শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবীজীর প্রতি কৃতজ্ঞতা নবীজীর প্রতি ভালোবাসা-১

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১৫ অক্টোবর, ২০২২

মৃত্যু পরবর্তী জীবনই মানুষের আসল জীবন, একথা মুমিনমাত্রই জানে এবং মনেপ্রাণে বিশ^াস করে। কারণ সে জীবনের পরে কোনো মৃত্যু নেই। সে জীবনের কোনো সমাপ্তি নেই। সে জীবন সুদীর্ঘ অসীম। কূল কিনারাহীন। সেই জীবনে সফলতা পেতে হলে এই জীবনে কিছু করণীয় আছে। বরং এই সংক্ষিপ্ত জীবন পুরোটাই সেই জীবনের জন্য। কিন্তু কীভাবে, কী উপায়ে, কী কর্মে লাভ করা যাবে সেই জীবন? কী বিশ্বাসে, কী চেতনায়, কী কর্মপন্থায় পাওয়া যাবে সেই সফলতা?

মানুষকে সেসব জানানোর জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। রাসূল পাঠিয়েছেন। কিতাব নাযিল করেছেন। এরপর বলেছেন, সেই নবী ও রাসূলের আনুগত্য করতে। সেই কিতাব ও বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে। মা-বাবার মাধ্যমে তিনি আমাদের অস্তিত্ব দিয়েছেন। নবী-রাসূলদের মাধ্যমে দিয়েছেন সফলতার দিশা। তাই মা বাবার প্রতি যেমন সদাচারের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি নবী-রাসূলদের প্রতি দিয়েছেন ভক্তি, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের নির্দেশ।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে যত নবী পাঠিয়েছেন সবার প্রতিই আমাদের ঈমান ও বিশ্বাস রয়েছে। সবার প্রতিই রয়েছে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা। আর আনুগত্য এবং পূর্ণ আনুগত্য রয়েছে শুধু হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) এর প্রতি। কারণ তিনিই আমাদের নবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের নবী। তিনি খাতামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন। তিনি সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়া রাহমাতুল লিল আলামীন।
তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়েত দিয়েছেন। অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে এনেছেন। তাঁর মাধ্যমেই আমরা লাভ করেছি আমাদের রবের পরিচয়। আমাদের খালিক ও মালিকের পরিচয়। তাঁর মাধ্যমেই লাভ করেছি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার সন্ধান। তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা যেমন আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, তেমনি সুস্থ বিবেকেরও যৌক্তিক দাবি।

ইতিহাস সাক্ষী, এই পৃথিবী একমসয় ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অন্যায় অনাচার, জুলুম নির্যাতন ও মূর্খতা বর্বরতায় পূর্ণ ছিল। আল্লাহ তাআলা সেই সময় হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) কে পাঠালেন। তাঁর মাধ্যমে পুরো পৃথিবীকে হেদায়েতের দিশা দিলেন। অন্ধকার দুনিয়াকে প্রকৃত আলোর সন্ধান দিলেন। নির্যাতিত চরাচরকে দিলেন ন্যায় ও ইনসাফের সুদৃঢ় বার্তা। মানুষকে শেখালেন সত্যিকারের মনুষ্যত্ব। দীক্ষা দিলেন মানবতা, সভ্যতা, বোধ ও বিশ্বাসের শুদ্ধতা, চারিত্রিক উৎকৃষ্টতা ও পবিত্রতা এবং সুস্থ ও সফল জীবন লাভের। এবং বললেন : নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ-এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। (সূরা আহযাব : ২১)।

এই উত্তম আদর্শ অনুসরণের ফলে বিরাট এক মানব-কাফেলা পরিণত হয়েছে শ্রেষ্ঠ মানবে। ঘোর অবিশ্বাসী পরিণত হয়েছে একনিষ্ঠ বান্দারূপে। নিষ্ঠুর জালিম পরিণত হয়েছে বিনয়ী সেবকরূপে। এ ধারা অব্যাহত থেকেছে সুদীর্ঘ কাল। এখনো আছে। এই আদর্শ লাভ করার পর নষ্ট ভ্রান্ত সমাজ পরিণত হয়েছে সুখ সাফল্যের সবুজ কাননে। মানুষ লাভ করেছে দুনিয়াবী জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তি। ইতিহাস এ সবই দেখেছে এবং সংরক্ষণ করেছে।

নবী (সা.) এর বাণী, শিক্ষা, ইশারা ও নির্দেশনা এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর জীবনাচার অনুসরণই হলো নবীজীর প্রতি আনুগত্য। আর সেই আনুগত্যই হলো আল্লাহ তাআলার প্রতি মহব্বতের প্রকাশ। একথাই ইরশাদ হয়েছে কুরআন মাজীদে। আল্লাহ তাআলা বলেন : (হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান : ৩১)।

নবী (সা.) এর আনুগত্য যে ইসলামের প্রধান বিষয়, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ইসলাম হলো আল্লাহ তাআলার মনোনীত একমাত্র দ্বীন। আর সেই দ্বীন জানার একমাত্র মাধ্যম হলেন হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেহেতু তিনি খাতামুল আম্বিয়া, সর্বশেষ নবী, তাঁর মাধ্যমেই অহীর ধারা সমাপ্ত হয়েছে, তাঁর উপরই সর্বশেষ আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে, তাঁকেই দান করা হয়েছে সর্বশেষ দ্বীন ও শরীয়ত। সুতরাং তাঁর আনুগত্য ছাড়া কীভাবে সম্ভব দ্বীন মানা? তাঁর অনুসরণ ছাড়া কীভাবে সম্ভব শরীয়তের বিধান পালন করা?
এই আনুগত্য-অনুসরণের জন্যই প্রয়োজন তাঁর প্রতি ভক্তি মহব্বত ও ভালবাসা। বরং সর্বোচ্চ আবেগ ও অনুরাগ। কারণ শ্রদ্ধা-ভালবাসাপূর্ণ আনুগত্য আর শ্রদ্ধা-ভালবাসাহীন আনুগত্য- দুয়ের মাঝে বিস্তর ফারাক। অনেক অনেক পার্থক্য। বরং বাস্তবতা হলো, মহব্বতহীন আনুগত্য কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য হতে পারে না। শ্রদ্ধা ভক্তিহীন আনুগত্য কোনোভাবেই যথাযথ আনুগত্য হতে পারে না। এটা ব্যক্তিমাত্রই জানে এবং স্বীকার করে। সুতরাং তাঁর আনুগত্য যেমন আবশ্যক, তেমনি আবশ্যক তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন