আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকবে না বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যে বেজায় নাখোস আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ছাড়া বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ায় ইচ্ছাকে উচ্ছাভিলাসী, অগণতান্ত্রিক ও ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীনরা। আগামী ডিসেম্বরে বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডের নেতারা বলছেন, বিএনপি জানে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা কখনো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। উল্টো পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা শুরু করেছে। দেশকে আবারও বিভিষিকাময় অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে চায়। বিএনপির ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে কর্মসূচি পালন করা হবে। এছাড়া নভেম্বরের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শুরু হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোও নভেম্বর থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে যুবলীগ। বিএনপিকে কোনভাবেই ঢাকার রাজপথ ছেড়ে দেবে না। ঢাকায় বড় কর্মসূচিও পালন করতে দেবে না। রাজনৈতিকভাবে বিএনপির কর্মসূচি মোকাবেলা করা হবে।
এদিকে বিএনপির সমাবেশ ও কর্মসূচিতে দলটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা, বড় সমাবেশ করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিগত সময়ে বিএনপির কর্মসূচিতে দলটির এতো পরিমাণ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা যায়নি। বিভিন্ন সময় মিছিল মিটিং করলেও তাতে অল্প সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকতো। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করলেও তাতে হাতে গোনা নেতাকর্মী উপস্থিত থাকতো। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গাভাবে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে।
এদিকে সরকারের একটি সূত্র জানায়, বিএনপিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঢাকার বাইরে বড় বড় কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কোন কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে না বহির্বিশ্বে এমন বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া দীর্ঘদিন পরে বিএনপি আন্দোলন করলে বা কর্মসূচি পালন করলে দলটির সক্ষমতা সম্পর্কেও ধারণা পাবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বিএনপির কর্মসূচিতে কারা কারা স্পনসর করছে বা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে তা চিহ্নিত করা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপিকে ডিসেম্বরে মাঠেও নামতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপি একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। একেক সময় একেকটা সুযোগ আসে ছোট বড়। সেটাকে পুঁজি করেই তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। নির্বাচনের আরও এক বছর আছে। এর আগেই তারা ক্ষমতা দখলের জন্য, উল্টো পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাস রক্তে ভেজা মাস। সেই মাসে তারা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়। আমানুল্লাহ আমানের মতো নেতা বক্তব্য দেয়, ১০ তারিখের পরে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে তারা ঘোষণা দেয়। বিজয়ের মাসে বিএনপিকে সারা দেশের কোথাও নামতে দেওয়া হবে না। সারা মাসব্যাপী আমাদের কর্মসূচি থাকবে। সকালে একটা, বিকালে আরেকটা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির যে কথাবার্তা, লজ্জা লাগে। আমাদের পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। যে ভাষা আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করে, যে ভাষায় তারা হুঙ্কার দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের উত্তেজিত করার জন্যে, তারা চায় আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীরা যাতে উত্তেজিত হয়, তাদের ওপর আক্রমণ করে। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা ধৈর্য ধরে আছে। এজন্য বিএনপি অরাজনৈতিক ভাষায়, নোংরা ভাষায় আজ আস্ফালন করছে। তাই পরিষ্কার, এদের আর বরদাশত করা হবে না, মাঠে থাকতে দেওয়া যাবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইনিলাবকে বলেন, বিএনপির জনসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন ভাবনা নেই। তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে সভা করতেই পারে। খুলনায় সমাবেশে বাঁধা দেওয়া হয়েছে বলে চরম মিথ্যাচার করছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ কোথাও বাঁধা দেয়নি। সরকারও রাজনৈতিক কার্যক্রমে কোন বাঁধা দেয়নি, দিচ্ছে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা খুলনা রেলস্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছে। পুলিশ সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। তারা পূর্বের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথে হাটছে। তারা জনগণ ও সরকারের সম্পত্তির উপর হামলা করলে আমরা তা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা ধ্বংসাত্মক রাজনীতি প্রতিহত করবো।
এদিকে ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে যুবলীগ। যুবলীগের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) অডিটোরিয়ামে যুবলীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেন, আপনারা জানেন বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় যেতে চায়। ওদের এই নৈরাজ্যের জবাব সংগঠন হিসাবে যুবলীগ একলাই দিতে পারে তা ১১ নভেম্বর এই যুব মহাসমাবেশের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করবো ইনশাল্লাহ। রাজপথ কার, তা আগামী মহাসমাবেশে বিএনপিকে দেখিয়ে দেয়া হবে। যুব মহাসমাবেশের মাধ্যমে এই বাংলার মাটিতে সন্ত্রাস-জামাত-বিএনপির কবর রচনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন