বর্তমানে সাল গণনার হিসাব অনুসারে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ, ১৪৪৪ হিজরী, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। আমরা ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাস; ১৪৪৪ হিজরীর সফর মাস এবং ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাস অতিক্রম করে চলেছি। খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুসারে ২০২২ সাল পূর্ণ হতে আরো চার মাস বাকি। অনুরূপভাবে ১৪৪৪ হিজরী সাল পূর্ণ হতে বার মাস বাকি এবং ১৪২৯ বঙ্গাব্দ পূর্ণ হতে সাত মাস বাকি। চার, বার এবং সাত সংখ্যাগুলোর প্রতি লক্ষ না করে আমাদের দেখা উচিত আমরা পারমাণবিক বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠতম উন্নতির যুগে কেমন আছি। দুনিয়াব্যাপী প্রায় আটশত কোটির কাছাকাছি লোকের পদভারে মাটির পৃথিবীর গর্ভে বুক উথলে উঠেছে।
এত লোক সমাগম এবং কলরবের ধ্বনিতে পৃথিবীর হয়তো নাচতে ইচ্ছে করছে। তবে পৃথিবী নাচুক বা নাই নাচুক, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু পৃথিবীবাসী মানুষের নাচনের অন্ত নেই। টেলিভিশনের পর্দায় নজর বুলালে কত রঙ, ঢং, আকার-আকৃতির মানব নাচের আসর দেখা যায়, তা হিসাব করে শেষ করা যাবে বলে মনে হয় না। কারণ পৃথিবীর সকল অংশে বসবাসকারী লোকেরা নিজেদের আয়োজন পরিবেশ অনুসারে নৃত্য-কর্ম-সম্পাদন করে যাচ্ছে। কার খবর কেই বা রাখে!
কিন্তু চলমান দুনিয়ার মানুষের স্মরণ রাখা দরকার যে, তাদের এই নর্তন-কুর্দন বড় কথা নয়। তাদের যাবতীয় কলাকৌশল, উন্নতি-অগ্রগতি ও উৎকর্ষকে বিনাশ করার মতো বস্তুও মানুষের হাতে আছে। হাদিস শরীফের ভাষ্য অনুসারে এটা হচ্ছে আখেরী যমনা অর্থাৎ শেষ কাল। এখন যতই দিন অতিবাহিত হবে, ততই পৃথিবীর মানুষের অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে ধাবিত হবে। এই যমানায় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। এই বিশ্বযুদ্ধ হবে পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ। পারমাণবিক শক্তিধর মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর দাপট ও শক্তিমত্তা প্রদর্শনের যুদ্ধ।
শোনা যায়, বর্তমানে দুনিয়াতে পনের হাজারেরও অধিক পারমাণবিক বোমার বিশাল ভাণ্ডার প্রস্তুত আছে। আমরা জানি, ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল। তাতে ৬০ হাজার লোক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মারা গিয়েছিল। বর্তমানকালের মজুদ বোমাগুলো ১৯৪৫ সালে ব্যবহৃত বোমা হতে লক্ষগুণ বেশি শক্তিশালী। এর এক একটা বোমার আঘাতে পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোর লক্ষ লক্ষ ও কোটি কোটি মানুষ মারা যাবে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে পৃথিবীর নৃত্য চপল মানুষের কোটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কেউ কেউ বলেন, পৃথিবীতে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে এর দুই-তৃতীয়াংশ লোক অথবা তার চেয়েও বেশি লোক মারা যাবে। আর সহায়-সম্পদ কি পরিমাণ ধ্বংস হবে, তার হিসাব ভবিষ্যতে যারা বেঁচে থাকবে তারা হয়তো দিতে পারবে। এখন এ চিন্তা করা সম্ভব হবে না।
বর্তমানে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর পরিবেশিত হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর গুণধর ব্যক্তিরা বলেছেন : নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে পারমাণবিক বোমার ব্যবহারে তারা পিছপা হবেন না। আবার কোনো কোনো মোড়ল এ-ও বলেছেন যে, পারমাণবিক বোমার আঘাত প্রথমে কোথায় হবে, এটা বড়ই ভাবনার বিষয়! সে যাই হোক মোড়লরা গা-ঝাড়া দিতে শুরু করেছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে চলছে তাদের যুদ্ধ মহড়া। মোড়লদের গোপন অস্ত্রের কিছু কিছু নামও পরিচিতি প্রকাশ পাচ্ছে। এমতাবস্থায় পৃথিবীবাসী আমজনতার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কি হাল হবে এই নিরীহ জনগোষ্ঠীর? কি দশা হবে। ইট, বালু ও সিমেন্টের গড়া এই জৌলুসপূর্ণ নগর সভ্যতার? সাধের নাচন দেখবেই বা কে এবং নাচবেই বা কে? হায়রে, একি হতে যাচ্ছে? পালাবার পথ কোথায়?
আমরা সবিনয়ে বলব, পালাবার পথ নেই। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল-কুরআনে ঘোষণা করেছেন : (ক) হে প্রিয় হাবীব! আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখোমুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী-আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদের জানিয়ে দিবেন সে সব কর্ম, যা তোমরা করতে। (সূরা জুমআ : ৮)।
(খ) কিয়ামতের দিন মানুষ বলবে, পলায়নের জায়গা কোথায়? না, কোথাও আশ্রয়স্থল নেই, আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে। সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে। বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চুক্ষষ্মান। (সূরা ক্বিয়ামাহ : ১০-২৪)।
(গ) আর নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল তাদের সকলেই পাবে, তাদের প্রাপ্য প্রদানে মোটেই অন্যায় করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-২৫)। সুতরাং মানুষ নিজ হাতে যা কামাই করেছে তার প্রতিফল তাকে ভোগ করতেই হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন