দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় প্রায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সংস্থার উপ-পরিচালক সেলিনা আখতারের ‘পারমিশন মামলা’র প্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জেলা জজ এএইচএম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া এ আদেশ দেন। এর আগে চলতিবছর জানুয়ারি প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মামলায় চার্জশিট দাখিল হয়। মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ‘দ্য ক্রিমিনাল ল’ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৪৮ সনের ৪ ধারা মতে চলতিবছর ৫ জানুয়ারি নালিশা সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন জানানো হয়।
ক্রোকাদেশে আদালত বলেন, তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকারে ন্যাস্ত হওয়া সত্ত্বেও রাজউকের তৎকালিন কতক কর্মকর্তা অন্যদের সাথে পরষ্পর যোগসাজসে সরকারের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব বিশ্বাস লঙ্ঘন ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণে নালিশা প্লটটি বিভাজন পূর্বক বিভিন্ন জনের নিকট বরাদ্দ প্রদান করেন-মর্মে রাষ্ট্রপক্ষ যে মামলা আনয়ন করের্ছেন তা আপাত দৃষ্টে অগ্রাহ্য করা যায় না। বরং এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রাইমাফেসী ও যুক্তিযুক্ত মামলা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আদেশে উল্লেখ করা হয়, কোনো পক্ষ তার প্রতারণার ফসল নিজে ভোগ করার অধিকারী হবে না। প্রতিপক্ষগণের মধ্যে কেউ কেউ ‘বোনাফাইড পারচেজার ফর ভ্যালু উইদাউট নোটিশ’ হয়ে থাকতে পারেন। তবে এ আদালত এ বিষয়ে এ মুহূর্তে কোনো উপযুক্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করতে আইনগত ক্ষমতাবান নহেন। একমাত্র বিচারাধীন আদালত কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ হতে পারে। আদেশে আদালত মর্মে সিদ্ধান্ত দেন যে, এ পারমিশন মিস মোকদ্দমাটি ৪-৮ নং প্রতিদ্বন্দ্বীতা প্রতিপক্ষগণের বিরুদ্ধে দোতরফাসূত্রে এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষগণের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে মঞ্জুর করা হলো। এতদ্বারা তফসিল বর্ণিত সম্পত্তি দ্য ক্রিমিনাল ল’ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৪৮ সনের ৪ ধারা মতে ক্রোকাবদ্ধ করার আদেশ হলো।
এদিকে দুদক সূত্র জানায়, রাজউক নিয়ন্ত্রণাধীন অন্তত: ৫ শ’ কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাসের অভিযোগে ২০১৪ সালে একটি অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। অনুসন্ধানের নামে একের পর এক কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। এক পর্যায়ে অনুসন্ধানটি ‘পরিসমাপ্তি’র সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তৎকালিন কমিশন অভিযোগটি পুন:অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় উপ-পরিচালক সেলিনা আখতারকে। গভীর অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি। চার বছরের বেশি তদন্ত শেষে অনুসন্ধানের ৮ বছর পর চার্জশিট দেন তিনি।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, রাজউকের তৎকালিন পরিচালক আব্দুর রহমান ভ্ঞুা (এ আর ভুঞা), তৎকালিন চেয়ারম্যান মো: হুমায়ুন খাদেম,প্লটের বর্তমান দখলদার আমির হোসেন দেওয়ান, একেএম সহিউজ্জামান, তার স্ত্রী বেগম কামরুন্নেছা, মো: মোশাররফ হোসেন, মো: জাকারিয়া চৌধুরী এবং মো. মশিয়ার রহমান। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯/২০১ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, ১৯৬৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি) ঢাকার গুলশান মডেল টাউনের ৮৩ নম্বর রোডের ৬ নম্বর প্লটটি (৪৮.৬০ শতক) পিপলস জুট মিলের নামে লিজ বরাদ্দ দেয়। খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত এ মিলটির মালিক ছিলেন প্রিন্স করিম আগা খান। পিপলস জুট মিল বরাবর প্লটটি বরাদ্দ দেয়ার আগে এটি জনৈক কমান্ডার জাহিদির নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। পরে জাহিদির বরাদ্দ বাতিল করে গুলশান মডেল টাউনের রোড-৮৩, এনইজি-৬ নম্বর প্লটটি পিপলস জুট মিলকে বরাদ্দ দেয় রাজউক। ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্রে ধারাবাহিকভাবে জাহিদি ও পিপলস জুট মিলসের নাম রেকর্ডভুক্ত ছিল। সেই রেকর্ড খারিজ না করেই ১৯৯২ সালে তড়িঘড়ি করে ৪ জনের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেয় রাজউক। পরে ভূমি অফিসের নথিও গায়েব করে দেয়া হয়। বর্তমানে প্লটগুলোর হোল্ডিং নম্বর-২৮, ২৮(এ), ২৮(বি), ২৮(সি) হিসেবে নামজারি রয়েছে। আসামিরা পরষ্পর যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্লটগুলো আত্মসাত করেন। আত্মসাতকৃত সম্পত্তির ওপর এখন নির্মাণ করা হয়েছে ৪টি বহুতল ভবন। এর ফলে সরকারি এই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে ক্রোকাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেন সংস্থার সচিব মো: মাহবুব হোসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন