ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় মুহুরী নদীর দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে অন্তত ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে মানুষের ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট,রোপা আমন ধান,মৎস্য ঘের ও সবজি খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ভারতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান মুহুরী,কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে ডুকে পড়লে নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে গতকাল বিকেলে বিপৎসীমার ৮০ মেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল রাত থেকে মুহুরী নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষ নদীর বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মাটির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, নদীতে পানির তীব্র চাপের কারণে ভোররাতে মুহুরী নদীর দুটি স্থান ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর,দক্ষিণ দৌলতপুরে অংশে বড় ভাঙনের দেখা দেয়। মুহুর্তে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে এবং মানুষের ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট, ফসলি জমিতে রোপা আমনের ধান খেত, মৎস্য ঘের, শতশত পুকুরের মাছ, সবজি খেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। চলতি বছরের মধ্যে ফেনীতে এটি দ্বিতীয় দফা বন্যা,এর আগে গত ২০ জুন প্রথম দফা বন্যা হয়েছিল তখন মুহুরী নদীর বাঁধের ৪টি স্থানে ভেঙ্গে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। তখন মানুষের ঘরবাড়ি,ফসল ফলাদির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় মানুষকে আবার ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন বলেন, আমাদের দু:খ বুঝি কেউ দেখার নেই। প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ে বসতঘরের ক্ষতি, জমিনের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। আর কত সহ্য করব। একবার ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগে আবার ক্ষতির কবলে পড়তে হয়। আমরা আর পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদেরকে বাঁচান, আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা নদীর বাঁধের স্থায়ী সমাধান চাই।
এদিকে প্রতিবছরই বর্ষামৌসুমে ভারতীয় উজানের পানির তোড়ে ফেনীর মুহুরী,কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর প্রায় ১২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে যেকোনো স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে বানভাসি মানুষকে প্রতিবছর চরম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় এবং আতঙ্কে দিনরাত পার করতে হয়। এ ঝরাজীর্ণ ৩টি নদীর বাঁধ সংস্কার বা স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোনো গুরুত্ব দেয়নি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফুলগাজী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, চলতি মৌসুমে বন্যা কবলিত অঞ্চলের মানুষ তাদের ফসলি জমিতে আমন ধানের বীজতলা রোপন করেছেন। পানি যেভাবে ঢুকছে এতে ৫০-৬০ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পানি আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে জমি থেকে না নামলে ধানের চারা পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে যে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে তা ব্যাহত হতে পারে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, প্রতিবছর নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এটির স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা এ প্রকল্পের আওতায় বেড়িবাঁধ এবং নদী খনন সহ একটি পূণর্বাসন প্রকল্প দাখিল করছি।
ফুলগাজীতে দায়িত্বরত ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এসো) দেলোয়ার হোসেন জানান, গতকাল থেকে নদীতে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ভোরে নদীর দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। আজ বিকেল পর্যন্ত মোট ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বিকেল ৩টার পর থেকে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলে নদীর ভাঙ্গা বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন