আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তাআলার আখেরি রাসূল। তিনি গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ দূত। তাই তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের দাবি অর্থহীন।
কোরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তাঁর জন্য হৃদয়ের গভীরে মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করা এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দুআ করা প্রত্যেক উম্মতের ঈমানী কর্তব্য।
কোরআন মজীদে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নবী (সা.)-এর জন্য দুরূদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তাঁর জন্য দুআ করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর ওপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দুআ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দুরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব : ৫৬)।
এখানে কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তাওফীক দিন। ১. রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছেন : যে আমার ওপর একবার দুরূদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (সহীহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযী ১/১০১)।
অন্য হাদীসে আছে, হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে আমার ওপর একবার দুরূদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। (সুনানে নাসায়ী ১/১৪৫)। অন্য বর্ণনায়, আবু বুরদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হবে। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী : ২২/৫১৩)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকেও দরূদের এই ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ ২/২৬২ : ৭৫৬১)।
২. ফেরেশতারা মাগফিরাতের দুআ করেন। হযরত আমের ইবনে রবীআহ রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি : আমার ওপর দুরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দুরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দুরূদ বেশি পড়বে না কম। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫)।
৩. কিয়ামতের দিন নবীজীর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আবদুললাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন : কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দুরূদ পড়েছে। (জামে তিরমিযী : ১/১১০)। ৪. দোজাহানের সকল মকসুদ হাসিল হবে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসূল (সা.) যিকরুল্লাহর খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দুরূদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দুআর কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দুআর পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দুরূদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসূদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (জামে তিরমিযী : ২/৭২)।
৫. গরিব পাবে সদকার সওয়াব। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দুআয় বলে : এটা তার জন্য যাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। (সহীহ ইবনে হিববান : ৩/১৮৫)।
৬. উম্মতের সালাম নবীজীর নিকট পৌঁছানো হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার যমীনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১)।
৭. দুরূদ বিহীন দুআ আসমান-যমীনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) উপর দুরূদ না পড়বে ততক্ষণ দুআ আসমানে যাবে না, আসমান-যমীনের মাঝে থেমে থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন