বিয়ের পয়গাম দিতে পারা নারী-পুরুষের বৈধ অধিকার। পয়গাম কবুল হলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারাও নারী-পুরুষের বৈধ অধিকার। বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে পাওয়া এবং স্ত্রী তার স্বামীকে পাওয়া তাদের প্রত্যেকের ফরজ হক ও অপরিহার্য অধিকার। এরপর যতদিন বিবাহবন্ধন অটুট থাকে, একে অন্যের নিকট থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করাও স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য অধিকার। তো এই অধিকারগুলোর কোনো একটি পাওয়ার জন্য বা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কোনোরূপ অর্থব্যয়ের বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণ অবান্তর। সুতরাং এক্ষেত্রে কোনো অর্থ-সম্পদ দাবি করা হলে কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপের মাধ্যমে কোনো কিছু গ্রহণ করা হলে তা হবে সরাসরি ঘুষ ও রিশওয়াত, যার লেনদেন সম্পূর্ণ হারাম এবং লেনদেনকারী ও মধ্যস্থতাকারী সবাই আল্লাহর লা’নত ও অভিশাপের উপযুক্ত।
এসব পাশবিক প্রবণতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে এইসব ঘৃণ্য প্রবণতা প্রকাশিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যজনক। যে সমাজের লোকেরা এই সব দোষ ও দুর্বলতার সংশোধন করে না; বরং কর্ম ও আচরণে পশুত্বের পরিচয় দিতে থাকে তাকে তো মনুষ্যসমাজ বলা যায় না। একজন ইনসান, উপরন্তু সে যদি হয় মোমিন, তাহলে অন্যের ধন-সম্পদ ও ইজ্জত-আব্রুর উপর কীভাবে হস্তক্ষেপ করে? কারো দুর্বলতা ও অসহায়ত্বের সুযোগ সে কীভাবে নেয়? এ তো কমিনা ও কমবখত লোকের কাজ। যার মাঝে বিন্দুমাত্র শরাফতও আছে তারও তো এই অপকর্মের হীনতা উপলব্ধি করা কঠিন নয়।
যৌতুক, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন এবং যত ধরনের দুর্নীতি এই সমাজে প্রচলিত তা সবই ঐ পাশবিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এখন প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজেকে ও নিজের অধীনস্ত সকলকে পশুত্বের হীনতা থেকে মনুষ্যত্বের মর্যাদায় উন্নিত করার চেষ্টা করা। এটা এখন সময় ও সমাজের অপরিহার্য-দাবি। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে, আখিরাতের স্মরণ ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতিকে শক্তিশালী করা। এজন্য দ্বীনী শিক্ষার বিস্তার, আখলাক-চরিত্রের সংশোধন এবং নেককার বুযুর্গানে দ্বীনের জীবন ও আদর্শ চর্চার কোনো বিকল্প নেই।
শরীয়তের একটি সাধারণ নীতি এবং একটি স্বতঃসিদ্ধ কথা এই যে, কোনো কাজের দ্বারা যদি হারামের দরজা খোলে তাহলে সেটাও হারাম হয়ে যায়। তাহলে যে কাজ নিজেও হারাম এবং আরো অনেক হারামের জনক তা কত জঘণ্য ও ভয়াবহ হতে পারে? তো যৌতুক এমনই এক অপরাধ, যা আরো বহু অপরাধের জন্ম দিয়ে থাকে।
যৌতুকের দাবি পূরণের জন্য অনেক অভিভাবক সুদ-ঘুষের কারবার ও বিভিন্ন হারাম উপার্জনে লিপ্ত হয়। এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। আর স্ত্রীর উপর নির্যাতন-নিপীড়ন এমনকি হত্যা ও আত্মহত্যাও সাধারণ বিষয়। তেমনি কনেপক্ষ শক্তিশালী হলে দুই পরিবারে বিবাদ-বিসংবাদ, মামলা-মোকদ্দমা এমনকি খুন-জখম পর্যন্ত হতে থাকে। দৈনিক পত্রিকার পাঠক এসব ঘটনায় রীতিমতো অভ্যস্ত!
যৌতুকের সবচেয়ে ন্যূনতম ক্ষতিটি হল এর কারণে দাম্পত্য সম্পর্কের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে। ঝগড়া-বিবাদ গালিগালাজ এমনকি মারধর পর্যন্ত হয়। যার প্রত্যেকটিই এক একটি কবিরা গোনাহ এবং পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সন্তানমাত্রই আল্লাহর রহমত, তবে কন্যা আল্লাহর বিশেষ রহমত; কিন্তু যৌতুকের কারণে অনেক পিতামাতা কন্যার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন, যা চরম মূর্খতা ও জাহিলিয়াত।
আরো বেদনার বিষয় এই যে, ছেলের মা-বোনেরাও নববধূর কাছে যৌতুক দাবি করতে পিছপা হয় না। নারী হয়েও তারা নারীর যন্ত্রণা বোঝে না, তার প্রতি সহমর্মী হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তো জা-ননদ-শাশুড়িই হয়ে ওঠে নববধূর সবচেয়ে বড় দুশমন। তো যারা যৌতুক দাবি করে বা গ্রহণ করে তাদের উচিত রাসূলে কারীম (সা.)-এর এই বাণী স্মরণ রাখা : ওই দেহ বেহেশতে যাবে না, যা হারাম (গিযা) থেকে উৎপন্ন হয়েছে। দোযখের আগুনই তার অধিক উপযোগী। (সহীহ ইবনে হিববান : ১৭২৩, ৪৫১৪)।
তদ্রূপ যারা এই কু-রসমের প্রতিরোধ করে না; বরং নিজেদের অক্ষম মনে করে কিংবা যৌতুক দিয়ে জামাতার মনোতুষ্টি কামনা করে তাদের মনে রাখা উচিত, কারো পাপ-দাবি পূরণ করাও পাপ। রাসূলে কারীম (সা.)-এর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা তাদের দ্বিতীয়বার স্মরণ করা উচিত-ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ।
এই অভিশপ্ত ব্যাধি থেকে আল্লাহ আমাদের সমাজকে পবিত্র করুন, সকল কুফরী ও শিরকী কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের রক্ষা করুন এবং একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার তৌফিক দান করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন