শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহানবীর নির্দেশিত পথে নতুন সাম্রাজ্য

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দ্বীন প্রচারে নবী করীম সা.-এর মৌলিক কর্মসূচি পবিত্র কোরআন যেভাবে বর্ণনা করেছে তাতে দেখা যায় যে, তিনি আল্লাহর কালাম মানুষের মধ্যে প্রচার, এর পাঠ ও শিক্ষাদান, আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মানুষকে শিক্ষা দেয়া এবং তাদের যাবতীয় ত্রুটি ও কলুষ থেকে মুক্ত এবং পবিত্র করা। এর বাস্তব নমুনা মহানবীর নবুওয়াতের দায়িত্বপূর্ণ তেইশ বছর জীবনে আমরা দেখতে পাব। এখানে তিনি মূলত মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনার কাজ করেছেন। হীন ও নিকৃষ্ট বহু মানুষকে মানবেতিহাসের আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ মানুষরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই নৈতিক বিপ্লব একটি সমাজ ও বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে।

নবী করীম (সা.) আল্লাহর বাণী মানবজাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন। দ্বীন কায়েম করেছেন। সকল মিথ্যা ইলাহের পতন ঘটিয়ে সত্য একমাত্র ইলাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশ্বাসকে মানুষের মনে গ্রথিত করেছেন। সকল দ্বীনের ওপর আল্লাহর হেদায়েত এবং দ্বীনে হককে বিজয়ী করেছেন। যে কাজটির জন্য আল্লাহ তাকে নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছেন। কোরআনের ভাষায় : তিনিই তার রাসূলকে পাঠিয়েছেন হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ, সকল দ্বীনের ওপর তাকে বিজয়ী করার জন্য। (সূরা তওবা : ৩৩; সূরা ফাতহ : ২৮; সূরা সাফ : ০৯)।

আল্লাহর সেই প্রাচীন মিশন যা চালু রাখার জন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, এর চূড়ান্ত ও পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে শেষ নবীর সংগ্রাম ও সাধনা। তার শিক্ষা ও আদর্শ কালজয়ী ও চিরন্তন। তিনি মহান নীতি ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তাআলা কোরআন শরীফে বলেছেন : নিশ্চয়ই আপনি প্রতিষ্ঠিত আছেন মহান নীতি ও চরিত্রের ওপর। (সূরা ক্বলাম : ০৪)।

আল্লাহর শেষ কিতাবের ধারক এবং শেষ নবুওয়াতের বাহক হিসেবে তিনি মানবজাতির সামগ্রিক জীবনে বিপ্লব সাধন করেছেন। এত প্রভাবশালী কোনো বিপ্লব এর আগে বিশ্বে সংঘটিত হয়নি। যার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত তাঁর তেইশ বছরের জীবন সাধনা। সাহাবায়ে কেরামের জীবনের অবিশ্বাস্য ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জন্মভূমি মক্কা থেকে উৎপীড়ন ও বিতাড়নের পর কয়েক বছরের মাথায় সম্মিলিত শত্রুদের বাধা উপেক্ষা করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং মহাবিজয় লাভ। নগণ্য শক্তি নিয়ে বিশ্বাস ও নীতি-আদর্শের বলে তিনি তার চারপাশকে জয় করে নেন।

অনুপম মানবিক আদর্শ চরিত্রের দ্বারা তিনি চিরদিনের জন্য তার রেখে যাওয়া পৃথিবীকে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে নেন। ব্যবহারিক জীবনে আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন ও মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর হাতে ১০ বছর এবং তৎকর্তৃক সূচিত সাম্রাজ্যব্যবস্থা, শাসন ও বিচার, উন্নয়ন ও কল্যাণ নিখুঁতভাবে তাঁর কর্মপদ্ধতির আলোকে অন্তত ৩০ বছর অব্যাহত থাকে। এরপর একই দাওয়াত ও প্রেরণা নিয়ে তাঁর উম্মতরা কম-বেশি ৫০ বছরের মধ্যে অর্ধেক পৃথিবী জয় করে নেয়। আর সামান্য বড় ফ্রেমে দৃষ্টি রাখলে দেখা যাবে, নবী করীম (সা.)-এর ওফাতের শতাব্দীকালের ভেতরেই নতুন এই শক্তি প্রায় গোটা বিশ্বই হয় জয় করে নেয় অথবা কঠিনভাবে প্রভাবিত করে।

বিশ্বনবী (সা.)-এর মিশন সফলভাবে সমাপ্ত হয়। আল্লাহ তাঁর শেষ নবীর সামগ্রিক সাফল্য ও বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামকে পূর্ণতা, বৈশ্বিক রূপ, চিরস্থায়িত্ব দান করেন। একমাত্র গ্রহণযোগ্য, মনোনীত ও সত্য দ্বীনের মহান এবং শ্রেষ্ঠ পয়গাম্বর হিসেবে বিশ্বনবী (সা.) অতুলনীয় ব্যক্তি। একই সাথে যিনি একটি কালজয়ী ধর্ম ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার প্রবর্তক। পাশাপাশি তিনি অভিন্ন বিশ্বাস ও জীবনবোধ ভিত্তিক একটি বৈশ্বিক জাতি, মিল্লাত তথা উম্মাহর স্থপতি। তিনি একটি নজিরবিহীন উন্নত মানবিক সভ্যতার পুরোধা। ব্যক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্র শিক্ষা সংস্কৃতি অর্থ ও আধ্যাত্মিকতার যাবতীয় ব্যবস্থা সংস্কারে তাঁর প্রভাব ও অবদানের শ্রেষ্ঠত্ব সুপ্রমাণিত।

নবী করীম (সা.)-এর সময়ে তাঁর সাম্রাজ্য কয়েক লক্ষ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে স্থাপিত হয়। হযরত আবু বকর (রা.)- এর যুগে এ ধারা অব্যাহত থাকে। হযরত উমর রাযি. এর সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্য পূর্বে পামিরের উঁচু অঞ্চল, পশ্চিমে আফ্রিকার বিশাল মরুভূমি, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর ও দক্ষিণে ভারতসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়। ফলে পৃথিবীর সাড়ে বাইশ লক্ষ বর্গমাইল (৩৬ লাখ ২১ হাজার বর্গ কিলোমিটার) এলাকাজুড়ে ইসলামী সাম্রাজ্য তথা শরীয়াভিত্তিক অর্থ, রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। যে দ্বীন ও শরীয়তে রয়েছে বান্দাদের জন্য হেদায়েত, রহমত, শান্তি ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি। এ সীমানার ভেতর আল্লাহর বান্দাদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার সাথে জীবনযাপন করার এবং নির্বিঘ্নে পূর্ণাঙ্গ শরীয়া পালনের সুযোগ লাভ হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন