মোহাম্মদ ওয়াসিমের ফুল লেংথ বল মিডউইকেটে ঠেলে দৌড় দিতে দিতেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন বেন স্টোকস। ডাগআউট থেকে মাঠের দিকে ছুট লাগালেন ইংল্যান্ডের বাকি ক্রিকেটাররা। একে ওপরকে জড়িয়ে ধরলেন তারা। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ বলে কথা! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রতিপক্ষের ১৩৭ রান তারা পেরিয়ে গেছে তারা ৬ বল বাকি থাকতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতল ইংল্যান্ড। ২০১০ সাল নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বৈশ্বিক ট্রফি ঘরে তুলেছিল তারা।
চারে নেমে দুর্দান্ত এক ফিফটি উপহার দেন স্টোকস। ১ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৯ বলে ৫২ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি তার প্রথম পঞ্চাশ। এমন এক মঞ্চে ফিফটি করলেন তিনি, নিশ্চিতভাবেই যা তার মনে থাকবে অনেকদিন। কারণটা যে চার বছর ধরে বয়ে চলা এক দায়মোচনও!
২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের কাছে শেষ ওভারে চার ছক্কা হজম করেছিলেন এ ইংলিশ অলরাউন্ডার। তাতে ইংল্যান্ডের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছয় বছর পর সেই স্টোকসের অবদানেই শিরোপা জয় করল ইংল্যান্ড। দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্যারিবিয়ানদের পাশেও বসল ইংলিশরা। তবে একটি জায়গায় সবার চেয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ড, একই সময়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। ২০১৯ সালে দেশের মাটিতে জিতেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ শিরোপা।
উড়ন্ত ছন্দে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় এবার বিশ্বকাপ মিশনে যোগ দিয়েছিল ইংল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে আফগানিস্তানকে হারিয়ে তাদের শুরুটাও হয় দারুণ। কিন্তু পরের ম্যাচেই ইংলিশদের মাটিতে নামিয়ে আনে আয়ারল্যান্ড। সে হারে বড় ধাক্কা খান জশ বাটলাররা। বুঝতে পারেন নিজেদের ভুলগুলো। সেটাই বিশ্বকাপ জয়ের পরবর্তী পথকে মসৃণ করতে দারুণ সাহায্য করেছে বলে মনে করেন স্টোকস। শিরোপা জয়ে আইরিশদের অবদানও দেখছেন ইংল্যান্ডের তারকা এই অলরাউন্ডার, ‘টুর্নামেন্টে শুরুতে সেই হারে (আয়ারল্যান্ডের কাছে হার) আমরা ভুলগুলো বুঝতে পেরেছিলাম। এই ধরনের টুর্নামেন্টে আপনার জন্য সবকিছু সহজ হবে না। পথে সামান্য বাঁধা থাকবে। আয়ারল্যান্ডকে কৃতিত্ব দিতে হবে আমাদেরকে হারানোর জন্য। তবে ভালো দলগুলো নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় এবং এটা (হার) তাদের প্রভাবিত করতে দেয় না।’
এদিন ইংল্যান্ডের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন ম‚লত বোলাররাই। মামুলি স্কোরে আটকে রাখে পাকিস্তানকে। বল হাতেও অবদান রেখেছেন স্টোকস। তবে পাক ব্যাটিং লাইন আপটা ম‚লত ধসিয়ে দেন স্যাম কারান। চার ওভার বল করে মাত্র ১২ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। আদিল রশিদ ও ক্রিস জর্ডানও দারুণ বোলিং করেন। দুইজনই পান ২টি করে উইকেট। তাতেই লক্ষ্য হাতের নাগালে রাখতে সমর্থ হয় ইংলিশরা। তাই ফাইনালে বোলারদের কৃতিত্ব দিতেও ভোলেননি স্টোকস, ‘ফাইনালে বিশেষকরে লক্ষ্য তাড়া করার সময়.. আপনি সম্ভবত আগের সব কঠোর পরিশ্রম ভুলে গেছেন, আমরা কীভাবে বোলিং করেছি, আদিল রশিদ এবং স্যাম কারান আমাদের ম্যাচ জিতিয়েছে। এটি কঠিন একটি উইকেট এবং এমন একটি উইকেট যা আপনি কখনও অনুভব করতে পারবেন না। তাই তাদের ১৩৭ রানের মধ্যে আটকে রাখার জন্য অনেক কৃতিত্ব নিতে হবে।’
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ের উপহার দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন সেই বোলারদেরই স্যাম কারান। ৪ ওভারে ¯্রফে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন এই পেসার। শুধু ফাইনালেই নয়, আসর জুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন কারান। দলের এই সাফল্যের পথে বল হাতে সবচেয়ে বেশি অবদান তার। টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও উঠেছে তরুন এই গতি তারকার হাতে। আসরে ৬ ম্যাচ খেলা কারানের শিকার ১৩ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন তিনি কেবল ৬.৫২। সুপার টুয়েলভে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০ রানে তার শিকার ছিল ৫টি। টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট নেওয়া ইংল্যান্ডের একমাত্র বোলার তিনি।
কারান একমাত্র আরেকটি জায়গাতেও। এই নিয়ে ক্ষুদ্র সংস্করণের বিশ্বকাপে একমাত্র বোলার হিসেবেই যে জিতলেন আসর সেরার পুরস্কার। এর আগে প্রতিটি আসরেই যে নেতৃত্ব দিয়েছেন অলরাউন্ডার কিংবা ব্যাটসম্যানরা। শহীদ আফ্রিদ (২০০৭), তিলকারতেœ দিলশান (২০০৯), কেভিন পিটারসেন (২০১০), শেন ওয়াটসন (২০১২), বিরাট কোহলি (২০১৪), বিরাট কোহলি (২০১৬), ডেভিড ওয়ার্নার (২০২১)।
আসরের সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
বিরাট কোহলি (ভারত) ৬ ২৯৬ ৮২* ৯৮.৬৬ ১৩৬.৪০ ০/৪
ম্যাক্স ও’ডওড (নেদারল্যান্ডস) ৮ ২৪২ ৭১* ৩৪.৫৭ ১১২.৫৫ ০/২
সূর্যকুমার যাদব (ভারত) ৬ ২৩৯ ৬৮ ৫৯.৭৫ ১৮৯.৬৮ ০/৩
জস বাটলার (ইংল্যান্ড) ৬ ২২৫ ৮০* ৪৫.০০ ১৪৪.২৩ ০/২
কুশল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা) ৮ ২২৩ ৭৯ ৩১.৮৫ ১৪২.৯৪ ০/২
বোলার ম্যাচ উই. সেরা গড় ইকো. ৪/৫
হাসারাঙ্গা ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা) ৮ ১৫ ৩/৮ ১৩.২৬ ৬.৪১ ০/০
স্যাম কারান (ইংল্যান্ড) ৬ ১৩ ৫/১০ ১১.৩৮ ৬.৫২ ০/১
বাস ডি লিড (নেদারল্যান্ডস) ৮ ১৩ ৩/১৯ ১৩.০০ ৭.৬৮ ০/০
বেøসিং মুজারাবানি (জিম্বাবুয়ে) ৮ ১২ ৩/২৩ ১৬.৫৮ ৭.৬৫ ০/০
এনরিক নরকিয়া (দ.আফ্রিকা) ৫ ১১ ৪/১০ ৮.৪৫ ৫.৩৭ ২/০
এক নজরে ২০২২
চ্যাম্পিয়ন : ইংল্যান্ড
রানার্সআপ : পাকিস্তান
ফাইনাল সেরা : স্যাম কারান
আসর সেরা : স্যাম কারান
দলীয় সর্বোচ্চ
দ.আফ্রিকা ২০৫/৫, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ
বড় জয়
দ.আফ্রিকা ১০৪ রানে, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ
ইংল্যান্ড ১০ উইকেটে, প্রতিপক্ষ ভারত
সর্বাধিক রান
ভারতের বিরাট কোহলি, ৬ ম্যাচে ২৯৬
সেরা ইনিংস
দ.আফ্রিকার রাইলি রুশো ১০৯, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ
সর্বাধিক ছক্কা
জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা, ৮ ম্যাচে ১১টি
সর্বাধিক ফিফটি
ভারতের বিরাট কোহলি, ৬ ম্যাচে ৪টি
সেরা জুটি
ইংল্যান্ডের বাটলার-হেলস ১৭০*, প্রতিপক্ষ ভারত
সর্বাধিক উইকেট
শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, ৮ ম্যাচে ১৫টি
সেরা বোলিং
ইংল্যান্ডের স্যাম কারান ৫/১০, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
সর্বাধিক ক্যাচ
শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা, ৮ ম্যাচে ৯টি
সর্বাধিক ডিসমিসাল
ইংল্যান্ডের জস বাটলার, ৬ ম্যাচে ৯টি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন