শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিধবা, বিপত্মীকের পুনর্বিবাহ- নির্মম সমাজ, নিঃসঙ্গ জীবন-২

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৬ এএম

বিবাহের তাৎপর্যের প্রতি ইঙ্গিত করার সাথে সাথে সূরা রূমের ২১ নং আয়াতে রয়েছে চিন্তার আহ্বান। চিন্তাশীলমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবে যে, বিবাহের ভেতর যেসব উপকারিতা নিহিত তা কেবল বিবাহ দ্বারাই অর্জিত হতে পারে, অন্য কোনো উপায়ে নয়। কাজেই একবার বিবাহ করার পর যখন দাম্পত্য জীবনের সুফল ভোগ করা হয়েছে এবং সেই সুফলভোগে জীবন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তখন অন্য রকম জীবনের চিন্তা করা বৃথা। বরং স্ত্রী বা স্বামী বিয়োগের পর পুনর্বিবাহ হচ্ছে আপতিত সব জটিলতা নিরসনের প্রকৃষ্ট উপায়।

বিষয়টি নিয়ে আমরা গভীরভাবে ভাবছি না কিংবা এ ভাবনাকে আমরা সমাজের ভেতর চালিত করতে পারছি না। যে কারণে মানুষ পুনর্বিবাহের বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা কঠিন বাধা ছেলেমেয়ে। মা কিংবা বাবার পুনর্বিবাহকে অধিকাংশ সন্তানই মেনে নিতে পারছে না। সমাজের সর্বস্তরেই এ অবস্থা বিরাজমান। বিখ্যাত এক ব্যক্তির জীবনীগ্রন্থে পড়েছিলাম, মা পুনর্বিবাহ করায় তিনি তার মুখদর্শন করতে রাজি ছিলেন না এবং মৃত্যু পর্যন্ত তা করেননি! বলিহারি তার মাতৃভক্তি! এমন কত পিতাই না আছেন, প্রিয় সন্তানদের প্রবল বাধার মুখে যারা বিবাহের ইচ্ছা ত্যাগে বাধ্য হন। অথচ বিবাহই ছিল তাদের আসল সমাধান। কিন্তু কী করা যাবে।

সন্তান বলে কথা! তাদের ক্ষমতাই আলাদা। অপত্য স্নেহই তাদের সেই ক্ষমতার উৎস আর সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যত পার তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাক। তারা একটুও চিন্তা করে না বাবার মানসিক অবস্থা কী? কী যাতনার ভেতর তার দিন কাটছে!

সন্তানদের আপত্তির একটা বড় কারণ হলো পিতার সম্পদে অংশীদার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু ঈমানদারদের তো এই ভয় করা উচিত নয়। সে জানে সম্পদের বিষয়টি নিয়তি নির্ধারিত। প্রত্যেকের কিসমত স্থিরকৃত। একের কিসমতে অন্যে ভাগ বসাতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে : এরা কি আপনার প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করি। পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। এবং তারা যা জমা করে তা থেকে আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর। (সূরা যুখরুফ : ৩২)।

আবার অনেক সময় পিতা পর হয়ে যায় কি না সেই আশঙ্কাও থাকে। সন্তান এমন কাউকে দেখেও থাকবে যে, দ্বিতীয় বিবাহের পর প্রথম পক্ষের সন্তানদের অবহেলা করছে। তা কেউ করলে সেটা অন্যায়, তার সংশোধন জরুরি। কিন্তু কেউ তা করে থাকলে সকলেই যে করবে এমন কোনো কথা নেই। এর বিপরীতও তো চোখে পড়ে। আসল কথা ন্যায়নিষ্ঠতা। এটা সকলেরই থাকা উচিত। যেমন পিতার, তেমনি সন্তানদেরও। কোনো অন্যায় আচরণই সমর্থনযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে সমাজেরও দায়ি়ত্ব আছে। সমাজ যদি বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় তবে সহজেই সকল অন্যায়ের রোখথাম সম্ভব।

কিন্তু সমস্যা তো সেখানেও। ব্যক্তি থেকেই তো সমাজ। ব্যক্তির চিন্তা যেহেতু স্বচ্ছ নয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই সমাজ মানসও এ বিষয়ে অনুক‚ল নয়। আমাদের সমাজ বিপতœীকের পুনর্বিবাহকে ভালো চোখে দেখে না। বলাই হয়, আগের বউকে ঠিক ভালোবাসত না। ভালোবাসলে শাহজাহানের মতো সেই স্মৃতি বুকে আগলে রাখত। দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা করত না। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মুসলিমের দৃষ্টি কেন শাহজাহানেই থেমে থাকবে? দৃষ্টি কেন আরো প্রসারিত হয় না? সব ব্যাপারে আমাদের নজর তো চলে যাবে সোনার মদীনায়। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই তো আমাদের আদর্শ এবং আদর্শ তাঁর সাহাবীগণও।

উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রা.)-কে তিনি কতই না ভালোবাসতেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। কিন্তু তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি ঠিকই বিবাহ করেছিলেন। আমাদের সেই মহীয়ষী মায়ের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভালোবাসা নিয়ে কি কোনো প্রশ্নের অবকাশ আছে? কি গভীর ভালোবাসাই তিনি জীবনভর তাঁর প্রতি লালন করেছিলেন। এমনকি আম্মাজান হযরত সিদ্দীকা রা. পর্যন্ত সেই ভালোবাসার অনুযোগও করেছিলেন। সুতরাং স্ত্রী বিয়োগের পর পুনর্বিবাহ প্রথমা স্ত্রীর প্রতি বীতরাগের আলামত নয়। এটা একটা প্রয়োজন এবং সমস্যা নিরসনের উৎকৃষ্ট ব্যবস্থা। মরহুমা স্ত্রী যত অনন্যসাধারণই হোক তারপরও এ ব্যবস্থা গ্রহণ অনাকাক্সিক্ষত নয়।

প্রয়োজনের তাগিদে এমন অনেক কাজই করতে হয়, যা আপাতদৃষ্টিতে কারো কাছে ভালোবাসার পরিপন্থী মনে হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে এবং অন্তর্দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে কাজটিকে সেই ভালোবাসার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হবে না। প্রয়োজনের সাথে ভালোবাসার কিসের সংঘাত। প্রয়োজনের খাতিরেই মহানবী (সা.) পুনর্বিবাহ করেছিলেন এবং করেছিলেন তার সাহাবীগণও। কাজেই এটা তাদের সুন্নত। এতে আপত্তির অবকাশ নেই। বরং সুন্নত হিসেবে এ ব্যবস্থাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়া উচিত। সন্তানদেরই উচিত নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বাবাকে পুনর্বিবাহে প্রস্তুত করা। এটা তাদের কর্তব্য। এতে বাবার যেমন বহুবিধ সমস্যার নিরসন হবে, তেমনি তাদের নিজেদের পক্ষেও হবে স্বস্তির কারণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন