টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে দুটি অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। ব্রিসবেনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৬২ রানে হারে সাকিব আল হাসানের দল। গতকাল দ্বিতীয় অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হতে পারেনি বাংলাদেশ। বৃষ্টি হানা দেওয়ায় টসের আগেই পরিত্যক্ত হয় এই প্রস্তুতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ব্রিসবেনে সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। পরে বৃষ্টির বেগ আরও বাড়ে। অ্যালান বোর্ডার মাঠে উইকেটের কাভারই সরানো যায়নি। এদিন নিউজিল্যান্ড ভারত, পাকিস্তান-আফগানিস্তান প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিও পরিত্যক্ত হয়েছে বৃষ্টির কারণে।
বিশ্বকাপের আগে সবগুলো দলকেই দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছে আইসিসি। উদ্দেশ্য হলো বিশ্বকাপের ম‚ল মঞ্চে নামার আগে যেন সেরা একাদশের খেলোয়াড়রা নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্প‚র্ণ আলাদা। ওয়ার্মআপ ম্যাচ বরং সাকিব আল হাসানদের জন্য সেরা একাদশ খুঁজে নেওয়ার মিশন। অথচ একদম শেষ মুহ‚র্তেও সেই জায়গায় টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে কাজ করছে সংশয়, খুঁজতে হচ্ছে অনেক প্রশ্নের উত্তর।
প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে বোলিং ঠিকঠাক হলেও ব্যাটিংয়ে কঙ্কাল ফের বেরিয়ে গেছে। আফগানিস্তানকে ১৬০ রানে থামিয়ে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে তিন অঙ্কেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। একের পর এক উইকেট হারানো, মন্থর গতি মিলিয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের অচেনা ছবি দেখিয়ে সাকিবরা টেনেটুনে করতে পারেন ¯্রফে ৯৮ রান।
পেশিতে হালকা ব্যথা থাকায় লিটন দাস আগের দিন খেলেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটি না হওয়ায় আরেকটু বিশ্রামের সঙ্গেও হয়তো হলো। কেননা টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছে শতভাগ ফিট লিটনকেই বিশ্বকাপে নামাতে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এর আগে কখনো কোন ম্যাচ না খেলা লিটনের কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও যে খেলাটা হওয়া এবং তার খেলা দরকার ছিল। আফগানিস্তান ম্যাচে লিটন না খেলায় সেদিন নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ওপেন করতে দেওয়া হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজকে। মিরাজ যথারীতি চরম অস্বস্তিতে হাবুডুবু খেয়েছেন। ৩১ বলে খুইয়ে করতে পেরেছেন কেবল ১৬ রান। দু’একবার ফাটকা লেগে গেলেও নতুন বল সামলানো যে তার কাজ নয় সেটা এরমধ্যে ধরা পড়ে গেছে তার খেলার ধরণে। মিরাজকে একাদশে রেখে কোন কাজ হবে কিনা এই প্রশ্ন জোরালো হতে শুরু করেছে। বিস্ময়করভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঢুকে যাওয়া শান্ত নিউজিল্যান্ডে এক ইনিংসে কিছুটা ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন। এরপর তিনি গর্তে ঢুকে গেছেন। দু’একটা বাউন্ডারি মারলেও ডট বলের চাপ মেটাতে পারছেন না। শান্তর জায়গাও তাই প্রশ্নবিদ্ধ।
স্ট্যান্ডবাই থেকে ম‚ল দলে আসা সৌম্য সরকার নিউজিল্যান্ডে এক ইনিংসে শুরুটা পেয়েছিলেন। তার ব্যাটে দেখা যাচ্ছিল ইতিবাচক সুর। তবে এরপর দুই ইনিংসে আবার তড়িঘড়ি বিদায় নিয়ে অধারাবাহিকতার পুরনো ছবি দেখিয়েছেন। তবে ইন্টেন্টের কারণে মূল পর্বে তাকে খেলানোর জোর সম্ভাবনা। সৌম্য খেললে তিনি ওপেন করবেন নাকি তিনে খেলবেন এই দ্বিধাও দ‚র হয়নি।
একই অবস্থা লিটনের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে। এই মুহ‚র্তে দলের সেরা ব্যাটার তিনি। আছেন চেনা ছন্দেও। ওপেনিংয়েই লিটনের রেকর্ড বেশ যুতসই। গত দুই বছরে একমাত্র ওপেনার যিনি দলের চাহিদা প‚রণ করতে পারছেন। কিন্তু তাকেই নিয়মিত ওপেনিংয়ে রাখছে না বাংলাদেশ দল। একবার তিনে, একবার চারে তো একবার খেলেছেন ওপেনে। বিশ্বকাপে লিটনের পজিশন কি হবে তাও চ‚ড়ান্ত করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। মিডল অর্ডারে সাকিব, আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলি, নুরুল হাসান সোহান পর পর নামবেন। তাদের পজিশন মোটামুটি ঠিকঠাকই। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার অপশনে মিরাজকে ছাপিয়ে নিজের দাবি জোরালো করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
অস্ট্রেলিয়ার মাঠে তিন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। এরমধ্যে তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের জায়গা পাকা ধরা যায়। তৃতীয় পেসার হিসেবে কে খেলবেন? এক সময় নির্দ্বিধায় দলের সেরা পেসার থাকা মুস্তাফিজের আগের অবস্থা আর নেই। সেরা একাদশেই অনিশ্চিত তিনি। প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচেও ছিলেন গড়পড়তা। অস্ট্রেলিয়ায় বল গ্রিপ না করলে তার বোলিং হতে পারে নির্বিষ। মুস্তাফিজকে একাদশের বাইরে রাখা হবে নাকি অভিজ্ঞতা বিবেচনায় বাজি ধরা হবে আরেকটি, এই প্রশ্নের সমাধান হয়নি। মুস্তাফিজের সঙ্গে সেরা একাদশে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে আছেন শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন। এই দুজনও এমন কিছু করেননি যাতে তাদের কথা ভাবতে হয় আলাদাভাবে। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটিই ছিল নিজেদের প্রস্তুতির শেষ সুযোগ, সেরা সমন্বয় খুঁজে বের করারও। কোন দুজন ওপেন করবেন, ব্যাটিং অর্ডার কি হবে। মুস্তাফিজুর রহমানকে একাদশে রাখা হবে কিনা। এমন অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরণ শ্রীরামকে।
আগামী সোমবার হোবার্টে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। তবে সে ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এখনো ঠিক হয়নি। প্রথম রাউন্ডে ‘এ’ গ্রæপের রানার্সআপ দলের সঙ্গে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবেন সাকিব-লিটনরা। ‘বি’ গ্রæপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলও যোগ দেবে সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের গ্রæপে। এই গ্রæপে বাংলাদেশের বাকি তিন প্রতিপক্ষ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান। আগামী শনিবার হোবার্টে যাওয়ার কথা রয়েছে টাইগারদের। এই দুই দিন ব্রিজবেনেই অনুশীলন করবে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভে মাঠে নামার আগে তাই প্রস্তুতিটা ভালো হলো না বাংলাদেশ দলের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন