শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আমাদের প্রিয়নবী (সা.) উম্মতের নাজাতই ছিল যাঁর ধ্যানজ্ঞান-১

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহর বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আ.), সঙ্গে পুত্র ইসমাঈল। কাবা শরীফ নির্মাণ সমাপ্ত করলেন, দু’জনে মিলে। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর হৃদয়-সমুদ্রে তরঙ্গ এলো। আরজি পেশ করলেন ঘরের মালিকের নিকট : আয় আমাদের রব! আমাদের পক্ষ থেকে (এই ক্ষুদ্র নিবেদনটুকু) কবুল করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই মহান শ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের আপনার একান্ত অনুগত বানিয়ে নিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যেও এমন উম্মত সৃষ্টি করুন, যারা আপনার একান্ত অনুগত হবে এবং আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দিন এবং আমাদের তওবা কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি এবং কেবল আপনিই ক্ষমাপ্রবণ (এবং) অতিশয় দয়ার মালিক।

হে পরওয়ারদেগার! তাদের (আমার উত্তরসূরিদের) মধ্যে এমন একজন রাসূলও প্রেরণ করুন, যে তাদেরই মধ্য থেকে হবে এবং যে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে, তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবে এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয়ই আপনার এবং কেবল আপনারই সত্তা এমন, যাঁর ক্ষমতা পরিপূর্ণ, প্রজ্ঞাও পরিপূর্ণ। (সূরা বাকারা : ১২৭-১২৯)।

আল্লাহ শুনলেন বন্ধু ইবরাহীমের রোনাজারি। প্রেরণ করলেন এক ‘মহান শিশু’। নবী ইসমাঈলেরই ঔরসে। সেই কাবা প্রান্তরেই, মক্কা নগরীতে। তিনি রহমত, নূর ও জ্যোতি। তিনি পথপ্রদর্শক, সত্যের দিশারী। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। তিনি বাশীর ও নাযীর। তিনি গরীবের বন্ধু, অসহায়ের সহায়। অত্যাচারিতের আশ্রয় ও বঞ্চিতের ঠিকানা। তিনি মাহবুবে খোদা, সত্য ও ন্যায়ের বাদশাহ, জুলুম নিপাতকারী এবং উত্তম আচরণ প্রতিষ্ঠাকারী।

তিনি জাতির আদর্শ শিক্ষক, উম্মতের প্রকৃত রাহবার। তিনি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব, আদমের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি উম্মতের মহান মুহসিন, শাফাআতের নবী এবং আখেরী রাসূল। তিনি...। তিনি...। তিনি আর কেউ নন, আমার তোমার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.)। তিনি এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েত, সত্য, কিতাব এবং প্রমাণ নিয়ে। তাঁর আবির্ভাব আমাদের জন্য এক মহা নিয়ামত। মহান রবের মহান ইহসান। আল্লাহ বলেন : বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের ওপর অনুগ্রহ করেছেনÑ তিনি তাদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদেরই মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন, তাদের পবিত্র-পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। আর তারা এর পূর্বে ছিল স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে। (সূরা আলে ইমরান : ১৬৪)।

শোকর তোমার হে দয়াময়, ভ্রষ্টতা থেকে আলোর পথে এনে সেই নবীর উম্মতের কাতারে শামিল করেছ বলে। নবীজী ছিলেন উম্মতের হেদায়েত, নাজাত ও মুক্তির জন্য সদা বিভোর। উম্মতের কল্যাণ সাধনই ছিল তাঁর জীবনের সবকিছু। উম্মত কীভাবে অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে চির শান্তি ও সফলতা লাভ করতে পারে, কীভবে কুফর শিরক ও গোমরাহী থেকে মুক্তি পেয়ে ঈমানের নূরে উদ্ভাসিত হতে পারেÑ এ নিয়ে ছিল তাঁর দিলে ভীষণ তড়প।

কুরআনে কারীমে নবীজীর এ অবস্থার চিত্রায়ণ হয়েছে অত্যন্ত চমৎকার ভঙ্গিমায়। আল্লাহ তাআলা প্রিয় হাবীবকে উদ্দেশ করে বলেন : (হে রাসূল!) তারা ঈমান (কেন) আনছে না, এই দুঃখে মনে হচ্ছে আপনি নিজেকে শেষ করে ফেলবেন! (সূরা শুআরা : ৩)। হ্যাঁ, তিনি সেই নবী, যিনি উম্মতের হেদায়েত ও নাজাতের জন্য নিজেকে বিলীন করে দিয়েছেন। এ মুহূর্তে স্মরণ করতে পারি নবীজীর তায়েফ সফরের দৃশ্যগুলো।

সীরাতের সাধারণ পাঠকেরও জানা আছেÑ নবী কারীম (সা.) যখন তাওহীদ ও ঈমানের দাওয়াত নিয়ে তায়েফে গমন করেন তখন তাঁর ওপর দিয়ে কতটা নিষ্ঠুরতা বয়ে যায়! আঘাতে আঘাতে তাঁকে কতটা নির্মমভাবে রক্তাক্ত করা হয়! হৈ হুল্লোড় ও অশ্রাব্য বাক্যবাণে তাঁকে কতটা হেনস্তা করা হয়! উম্মতের হেদায়েতের খাতিরে নবীজী সব সয়ে গেছেন। কিন্তু আসমানের মালিকের তা সহ্য হয়নি। পাঠিয়ে দিয়েছেন হযরত জিবরীল (আ.)-কে দলবলসহ।

জিবরীল (আ.) এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার জাতি আপনার সাথে যে নিষ্ঠুর আচরণ করেছে আল্লাহ তাআলা সব দেখেছেন। এই দেখুন আমার সাথে রয়েছে পাহাড়ের ফেরেশতা। আপনি তাদের যেভাবে শায়েস্তা করতে বলবেন ফেরেশতারা তাই করবে। এরপর এলেন পাহাড়ের ফেরেশতা। নবীজীকে সালাম করে বললেনÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ! যা কিছু ঘটে গেল আল্লাহ তাআলা সব দেখেছেন। এখন আমি এসেছি। আপনি আমাকে যেভাবে হুকুম করবেন সেভাবেই করব। আপনি যদি চান তাহলে দুই পাহাড়কে একত্র করে তাদের পিষ্ট করে দেবো? রহমতের নবীর দয়া এখানেও প্রবল থাকল। বললেন : (না,) বরং আমি তো আশা রাখি, আল্লাহ তাআলা এদের প্রজন্মকে তাওহীদের জন্য কবুল করবেন। তারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে। তার সাথে আর কাউকে শরিক করবে না। (সহীহ বুখারী : ৩২৩১)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন