স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিদ্যমান কম মজুরির সুযোগকে মালায়েশিয়া কাজে লাগাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে আয়োজিত ‘লুকিং ইন্টু নিউ অপরচুনিটি-মার্কেটিং মিশন টু বাংলাদেশ’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। মালায়েশিয়া এক্সটারনাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এমএটিআরএডিই) ও মালয়েশিয়া এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান ওমেন এন্টারপ্রেনার অ্যান্ড প্রফেশনাল (উইআইই) যৌথভাবে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উইআইই প্রেসিডেন্ট স্বপ্না দাস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালায়েশিয়ান হাইকমিশনার নূর আশিকি মোহাম্মদ তায়েব ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডবিøউসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমেদ, বাংলাদেশ-মালায়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট এ আর মোহাম্মদ আলমগীর জলিল, উইআইই প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম, এমএটিআরএডিই চেন্নায় ট্রেড কনসাল জুআজিজি জুলকিফলি প্রমুখ।
আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বাজারে মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত অনেক পণ্য রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশ আনতে একদিকে আমদানি শুল্কসহ বিভিন্ন খরচ বহন করতে হয়। অন্য দিকে বাংলাদেশের তুলনায় মালয়েশিয়ার শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় দেশটির পণ্যগুলোর উৎপাদন খরচও বেশি গুণতে হয়। কিন্তু মালায়েশিয়ান সরকার ও ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের দেশে সরাসরি বিনিয়োগ করে, তবে তাদের উৎপাদন খরচ কমবে, পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকবে, পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধিও বেড়ে যাবে। তাই আমাদের দেশে (বাংলাদেশ) বাজার খোঁজার চেয়ে মালায়েশিয়ার উচিত হবে বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দেয়া।
তিনি বলেন, এ জন্য প্রয়োজন দুই দেশের সরকার পর্যায়ে দরকার পণ্য আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক সব ক্ষেত্রে নানাবিধ শুল্কসহ বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করা। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সব ধরণের আইন-কানুন মেনেই আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করা যেতে পারে। মালায়েশিয়া সরকার ও ব্যবসায়ীরা চাইলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাতে শতভাগ আগ্রহী হবেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুল মাতলুব আহমেদ এর প্রস্তাব ও পরামর্শকে সাধুবাদ জানিয়ে মালায়েশিয়ান হাইকমিশনার নূর আশিকি মোহাম্মদ তায়েব বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে আব্দুল মাতলুব আহমেদ যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন, তা সত্যিই চমৎকার। এভাবে চলতে পারলে দুই দেশই ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো এগিয়ে যাবে। তবে এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলতে পারে। ভালো মনে হলে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিতেই পারে। বাংলাদেশ এগিয়ে আসলে আমি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়াকে জানানোর চেষ্টা করব।
বাংলাদেশ উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডবিøউসিসিআই) প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অবদান বাড়ছে। এ ধারা আরো বেগবান করতে পশ্চাৎপদ নারীদের সামনে তুলে আনতে হবে। ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তাদের এ ধরনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে উৎসাহ যোগাতে হবে। আজকের এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য মান কেমন হওয়া উচিত, বা তা কিভাবে বাজারজাত করা যেতে পারে তা জানতে পারে। মালায়েশিয়া ও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ-মালায়েশিয়া চেম্বার অব কামর্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট এ আর মোহাম্মদ আলমগীর জলিল বলেন, এ ধরনের আয়োজনে দুই দেশ ও দেশের পণ্যগত চাহিদা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ জিডিপিতে ৭-এর ঘর অতিক্রম করেছে। বিদেশের সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে জিডিপি গ্রোথকে আরো এগিয়ে নেয়া যায়। কেন না, বাণিজ্যি আয় বাড়লে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব জিডিপিতে পড়ে।
মালায়েশিয়া এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ান ওমেন এন্টারপ্রেনার অ্যান্ড প্রফেশনাল (উইআইই) প্রেসিডেন্ট মৌসুমি ইসলাম বলেন, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে মালায়েশিয়া ও বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন ধরে পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে এক্ষেত্রে দুই দেশেরই কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। এখন সময় এসেছে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে দুই দেশের বাণিজ্য আরো বেশি সম্প্রসারণ ঘটানো।
তিন দিনব্যাপী ওই প্রদর্শনী চলবে আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনী ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সবার জন্য সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন