ইলিশ আরনে ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞার ১০ অতিবাহিত হলেও দক্ষিাঞ্চলের ৩ লক্ষাধিক জেলে পরিবারের মধ্যে যে ৯ হাজার ১৮২ টন চাল বিতরনের কথা, তা অনেক স্থানে এখনো শুরু হয়নি। তবে গত ১০ দিনে পেটের টানে মৎস্য আহরনে নদীতে নেমে এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩শ জেলের ৩ মাস থেকে এক বছরের করাদন্ডাদেশ নিয়ে জেলখানায় ঠাই হয়েছে। জরিমানা হয়েছে আরো বিপুল সংখ্যক জেলের। জেলে নৌকা ও ট্রলর সহ বিপুল সংখ্যক বৈধ ও অবৈধ জাল বাজেয়াপ্ত সহ পুড়িয়েও ফেলা হয়েছে। এসব অভিযোগ বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি উপজেলার বেকার জেলেদের।
মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নির্বিঘœ ও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে এবার ৭ অক্টোবর রাতের প্রথম প্রহর থেকে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার প্রজনন এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরন সহ সারা দেশে ইলিশ আহরন, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ রয়েছে। এসময়ে ইলিশ আহরনে নির্ভরশীল দেশের ৩৭টি জেলার ১৫৫টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮৭ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে সর্বমোট ১৩ হাজার ৮৭৩ টন চাল বিতরনের জন্য মঞ্জুর করেছে সরকার। এরমধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগেরই ৩ লাখ ৬ হাজার ১২০ জেলে পরিবারের জন্যই বরাদ্ব রাখা হয়েছে ৯ হাজার ১৮৪ টন চাল। সারা দেশে আহরিত ইলিশের প্রায় ৭০ ভাগই পাওয়া যায় দক্ষিণাঞ্চলে।
গত ৪ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মৎস্য শাখাÑ২ থেকে এসব চালের বরাদ্বপত্র প্রেরন করার ১২ দিন পরেও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক উপজেলাতেই এখনো চাল বিতরন শুরু হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। তবে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য দপ্তরের দায়িত্বশীল মহল বিষয়টির সাথে ভিন্নমত পোষন করেছেন। তাদের মতে, চালের বরাদ্ব হলেও জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা হয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে জেলেদের কাছে পৌছতে কম করে হলেও এক সপ্তাহ সময় লাগে। তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ১০ দিন ও বরাদ্ব প্রদানের ১২ দিন পরেও জেলেদের কাছে চাল না পৌছার বিষয়টি খুজে যত দ্রুত সম্ভব তা বিতরনের কথা বলেছেন কতৃপক্ষ।
খোদ বরিশাল সদর উপজেলার ৯ নম্বর টুংগীবাড়িয়া ইউনিয়নের নিবন্ধিত জেলে ইউনুস মাঝি নিষেধাজ্ঞার ৯ দিন পরেও সরকারী চাল না পাবার কথা জানিয়ে পরিবার নিয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপনের কথা বলেছেন।
একই ইউনিয়নের ফোরকান গাজী বলেন, ‘যহন ইলিশ ধরা বন্ধ থাহে তহন আপনারা আইয়্যা জিগান মোরা মাছ ধরি ক্যা। কিন্তু অবরোধ দেওয়ার আগে সরকার মোগে যে চাউল বরাদ্দ দেছে তা পাইছি কিনা কোন খোঁজ লননা। খালি মাছ ধরার সময় আইলেই আমাগোরে দেহি। তিনি বলেন, দেনার শেষ নাই, ঘরে যা আছেলে সব শেষ, এহন খামু কি। দুই হপ্তা গেলেও সরকার গোনে মোরা কিছু পাই নাই। পেডের দায় বাধ্য হইয়া মাছ ধরতে গেছি, পুলিশ আইয়া জাল লইয়া গেছে।’
সব জেলেরই একই অভিযোগ নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন শেষেও এখনো কেন তাদের ঘরে চাল পৌছায়নি। ফলে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই জাল নিয়ে নদীতে নামছে। চাল না পাওয়ার ব্যাপারে সদর উপজেলার ৯ নম্বর টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নূর হোসেন মামুন বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দের চালের চিঠি আমাদের হাতে এসেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যেই বিতরণ শুরু হবে।
বরিশাল জেলা মৎস্য দফতর জানিয়ছে, জেলার দশটি উপজেলায় মোট ৭৫ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ৫১ হাজার ৭ শ' জন জন্য চাল বরাদ্ব হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন পার হলেও এখনও জেলার সকল উপজেলায় সে চাল বিতরণ শুরু হয়নি। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদী উপজেলায় ইতিমধ্যে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
এদিকে, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের রোববার পর্যন্ত ১০ দিনে বহু সংখ্যক জেলেদের কারাদ-, জাল উদ্ধার এবং ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে গিয়ে জেলেদের হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশ সহ মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি এই অভিযানকে কেন্দ্র করে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষে জেলের ট্রলারে আগুন দেয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও মা ইলিশ নিধন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। তবে জেলেদের অভিযোগ পরিবার বাঁচিয়ে রাখতে তারা চোরা মাছ শিকারীতে পরিনত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, অভিযানের গত ১০দিনে ইলিশ শিকারের দায়ে ৬ জেলায় প্রায় সাড়ে ৩শ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ কোটি টাকা মূল্যের ৩১ লাখ ঘন মিটার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন জানান, এক হিজলা উপজেলাতেই ৩১২ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন