পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন : তোমাদের কাছে এসেছেন এমন এক রাসূল, যিনি তোমাদের নিজেদেরই লোক। তোমাদের যেকোনো কষ্ট তার জন্য অতি পীড়াদায়ক। তিনি সর্বদা তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত সদয়, পরম দয়ালু। (সূরা তাওবা : ১২৮)। রাসূলের প্রতি আমার মহব্বত কেন হবে না সবচে বেশি, অথচ তাঁর আগমন হয়েছে বলেই তো এই পৃথিবীতে আমার জন্ম-মৃত্যু হয়েছে সার্থক! তিনিই যে আমার আলোর দিশারী! আমার শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক, আমার মুক্তির দূত, আমার নাজাতের জন্য সুপারিশকারী! ইহকাল ও পরকালে আমার মুক্তি ও সফলতার জন্য আমার চেয়েও বেশি চিন্তিত যিনি...! কেন তাঁকে ভালোবাসব না, যাকে ছাড়া আমার এ-কূল ও-কূল দুই-ই ব্যর্থ, আমার চারিধার অন্ধকার?!
আমার প্রাণ উজাড় করা ভালোবাসা কেন হবে না নবীর জন্য, অথচ আমার প্রতি তাঁর ঋণ যে সীমাহীন! তাঁর মাধ্যমেই তো আমি চিনেছি আমার আল্লাহকে। পেয়েছি কুরআন, লাভ করেছি এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও সর্বশ্রেষ্ঠ শরীয়ত! যে দ্বীন আমাদের শিখিয়েছে সভ্য মানুষের মতো চলা। যে শরীয়ত আমাদের দেখিয়েছে ধরণীবক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠার ধারা। কেন ভালোবাসব না তাঁকে, যাকে ভালোবেসেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন?! তাঁকে না ভালোবাসলে আমি কি পাব রাব্বে কারীমের ভালোবাসা?!
তিনি তো তাঁর হাবীবকে উদ্দেশ করে বলেছেন : হে নবী আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাকো তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, চিরদয়াময়। (সূরা আলে ইমরান : ৩১)।
কেন আমার সর্বোচ্চ ভক্তি ও শ্রদ্ধা হবে না তাঁর জন্য, যিনি সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরীর অধিকারী সুন্দরতম মানুষ! স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা যাঁর চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন : আর নিশ্চয়ই আপনি অধিষ্ঠিত আছেন মহান চরিত্রে। (সূরা কলাম : ৪)। আমার নবীকে আমি ভালোবাসি তিনি আল্লাহর হাবীব বলে। আমার নবীকে আমি ভালোবাসি তিনি আমার রাহবার বলে। প্রিয় নবীজীকে আমি ভালোবাসি তাঁর চরিত্র মাধুর্যের জন্য, তাঁর অনুপম আদর্শের জন্য।
নবীকে ভালোবাসি বলে আমি তাঁকে অনুকরণ করতে চাই সর্বান্তকরণে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। নবীকে ভােলাবাসি বলে আমি ভালোবাসি তাঁর সুন্নাহকে। আমার কথা ও কাজ সবকিছু করতে চাই তাঁর ঢঙে, তাঁর মতো ভঙ্গিতে এবং তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে। কারণ আমি শুনেছি আমার নবী বলেছেন : তুমি যাকে ভালোবেসেছ পরকালে তাঁর সঙ্গেই থাকবে। (সহীহ বুখারী : ৬১৭১)।
নবীকে ভালোবাসি বলে আমি পছন্দ করি, যাকে ও যা-কিছু তিনি পছন্দ করেন এবং অপছন্দ করি, যাকে ও যেসব কিছুকে তিনি অপছন্দ করেন। কারণ মানুষ তার প্রিয় ব্যক্তির রুচি ও পছন্দই মেনে চলে। নবীজীর প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা আমার রক্তধারায় প্রবাহিত বলে আমি সংবেদনশীল হই তাঁর প্রতি যে কোনো অসম্মানজনক আচরণে, তাঁকে নিয়ে অমূলক ও অবমাননাকর মন্তব্যে। নবীর মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে আমার জীবন চলে যাওয়াও সহজ। কিন্তু দেহে প্রাণের স্পন্দন বাকি থাকতে সহ্য করা সম্ভব নয় তাঁর প্রতি সামান্যতম অসম্মান ও অসদাচরণ।
যায়েদ ইবনুদ দাছানা (রা.) কাফেরদের হাতে বন্দি হবার পর তাকে হত্যার আগে আবু সুফিয়ান বলেছিল, তুমি কি এটা পছন্দ করবে যে, তোমার জায়গায় মুহাম্মাদ, তার শিরñেদ করা হচ্ছে আর তুমি রয়েছ তোমার বাড়িতে নিরাপদ? যায়েদ জবাব দিয়েছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি তো এটাও মানতে পারি না যে, মুহাম্মাদ (আমার জায়গায় নয়) তাঁর জায়গায়ই থাকবেন এবং একটি কাঁটাও বিদ্ধ হবে তাঁর শরীরে, অথচ আমি থাকব আমার ঘরে নিরাপদ-নিরুপদ্রব। (মা‘রিফাতুস সাহাবা, আবু নুআইম ৩/১১৮২)।
মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে নবীজীর এই প্রিয় সাহাবী যা বলেছিলেন তার মর্মকথা : ‘আমি নিরাপদ থাকব আর নবীজী সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হবেন, এটা আমি কখনোই মেনে নেব না...।’ মুমিন হিসেবে আমারও অভিব্যক্তি তা-ই। আমার নবীপ্রেম আমার ঈমান। আমার প্রতি আমার আল্লাহর নির্দেশ। আমার ঈমান রক্ষায় আমি যেমন সচেতন, তেমনি সোচ্চার নবীজীর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায়।
নবীকে ভালোবাসি বলেই তাঁর বিধান ও ফরমান এবং তাঁর নির্দেশ ও নির্দেশনার মূল্য আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। তাঁর আনীত দ্বীন ও শরীয়তের চর্চা ও বাস্তবায়ন এবং এর প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবন বিলাতে তাই আমি ভালোবাসি। এবং জীবনের শেষ পর্যন্ত তাতেই যেন মগ্ন থাকি, সেই কামনা করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন