শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতা-১

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে লক্ষ করে ইরশাদ করেন, হে বাছা! যদি তোমার পক্ষে সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটানো সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি মলিনতা নেই, তবে সেভাবে কাটাবে। তারপর বললেন, হে বাছা! এটা আমার সুন্নত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জিন্দা করল, সে আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে। (জামে তিরমিযী : ২৬৭৮)।

এ হাদিস দ্বারা নবী কারীম (সা.)-এর সুন্নত ও জীবনাদর্শের একটি দিক সম্পর্কে আলো পাওয়া যায়। তিনি সে আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য সরাসরি প্রিয় খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন। আর তার মাধ্যমে এ উপদেশ তাঁর উম্মতের সকলের প্রতি। যেন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকে এ আলোয় আলোকিত হয়।

তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে উপদেশ দিয়েছেন, যেকোনো মানুষের ব্যাপারে তার অন্তর নির্মল রাখতে। সকাল-সন্ধ্যা এভাবে কাটাবেন যে, তার অন্তরে কারো প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোনো দুঃখ-কষ্ট নেই এবং কোনো রাগ ও ক্ষোভ নেই। যে যত দুঃখ-কষ্ট দিক, মনে যত বড় আঘাতই দিক, অবিলম্বে সে আঘাতের চিহ্ন মুছে ফেলবে। মুখে ক্ষমা ঘোষণা করবে এবং অন্তর পরিষ্কার করে ফেলার চেষ্টা করবে। যেন কোনো দিন তার পক্ষ থেকে সে কোনো কষ্ট পায়ইনি।

প্রিয়নবী (সা.) জানাচ্ছেন এটা তাঁর সুন্নতÑ তাঁর জীবনাদর্শ। তিনি সারাটা জীবন এভাবেই কাটিয়েছেন। কত মানুষ তাঁকে কতভাবে কষ্ট দিয়েছে। তিনি জগতের শ্রেষ্ঠতম সত্যবাদী। তা সত্ত্বেও বিরুদ্ধবাদীরা তাঁকে মিথ্যুক বলে গালি দিয়েছে। তাঁর মতো সুস্থ-নিখুঁত বুদ্ধি কার কখন ছিল? তথাপি তারা তাঁকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। সর্বকালের সর্বোত্তম সারগর্ভ কথা তিনিই বলতেন। তারপরও তাঁর অমূল্য কথাকে অসার কল্পনা ঠাওরানোর মতলবে তাঁকে কবি বলে কটাক্ষ করত। মানুষের শ্রেষ্ঠতম দরদী বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। তাঁর পবিত্র শরীরে আঘাতের পর আঘাত করেছে, তাঁকে রক্তাক্ত করেছে। তাঁকে দেশছাড়া পর্যন্ত করেছে।

তিনি তাদের সকল নিষ্ঠুরতা ক্ষমা করেছেন। মন থেকে আঘাতের সব চিহ্ন মুছে ফেলেছেন। প্রাণের শত্রুরা যখন আসামীরূপে সামনে হাজির হয়েছে, অতীতের সব মলিনতা ভুলে পরম মমতায় তাদের বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। এমন স্নেহ-ভালোবাসা ও এমন ইজ্জত-সম্মান তাদের দেখিয়েছেন যে, তারা নিজেরাও সব তিক্ততা চিরতরে ভুলে গেছে এবং একান্ত সেবকরূপে তাঁর জন্য কুরবান হয়ে গেছে।

শত্রুর শত্রুতা ভুলে তাকে বন্ধুতে পরিণত করা ছিল নবী কারীম (সা.)-এর আদর্শ। আঘাতের বিপরীতে কল্যাণ কামনা ও কাদার বদলে সুবাস বিলানোই ছিল তাঁর সুন্নত। অন্তরে মলিনতা পুষে রাখা তাঁর সুন্নতের পরিপন্থী। তিনি নিজে কোনো দিনই তা পুষে রাখেননি এবং তা পুষে রাখাকে অন্যের জন্যও অনুমোদন করেননি। প্রিয়নবী (সা.)-এর সীরাত গ্রন্থ যারা পড়েছে, তারা জানে, জীবনে তিনি কত শত্রুকে ক্ষমা করেছেন, কত নিষ্ঠুরতা বিস্মৃত হয়েছেন এবং কত গভীর আঘাতের চিহ্ন অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেছেন।

উহুদ যুদ্ধের ঘটনা কে না জানে! বিজয়োন্মত্ত কাফেররা মুসলিম মুজাহিদদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল? শহীদদের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করেছিল। হাত-পা, নাক-কান কেটে বিকৃত করে দিয়েছিল। হযরত হামযা (রা.)-এর বুক ফেড়ে হৃৎপিণ্ড বের করে ফেলেছিল। আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দের উন্মত্ত আক্রোশ তাতেও মেটেনি। তার দাঁতের কামড়ে সে হৃৎপিণ্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাদের হিংস্রতা যেন কোনোক্রমেই তৃপ্তি পাচ্ছিল না। তারা একযোগে নবী কারীম (সা.)-এর ওপর হামলে পড়েছিল। তাদের আঘাতে তাঁর শিরোস্ত্রাণ ভেঙে যায়। তার কড়া চোয়ালে ঢুকে পড়ে। তাতে তাঁর নূরানী দাঁত শহীদ হয়ে যায়। এতসব পৈশাচিকতা যারা চালিয়েছিল, সে বাহিনীর নেতৃত্ব কে দিয়েছিল? নেতৃত্ব যে দিয়েছিল তার নাম আবূ সুফয়ান।

আবূ সুফয়ানের অতীত জীবনের কুখ্যাতি অনেক। সে জীবনে তিনি ছিলেন বহু কুকর্মের হোতা। মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ইসলাম ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র তিনি চালিয়েছেন। অনেক অঘটন তখন তিনি ঘটিয়েছেন। তার সে জীবনের দুষ্কৃতির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। কিন্তু তার উপর্যুপরি দুষ্কর্মের একসময় ছেদ ঘটে। তা ঘটার পেছনে ছিল যে জিনিসের ভূমিকা, তা কেবলই নবী কারীম (সা.)-এর ওই সুন্নত, যা তিনি জীবনভর সকল শত্রুর সঙ্গে রক্ষা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন