই বস্তুটিকে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি সহজ করেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ অবারিতভাবে এই নিয়ামত গ্রহণ করছে।

জীবন টিকিয়ে রাখার দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান হলো পানি। পানির মাধ্যমে মানবদেহের প্রায় সবকিছুই নিত্য পরিচালিত হয়। তাই পানি ছাড়া জীবনের একটি দিনও মানুষ সহজে কাটাতে পারে না। পানির অভাবে মানুষের মৃত্যু অবধারিত হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পানিও অত্যন্ত সহজলভ্য করেছেন।

মানুষের শরীরের একেকটা অঙ্গ কত দামি! জন্মসূত্রে পাওয়া মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নিঃসন্দেহে বিকল্পহীন। প্রতিটি অঙ্গের, এমনকি দেহের প্রতিটি কোষের কত সূক্ষ্ম-বিরাট কাজ ও কার্যকারিতা, তা বুঝতে গেলেও হয়রান হতে হয়। এর কোনো একটি শরীরে না থাকলে কিংবা কোনোটির কার্যকারিতা একটু কমে গেলে কী কঠিন অবস্থা হয়, ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। কিন্তু দয়াময় আল্লাহ আমাদের কোনো পরিশ্রম ছাড়াই এই সবকিছু দিয়ে রেখেছেন। এমনকি পরবর্তীতেও এগুলোর জন্য কোনো দেনা পরিশোধ করতে হয়নি।

এজাতীয় আরো অনেক বিষয়ের দিকে তাকালে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার নীতি হলো, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসকে তিনি সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য করে রাখেন। যে মহান সত্তার কাছে কোনো জিনিসের অভাব নেই, যার অধীনে আসমান জমিনের সবকিছু এবং যিনি পরম দয়ালু ও চিরদয়াময়, তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষেত্রে এমন ফায়সালা করবেন সেটা খুবই স্বাভাবিক।

এক্ষেত্রে বান্দার প্রথম কাজ হলো, আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণা, তাঁর নিয়ামত ও কৃপা এবং জীবনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে তাঁর এই সহজলভ্যতা নীতির প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা। এরপর আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক সর্বোচ্চ সুন্দর ও উত্তম পন্থায় এসব নিয়ামতকে ব্যবহার করা।

কোন জিনিস মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন? বাতাস, পানি ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজনের কথা তো খুব সহজেই বুঝে আসে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে বুঝে আসে জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসের কথাও। বাস্তবে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য।

যে বাতাস ছাড়া মানুষের জীবন নিশ্চিত মৃত্যুমুখে। যে পানির অভাবে মানুষের প্রাণ মুহূর্তে ওষ্ঠাগত। যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছাড়া মানুষের জীবন প্রতিনিয়তই বিপন্ন। সেই বাতাস, পানি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেয়েও মানুষের বেশি প্রয়োজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি। প্রয়োজন জান্নাতে যাওয়ার তাওফীক। কারণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পেলে জীবনের ব্যর্থতা নিশ্চিত। জান্নাতে যেতে না পারলে দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ। পক্ষান্তরে জান্নাতে যেতে পারলে দুনিয়া ও আখেরাতের হাজারো, লাখো, কোটি দুঃখ-কষ্ট নিতান্ত গৌণ। অগণন চিন্তা পেরেশানিও একেবারে নগণ্য।

কুরআন ও হাদিসে বিভিন্নভাবে একথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়ালু এবং পরম করুণাময়। তিনি তাঁর বান্দাদের কল্যাণ চান। বান্দাদের তিনি কল্যাণ ও সফলতার দিকে ডাকেন। জান্নাতের দিকে ডাকেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে আহ্বান করেন।

বিষয়গুলো খেয়াল করলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, কল্যাণ বান্দার এত প্রয়োজন, যে জান্নাত ছাড়া বান্দার কোনো উপায় নেই এবং যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পেলে তার কোনো গতি নেই, সেই কল্যাণ ও সফলতাকে তিনি অবশ্যই সহজ করবেন। জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকে বান্দার জন্য অবশ্যই আসান করবেন। চিরকল্যাণ ও প্রকৃত কামিয়াবীর পথে অগ্রসর হওয়াকে তিনি অবশ্যই মসৃণ করবেন।

জান্নাতে যাওয়া কেবল সফলতাই নয়, জান্নাতে যাওয়া মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজন। এই প্রয়োজন যেন মানুষ খুব সহজেই পূরণ করতে পারে, বরং অনায়াসেই যেন মানুষ এই সফলতা লাভ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।

জীবন চলার অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক এবং আরামদায়ক ও স্বচ্ছন্দ পথ-পদ্ধতি তিনি বলে দিয়েছেন। এরপর তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সেই জীবনের পূর্ণ নমুনা দেখিয়ে দিয়েছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য করতে। জানিয়েছেন, সেই আনুগত্যের মাধ্যমেই লাভ হবে জান্নাত। কুরআনের ভাষায় : যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে প্রবহমান থাকবে নহর। আর যে ব্যক্তি (তা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাকে দেবেন যন্ত্রণাময় শাস্তি। (সূরা ফাতহ : ১৭)।
অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হলো নবী (সা.)-এর দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও আদর্শকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। আর সেটাই হলো ঈমান ও ‘আমলে সালেহ’-এর জীবন। যে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : যেসব লোক ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতবাসী। তারা সর্বদা সেখানে থাকবে। (সূরা বাকারা : ৮২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Athar Noor ১৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
এক কথায়, পরম ও চরম শান্তি বলতে যা বুঝায়, তা সবই জান্নাতে পাওয়া যাবে। দুনিয়ার সুখ-শান্তির যত ব্যবস্থা আছে, জান্নাতের সুখ-শান্তির তুলনায় তা কিছুই না। বরং তা দুনিয়ার সকল আরাম-আয়েশকে হার মানাবে। মানুষ সুখ পেতে চায়। তাই পরম সুখ লাভের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ১৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শোনে নি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।” (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)
Total Reply(0)
Antara Afrin ১৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
জান্নাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না পৃথিবীতে মানুষ যতো বিত্তশালী হোক এবং যতো সুখ-শান্তিই ভোগ করুক না কেন তবু কোনো না কোনো দুঃখ বা অশান্তি থাকেই, কোনো মানুষের পক্ষেই সম্পূর্ণ সুখী হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জান্নাতে কোনো দুঃখই থাকবে না, এমন কি পৃথিবীতে মাল্টি বিলিয়ন হয়েও আরো বেশী পাওয়ার জন্য এবং ভোগ করার জন্য দুঃখের শেষ থাকে না। পক্ষান্তরে জান্নাতীগণ- যাকে সবচেয়ে ছোট জান্নাত দেয়া হবে তারও কোন অনুতাপ বা দুঃখ থাকবে না।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ১৫ আগস্ট, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
পৃথিবীতে যতো ঝগড়া-ফাসাদ সমস্তই স্বার্থপরতা, অহংকার ও হিংসার কারণে সংঘটিত হয়ে থাকে। জান্নাতে স্বার্থপরতা, অহংকার, হিংসা ইত্যাদি থাকবে না, তাই সেখানে গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা, ঝগড়া-বিবাদ, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি থাকবে না। সেখানে শুধু সম্প্রীতি ও সৌন্দর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন