অসন্তোষ, গৃহদাহ ছড়িয়ে পড়ছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগে। এমন গৃহদাহে অতীতে পুড়েছিল সিলেট বিএনপি। বিএনপি’র মতো একই ব্যাধিতে পতিত হচ্ছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। দল সরকারে দীর্ঘসময় থাকায়, নেতারা নিজেদের ক্ষমতা এখন কেন্দ্রিভূত করছেন ব্যক্তিস্বার্থে। নিজেদের ব্যক্তি পারফরমেন্স জাহির করছেন দলের নেতাকর্মীদের উপর। চরকি ঘুরিয়ে নিজস্ব বলয় শক্তিশালী করার পাঁয়তারা এখন মিশন ভিশনে পরিণত হয়েছে তাদের। এ নিয়ে চরম অসন্তোষ এখন দলের নেতৃত্বে।
জানা যায়, মহানগর আ. লীগের চলমান ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে সেই অসন্তোষ এখন প্রকাশ্যরূপ নিয়েছে। দলের সুসময়ে যে দূর্বল নেতৃত্ব তৈরী হয়, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে টের পাচ্ছেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে মহানগর আ. লীগের সেক্রেটারী অধ্যাপক জাকিরের অন্যায়, অনৈতিক, নেতৃত্বে আত্মীয়করণে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন তারা। গত ১০ অক্টোবর রাতে তার নিজ এলাকার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা নিয়ে নাজেহাল হয়েছেন তিনি। এমনকি কমিটি ঘোষণা করেই দৌঁড়ে পালিয়ে নিজের ইজ্জত রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও করেছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। কমিটি ঘোষণা নিয়ে পরিস্থিতি বেসামাল হওয়ায়, সম্মেলন স্থলেই কমিটি স্থগিত করতে বাধ্য হন জেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ।
২৫ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে সেক্রেটারী জাকিরের বিরুদ্ধে। ওই ওয়ার্ডেও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ্ও সিসিক কাউন্সিলর তাকবির হোসেন পিন্টু বলেন, মহানগর সেক্রেটারী তৃণমূলের মতামত না নিয়ে পছন্দের লোকদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করেছেন। কমিটি গঠনে ভোটের কোন প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ করে ভোটের পক্ষে মত দেন তিনি। এ সময় বিরোধীতা করলে বাইরে গিয়ে তার পছন্দের দুইজনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন তিনি।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ খালাতো ভাইকে সেক্রেটারী বানাতে নানা পন্থা অবলম্বন করেন অধ্যাপক জাকির। সে কারণে তার উপর ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তার বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ তোলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) আহমদ হোসেনের কাছে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এদিকে, গত এক মাস ১৬ দিনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ ওয়ার্ড কমিটি গঠন হয়েছে। এই ওয়ার্ড কমিটি গঠনে একক কর্তৃত্ব দেখিয়ে যাচ্ছেন সেক্রেটারী জাকির। কমিটি গঠনে দলের শীর্ষ কারো মতামত নিচ্ছেন না। নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডে সিলেট মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আপন দুই ভাই পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ দুটি পদ। তারা হলেন- ২১ নম্বর ওয়ার্ডের লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত কুনু মিয়ার ছেলে মো. মঈনুল ইসলাম মঈন ও তার আপন ভাই খায়রুল ইসলাম খায়ের। এর মধ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. মঈনুল ইসলাম মঈন সদ্য মনোনীত হয়েছেন।
অপরদিকে, তার আপন ভাই খায়ের নির্বাচিত হয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে। ব্যতিক্রমী এ ঘটনা নিয়ে সিলেট মহানগরীর রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করছেন- একই ঘরে দুই দলের শীর্ষ পদ চলে গেলে দুই দলের মধ্যেই ওয়ার্ডে কি আর কোনো যোগ্য ব্যক্তি নেই ? বিষয়টিকে ‘পরিবার কেন্দ্রীক ওয়ার্ড রাজনীতি’ বলেও উল্লেখ করেছেন অনেকে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, সামনে মেয়র নির্বাচন, এই সাথে রাজনীতির হালচালে অনেকটা অস্বস্থিতে শাসক দল। তাই বিরোধী দলের সাথে একটা আঁতাত রাজনীতি গড়ে তুলছেন আ. লীগের নেতারা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে। সে কারণে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিতর্কের কমিটি হচ্ছে। গঠিত প্রতিটি কমিটিতে মহানগর সেক্রেটারী বির্তকিত হস্তক্ষেপ চরমে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন মহানগর আ. লীগের একাধিক নেতা। এছাড়া সদর উপজেলার শাহ খুররুম ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত রয়েছেন মহানগর আ.লীগের সেক্রেটারী অধ্যাপক জাকির। সেখানে শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রিন্সিপাল পদে পদায়নের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন জাকির। সূত্র মতে, বির্তক রয়েছে তার একাডেমিক সার্টিফিকেট নিয়ে।
সম্প্রতি স্মরণকালের বন্যার মুখোমুখি হয় সিলেট। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষেদগার করে বির্তকে পড়েছিলেন তিনি। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে সিলেট সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর বাঁধার মুখে পড়েন তিনি। সবমিলেয়ে তার কারণে থিতে হয়ে পড়েছে সিলেট মহানগর আ. লীগের সার্বিক কার্যক্রম। কারণ জাকিরের স্বেচ্ছাচারী আচরনে অতিষ্ট পদস্থ নেতাকর্মীরা।
এদিকে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা গতকাল জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নিজের মতো করে মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সম্মেলন ও কাউন্সিলর করছেন। কারও মতামতকে প্রাধান্য দিচ্ছেন না তিনি। একতরফাভাবে সব করার কারণে এরই মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মাস খানেক আগে নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সম্মেলন করতে গিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে করে উপস্থিত থাকা নেতাকর্মীরা বিব্রত।
এ বিষয়ে মহানগর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে, একটি বৈঠকে আছেন বলে জানান তিনি। পরে কথা বলার অনুরাধ করেন জাকির।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন