বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সারা বিশ্বের মত বিশ্ব ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকোমিয়া (সিএলএল) দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর সিএলএল দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘চিকিৎসায় সম্পৃক্ত হোন’।
সেমিনার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগে রোগীর সেবায় ছয়টি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। ক্লিনিকগুলো হলো- হেমোফিলিয়া, বি-ডিং এন্ড কোয়াগুলেশন ডিজঅর্ডার ক্লিনিক; এন্টিকোয়াগুলেন্ট ক্লিনিক; লিম্ফোমা, মায়েলোমা এন্ড ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া ক্লিনিক; এমপিএন ক্লিনিক; এমডিএস, এপ্লাস্টিক এনিমিয়া এন্ড বোন ম্যারো ফেইল্যুর ক্লিনিকও থ্যালাসেমিয়া ক্লিনিক। ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন রোটেশন ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করবে বিভাগের শিক্ষকরা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ।
সেমিনারে জানানো হয়, সিএলএল বা ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া এক ধরনের ক্যান্সার, যা লিম্ফোসাইট রক্ত কণিকাকে আক্রান্ত করে। রক্তের লিম্ফোসাইটের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে এই রোগ দেখা দেয়। অস্থিমজ্জা থেকে এ রোগের উৎপত্তি ঘটে। সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে এ রোগটি দেখা যায়। রোগটির উপসর্গ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। তবে সিএলএল হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জিন মিউটেশনের কারণে রোগটি হয়ে থাকে- যা রক্ত কণিকার বৃদ্ধি ও উন্নতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক অকার্যকারী লিম্ফোসাইট উৎপন্ন হয়, যা গুণিতক হারে বাড়তে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অর্গানে জমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এ রোগের কোন উপসর্গ রোগীর থাকে না। লক্ষণ বা উপসর্গ অনেক পরে দেখা দিতে পারে যখন এ রোগ লিভার, লিম্ফ নোডকে আক্রান্ত করে।
এ রোগের উপসর্গের মধ্যে- লিম্ফনোড বা লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, জ্বর, ঘন ঘন ফুসফুস কিংবা ইউরিন ইনফেকশন হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, রাতে অতরিক্ত ঘাম হওয়া এসব হতে পারে। সিবিসি, পিবিএফ ফ্লো সাইটোমেট্রি এবং কিছু ক্ষেত্রে বোন ম্যারো পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ কম থাকলে রোগের স্টেজের উপর ভিত্তি করে রোগটির চিকিৎসা ছাড়াই শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণে রাখা যায়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপী, কেমোথেরাপী ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করা যায়। নিয়মিত মনিটরিং এবং ওষুধের ডোজ বা ওষুধ পরিবর্তন করে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বর্তমানে সিএলএল রোগের সব ধরনের চিকিৎসা বাংলাদেশেই করা সম্ভব। এ রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জ¦র কমে না, মাথা ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল থাকে এমন হলে কিছু পরীক্ষা করা দরকার। সিএলএল রোগে আক্রান্ত রোগীরা জানতেই পারেন না যে, কী রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সচেতনতার জন্য এমন কর্মসূচি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিএসএমএমইউয়ে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পিএইচডি প্রোগ্রামের নির্বাচিত গবেষণার প্রোটোকল বিষয়ে বোর্ড অব এডভান্স স্টাডিজের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত। সভায় ২৬টি পিএইচডির থিসিস উপস্থাপন করা হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ২৪ বছর মাত্র ৩ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন