বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ ও বেকার যুবকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে জমা নেয়। এভাবে চক্রটি প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও মাহমুদ করিমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তাদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরি করা ভূয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টিসহ অন্যান্য উপকরণ জব্দ করা হয়।
শুক্রবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যেতে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে দুই থেকে তিন লাখ এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের কাছ থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা করে জমা নেয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আসামি মাহবুব ২০০০ সাল থেকে সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার মাধ্যমে কিছু লোক পাঠায়। বিদেশে পৌঁছার পর বিদেশে অবস্থানরত এজেন্ট দিয়ে পুনরায় প্রতারণা করা হয়। তাদের কাজের নামে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়। সেখানে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামীদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোন লাইসেন্স নাই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, মাহবুব উল হাসান এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ১৯৯৩ সালে আল দোসারী এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যায়। মালয়েশিয়াতে সে ৫ বছর অবস্থান করে ১৯৯৮ সালে সে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসে। বাংলাদেশে এসে সে কৃষি কাজ করতে থাকে। স্বল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় অবৈধভাবে ২০০০ সাল থেকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় কোটিপতি হওয়ার আশায় নিজেই অবৈধভাবে একটি অফিস খোলে এবং বিদেশে গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মাহমুদ করিম এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে ২০১২ সালে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চুরির দায়ে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে ৭ মাস জেল খাটে। জামিনে মুক্তি হয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রতারক মাহবুব উল আলম এর সাথে পরিচয় হয়। ২০১৪ সাল থেকে সে স্বল্প শ্রমে অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় মাহবুব উল আলম এর প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা শুরু করে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন