শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহানবী (সা.)-এর মহানুভবতা-৩

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মদীনার জীবনে মুনাফিকরা ছিল কাফেরদের চেয়েও ভয়ঙ্কর শত্রু। সেই মুনাফিকদের সাথেও তিনি মনের মলিনতা ভোলার আচরণ করেছিলেন। মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবন উবাঈয়ের প্রতি দেখানো তাঁর মহানুভবতার নজির কে কোথায় পাবে? এ মুনাফিক কি না করেছে? কখনও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছে, কখনও সামনাসামনি অপমানকর উক্তি করেছে, কখনও ইহুদিদের উস্কানি দিয়েছে, কখনও আত্মকলহ সৃষ্টির চক্রান্ত করেছে, কখনও নবী-পরিবার সম্পর্কে ন্যক্কারজনক কথা বলেছেÑ এমন অপবাদ রটিয়েছে, যা ক্ষমা করার শক্তি কম মানুষেরই থাকে, এমনকি সে প্রিয়নবী (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করেছে।

এতকিছু সত্ত্বেও তিনি তাকে কেবল ক্ষমাই করে গেছেন। জানা আছে সে একজন মুনাফিক। মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলে, কিন্তু খাঁটি মনে কখনও ঈমান আনেনি। ওই যে মুখে মুখে নিজেকে মুসলিম বলত, সেদিকে তাকিয়ে দয়ার নবী সর্বদা তার মুক্তি কামনা করতেন। যখন তার মৃত্যু হয়ে গেল, তিনি তার জানাজাও পড়ালেন। হযরত উমর ফারূক (রা.) তাঁকে বার বার জানাজা পড়াতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু ফেরাতে পারেননি।

আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যদি তার জন্য সত্তর বারও ক্ষমা চান, তাও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, যদি জানতাম সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, আমি তাও করতাম। শত্রুর দেয়া আঘাতের কথা মনে রাখলে এতটা উদারতা দেখানো কখনও সম্ভব? কারো প্রতি যদি মনে সামান্য কালিমাও থাকে, তখনও কি সম্ভব এতটা মহানুভবতা প্রদর্শন?

বস্তুত সকল আঘাত ভুলে যাওয়া এবং মন থেকে সব মলিনতা মুছে ফেলা ছিল তাঁর সারা জীবনের আচরিত ধর্ম। ঘোরতর শত্রুর প্রতিও তাঁর এ আচরণে কোনো ব্যতিক্রম ছিল না। ব্যক্তি ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই তিনি এটা বজায় রেখেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর যখন প্রতিশোধ গ্রহণের অবারিত সুযোগ তাঁর সামনে, যারা তাঁকে হত্যা করতে সচেষ্ট ছিল, দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল, দেশত্যাগের পরও সমানে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিল, বিদ্বেষপরায়ণ সেই শত্রুগণ আসামিরূপে সামনে হাজির, দশ হাজার সশস্ত্র হুকুম বরদার আজ্ঞা পালনে প্রস্তুত, আঙ্গুলের এক ইশারায় হাজার হাজার শত্রুর শিরñেদ হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন রাহমাতুল্লিল-আলামীন (সা.)-এর মুবারক কণ্ঠ থেকে যে ফরমান উচ্চারিত হয়েছিল, তা ছিল তাঁর শুভ্র সফেদ হৃদয়েরই বাণী।

তাঁর অমলিন অন্তর থেকে সে ধ্বনিই উৎসারিত হয়েছিল, যা বহুকাল আগে মহান নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম, যারা তাঁর প্রাণনাশের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, সেই ভাইদের লক্ষ করে বলেছিলেন। প্রিয়নবী (সা.)ও সেদিন মক্কাবাসীদের উদ্দেশে বলেছিলেন : আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হবে না। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা ইউসুফ : ৯২) সুতরাং তোমরা যেতে পার। তোমরা মুক্ত।

প্রিয়নবী (সা.) একান্তভাবে চাইতেন, যাতে কখনও কারো প্রতি তাঁর মন খারাপ না হয়। সকলের প্রতি তিনি সন্দেহমুক্ত ও অমলিন হৃদয়ের হয়ে থাকতে চাইতেন। তাই তিনি এটাও পছন্দ করতেন না যে, কেউ তাঁকে কারও সম্পর্কে অপ্রীতিকর কিছু শোনাক। কেননা তাতে সেই ব্যক্তির প্রতি তাঁর মন খারাপ হয়ে যেতে পারে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেন : কেউ যেন আমার সঙ্গীদের কারো সম্পর্কে কোনো (বিরূপ) কথা আমাকে না শোনায়। কেননা আমি পরিষ্কার মন নিয়ে তোমাদের কাছে আসতে পছন্দ করি। (মুসনাদে আহমাদ : ৩৭৫৯)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) এ হাদিস শোনার পর যখন নবী (সা.)-এর মজলিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পথিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে পরস্পর আলাপচারিতায় লিপ্ত পেলেন। তারা দু’জন নবী (সা.) সম্পর্কে অশোভন উক্তি করছিল। তারা তাঁর সম্পর্কে যা বলছিল তিনি সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আবার ফিরে আসলেন এবং তাদের সে কথা সম্পর্কে তাঁকে অবগত করলেন। কিন্তু তিনি এটা পছন্দ করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Golam Kibria ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
মুহাম্মদ সা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের সাথে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি’। (মিশকাত)
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
মুহাম্মদ সা: সবসময় মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন ও সদালাপ করতেন। তাঁর মধুর বচনে সবাই অভিভূত হতো। তিনি জনগণকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, ুধার্তকে খাদ্য দাও, সালামের বহুল প্রচলন করো এবং এসব কাজের মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করো’। (সহিহ বুখারি)
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৭ এএম says : 0
হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার।
Total Reply(0)
Golam Kibria ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
মুহাম্মদ সা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষের সাথে সদাচরণ করে পৃথিবীর বুকে অতুলনীয় আদর্শ স্থাপন করেছেন। সর্বোত্তম আদর্শের বাস্তবায়নকারী ও প্রশিক্ষক হিসেবেই তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছিল। মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি’। (মিশকাত)
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৮:১৮ এএম says : 0
তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-বিনম্রতা, সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়েই বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত’। (সূরা আল-কালাম : ৪)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন