শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবীজির প্রতি কৃতজ্ঞতা, নবীজির প্রতি ভালোবাসা-২

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৬ অক্টোবর, ২০২২

পিয়ারা নবী রাসূলে আকরাম (সা.) এর প্রতি ভক্তি ভালোবাসা একেবারে সাধারণ বিবেকও খুব সহজে মেনে নেবে। কারণ যেসব কারণে মানুষ কাউকে ভালোবাসে তার সবকিছু সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে তাঁর মাঝে। গুণ, সৌন্দর্য, মর্যাদা, ক্ষমতা ও কৃপা- কোনোদিক থেকে আছে কেউ তাঁর চেয়ে বেশি? অতএব যদি কেউ প্রবৃত্তির প্ররোচনায়, শয়তানের ধোঁকায় কিংবা অন্য কোনো কারণে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাড়া অন্য কাউকে বেশি ভালোবাসে, অন্য কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয়, সেটা হবে তার মহা ক্ষতির কারণ। যা তার ইহ-পরকালীন জীবনকে বরবাদ করে দেবে। উভয় জীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সেজন্যই আল্লাহ তাআলা খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন : (হে নবী!) আপনি বলুন, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ, যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের সেই ব্যবসা, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং বসবাসের সেই ঘর, যা তোমরা ভালোবাস, তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আল্লাহ অবাধ্য লোকদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না। (সূরা তাওবা : ২৪)।

এখানে খুব দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসা দুনিয়ার সকল বিষয় ও বস্তু অপেক্ষা বেশি হওয়া আবশ্যক। হাদীস শরীফে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিভিন্ন প্রসঙ্গে, বিভিন্ন শব্দ-বাক্যে একথা স্পষ্ট করেছেন যে, নবীজীর প্রতিই হতে হবে সর্বোচ্চ মহব্বত ও ভালোবাসা। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় না হব। (সহীহ বুখারী : ১৫)।

আরেক হাদীসে ঈমানের স্বাদ লাভ করার প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির মাঝে তিনটি বিষয় থাকবে, সে এর মাধ্যমে ঈমানের স্বাদ লাভ করতে পারবে। তন্মধ্যে প্রথম বিষয়টিই হলো : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অন্য সকল ব্যক্তি ও বস্তু অপেক্ষা সবচে বেশি প্রিয় হবে। (সহীহ বুখারী : ১৬)।

আরেকটি হাদীসে এসেছে অত্যন্ত মমতাপূর্ণ উপস্থাপনা। বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : প্রত্যেক মুমিনের ক্ষেত্রেই আমি দুনিয়া ও আখিরাতে অন্যসকল মানুষ অপেক্ষা বেশি ঘনিষ্ঠ বা নিকটতমজন। একথা বলার পর কোরআন মাজীদের সূরা আহযাবের ৬ নং আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করেন। বলেন : তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পড়ে দেখ; যে আয়াতের অর্থ : ‘মুমিনদের পক্ষে নবী তাদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ।’ (সহীহ বুখারী : ৪৭৮১)।

নবী (সা.) এর প্রতি মহব্বতের প্রসঙ্গে এসব আয়াত-হাদীস না থাকলেও কেবল বিবেকের দাবি থেকে তাঁর প্রতি সবচে বেশি ভালোবাসা পোষণ করা উচিত ছিল। কারণ, তাঁর চেয়ে বেশি অনুগ্রহ আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই আমাদের ওপর। তাঁর মাধ্যমে দুনিয়া আখেরাতের যত প্রাপ্তি, এর ক্ষুদ্রতম অংশও নেই অন্য কারো মাধ্যমে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার পর তাঁর প্রতিই সবচেয়ে বেশি মহব্বত থাকার কথা।

এমনিভাবে তাঁর আনুগত্যেই যখন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা, তাঁর মাঝেই যখন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ, তখন একান্ত ভালোবাসা ও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা কেবল তাঁর প্রতিই নিবেদিত হওয়া উচিত। হৃদয়ের গভীর থেকে, জীবন-উৎসর্গ সেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অটুট রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

উপরন্তু কোরআন মাজীদের একাধিক আয়াতে তাঁর মহব্বতের নির্দেশ রয়েছে। হাদীস শরীফের বহু বর্ণনায় তাঁর প্রতি মহব্বতের তাগিদ রয়েছে। তাঁর মহব্বত আমাদের জীবন ও আমাদের প্রিয় সকল ব্যক্তি-বস্তুর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা রয়েছে এমনকি তাঁর মহব্বত আমাদের ঈমানের মানদ- এবং তাঁর মহব্বতে আমাদের ইহ পরকালীন সফলতা!

সুতরাং হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয়গুলো পূর্ণ করে দিন তাঁর মহব্বতে। জীবন উজ্জ্বল করে দিন তাঁর ভালোবাসায়। চির কামিয়াবী ও সফলতা দান করুন তাঁর প্রতি উৎসর্গিত করে। সালাওয়াতুল্লাহি ওয়াসালামুহু আলাইহি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন