আল্লাহতায়ালা কোনো সম্প্রদায়ের উপর হঠাৎ করে আজাব নাজিল করেন না। বিভিন্নভাবে প্রথমত বান্দাকে সতর্ক করেন। এরপরও যদি বান্দা গাফিলতের ঘুম থেকে জাগ্রত না হয়, তখন আসমান থেকে ভয়াবহরূপে নেমে আসে আল্লাহর আজাব। তখন আর কিছু করার থাকে না। জেগে উঠলেও কোনো লাভ হয় না। দুনিয়াতে যত মসিবত আছে তার সবকিছুই আমাদের বদ আমলীর ফল, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসমানি সতর্কবার্তা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে : যে বিপদ তোমাদের স্পর্শ করে তা তোমাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহ (তোমাদের) অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন। (সুরা শুআরা : ৩০)।
আল্লাহতায়ালার আযাব বিভিন্নভাবে এসে থাকে। কখনো অভাব-অনটনরূপে, কখনো ঝগড়া-বিবাদরূপে, কখনো বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, রোগ-শোক, মামলা-মুকাদ্দামারূপে। আবার কখনো জালেম শাসক, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ইত্যাদিরূপে। বান্দার গোনাহ যেমন অসংখ্য, তেমনি আল্লাহতায়ালার শাস্তির রূপও বিভিন্ন।
আজাবে ইলাহীর সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হলো যখন তা নেয়ামতের আকৃতিতে আসে। কারণ এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই ভুল করে। আল্লাহর শাস্তিতে গ্রেফতার হওয়ার উপলব্ধিই তার থাকে না। আল্লাহতায়ালার অবাধ্য হওয়ার পরও কেউ যদি সম্মান, সম্পদ, সুস্থতা এবং পার্থিব মান মর্যাদা ভোগ করে, তাহলে বুঝতে হবে সে মূলত নেয়ামতরূপে আগত আল্লাহর শাস্তিতে গ্রেফতার হয়ে আছে।
এক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টির উপলব্ধি হৃদয়ে জাগ্রত থাকে না, তাই তাওবা না করে, অনুতপ্ত না হয়ে বান্দা অবাধ্যতা ও পাপাচারে আরো ডুবে থাকে। আল্লাহতায়ালার নিয়ম হলো, ব্যক্তিগত কর্মের প্রতিদান ও শাস্তি ব্যক্তিগতভাবেই দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন গোটা সমাজ কিংবা সমাজের অধিকাংশ লোক নৈতিক অধঃপতন ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের শিকার হয়, তখন গোটা সমাজের ওপর নেমে আসে খোদায়ী গজব। দু-চারজন লোক যদি তখন ভালো থাকে; কিন্তু পতনোম্মুখ সমাজের লাগাম টেনে ধরে ধ্বংসের গহ্বর থেকে তাদের উদ্ধার করে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখানোর কোনো চেষ্টা না করে তাহলে তারাও সে গযব থেকে নিস্তার পায় না।
বিষয়গুলো সামনে রেখে আসুন আমরা আমাদের সমাজকে একটু পর্যবেক্ষণ করি। নিঃসন্দেহে আমরা দেশের ও দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক শিল্প-কারখানা বানিয়েছি। আকাশচুম্বি বিলাসবহুল দালান গড়ে তুলেছি। সড়ক, জনপথ ও আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ-ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি। আর এই সকল ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে আল্লাহর বিধান পরিপন্থি পথই আমরা অবলম্বন করেছি, যদিও তা আল্লাহর বিধানের অনুসরণ করেও সম্ভব ছিল।
আমরা সুদি ঋণ নিয়ে কাল্পনিক উন্নতির স্রোতে গা ভাসিয়েছি। ব্যাংক খুলেছি, ইন্সুরেন্সের জাল বিছিয়েছি, থিয়েটার বানিয়েছি, টিভি স্টেশন ও সিনেমা হলে নগ্নতার পসরা বসিয়েছি। মোটকথা আল্লাহবিমুখ পথভ্রষ্ট জাতির যা কিছু বৈশিষ্ট্য তার সবই আমরা নিজেদের মাঝে ধারণ করেছি। আমরা কখনো নবীজীর জীবন ও চরিত্র, নবীজীর আখলাক ও আচরণ এবং মাদানী সমাজ-সভ্যতা, মাদানী রাজ্যনীতির দিকে চোখ তুলেও তাকইনি। ধর্মবিদ্বেষী, পথভ্রষ্ট ও অভিশপ্ত পশ্চিমা জাতিবর্গের চিন্তানৈতিক দাসত্বই যেন আমাদের গর্বের বিষয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন