পানি দূষিত করার পাশাপাশি আমাদের দেশে পানি সহজলভ্য হওয়ায় আমরা কেউই পানির অপচয় করতে কার্পণ্য করি না। অথচ হাদিস শরীফে পানির অপচয় করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হাদিসে এসেছে, নবীজী (সা.) একবার হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সা’দ (রা.) তখন ওজু করছিলেন। নবীজী তাকে বললেন, এ কেমন অপচয়? সা’দ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল! ওজুতেও (অধিক পানি ব্যবহার করলে) অপচয় হয় কী? উত্তরে নবীজী বলেন, হ্যাঁ, তুমি যদি প্রবহমান নদীতেও ওজু করে থাক! (মুসনাদে আহমাদ : ৬৭৬৮)। যেখানে বহমান নদীতেও পানির অপচয় না করতে বলা হয়েছে। সেখানে আমরা কীভাবে পানির অপচয় করি, তা তো নিজেরাই জানি।
এদিকে আমরা নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস করে কল-কারখানা তৈরি করছি। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যানবাহন বানিয়েছি। কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করেছি। তাই আগের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।
বাছ-বিচারশূন্য বনাঞ্চল ধ্বংস করে, পাহাড় কেটে, নদী ভরাট আর পানির অপচয় ও দূষিত করে আমরা নিজেরাই আমাদের ধ্বংস করছি। সে কারণেই দ্রুত গতিতে হচ্ছে জলবায়ুর এই ভয়ঙ্কর পরিবর্তন। এগুলো আমাদের হাতের কামাই। এর দায় আমাদেরই। এই বিপর্যয় আমরাই ডেকে আনছি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন : ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।’ (সূরা রুম : ৪১)।
এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর আদর্শ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ বলে হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন। হযরত আবু মালেক (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। (মুসলিম : ২২৩)। দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশই পারে জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়াল স্রোত কিছুটা রুখে দিতে। পানি দূষণ, বাতাস দূষণ ও পরিবেশ দূষণ যদি আমরা বন্ধ করতে পারি, আশা করা যায় আবহাওয়া আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
দেদারছে গাছ কেটে সবুজ-শ্যামল পরিবেশকে আমরা মরুভূমি বানাচ্ছি। অভাব হচ্ছে প্রাকৃতিক অক্সিজেনের। গাছপালার অভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড বাতাসে মিশে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। ইসলাম অযথা গাছ কাটা নিষেধ করার পাশাপাশি গাছ লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। গাছ লাগানোর প্রতি তাগিদ দিয়ে নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন : কেয়ামত এসে গেছে, এমন অবস্থায় তোমাদের কারো হাতে যদি ছোট একটি খেজুরগাছ থাকে, তাহলে সে যেন গাছটি রোপণ করে দেয়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১২৯০২)।
জনপদে যখন অশ্লীলতা, পাপ-পঙ্কিলতা বেড়ে যায়, তখন সেই জনপদ থেকে আল্লাহর রহমত বরকত চলে যায়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন আমাদের থেকে বরকত চলে যাওয়ার দিকেও ইশারা করে। দৈনিক ইনকিলাবের একটি খবরে জানা যায় তীব্র তাপদাহের কারণে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এটা আল্লাহর গজব বৈ আর কি? পাপাচারে সয়লাব হয়ে গেছে এই সমাজ। পরকীয়া, ব্যভিচারের মতো অপরাধ মহামারি আকার ধারণ করেছে।
আল্লামা জাজিরি (রহ.) তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ব্যভিচার ও এর প্রভাবের ক্ষতি অগণিত। এতে চারিত্র্যিক, ধর্মীয়, শারীরিক, সামাজিক, পারিবারিক সর্বোপরি পাপ কাজে জড়িয়ে পাপিষ্ট হওয়ার ক্ষতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারীর দোয়া কবুল করেন না। তার থেকে ঈমানের নূর চলে যায়। যেখানে ব্যভিচার চলে, সেখানে রহমতের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যভিচার চুরি, হত্যা ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক।
বর্তমানের এই কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমত ছাড়া আমরা অসহায়। আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার এখনই সময়। সকল প্রকার পাপ থেকে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন