রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

রাসূল (সা.) এর বদৌলতে যে নেয়ামত পেলাম-১

মাওলানা আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা কি আল্লাহর শোকরগোযার বান্দা? আমরা কি নবীর ওয়াফাদার উম্মত? সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল আসমানী নেয়ামত আমরা পেয়েছি নবী (সা.)-এর অসীলায়। প্রথম নেয়ামত আল্লাহর মারিফত। মানুষমাত্রই আল্লাহকে পেতে চায়, তাঁর পরিচয় ও সান্নিধ্য লাভ করতে চায়। মানবাত্মার এই ব্যাকুলতা শাশ্বত ও চিরন্তন। তবে এর সফল পরিণতির জন্য অপরিহার্য সঠিক অন্বেষণ। কারণ এ তো অমোঘ সত্য যে, শুধু সঠিক পথের শেষেই থাকে সঠিক গন্তব্য।

আল্লাহর মারিফাত ও রেযামন্দি হাসিলের একটিই মাত্র পথ। আর তা হলো, নবুওত ও রিসালাত। নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমেই আল্লাহ তাঁর পরিচয় মানব জাতিকে দান করেছেন। তাই শুধু নবী-রাসূলগণের মাধ্যমেই পাওয়া যায় আল্লাহর মারিফাত এবং হাসিল করা যায় তাঁর রেযামন্দি।

আমাদের পরম সৌভাগ্য, আমরা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মত। তাই পৃথিবীর সকল জাতি যাঁকে অন্বেষণ করে তাঁর সন্ধান শুধু আছে আমাদের কাছে। দ্বিতীয় নেয়ামত আল্লাহর কালাম। পৃথিবীর সকল জাতি ঐশী বাণীর দাবিদার। নিজ ধর্মগ্রন্থকে সকলেই বলেন, ঐশী গ্রন্থ। কিন্তু এই দাবির প্রমাণ কী?

আসমানী কালামের একমাত্র সূত্র ওহী। ওহী ছাড়া অন্য কিছু যেমন : কাশফ, ইলহাম, সাধনা ও জপতপ, কোনো কিছুই আসমানী কালামের নির্ভুল সূত্র নয়। তাই নবী ও রাসূলের সূত্র ছাড়া আসমানী কালামের দাবি সম্পূর্ণ অসার। অথচ কাকে বলে নবুওত তা-ই তো জানা নেই অনেক জাতির এবং জানা নেই তার নবীর পরিচয়।

দ্বিতীয় শর্ত নবী ও উম্মতের যোগসূত্র। যারা নবীকে দেখেছেন এবং তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন তাদের সনদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা নবুওতের যমানা পায়নি তাদের তো সনদ ছাড়া উপায় নেই। সুতরাং জানতে হবে, কারা নবীর সাহচর্য পেয়েছেন এবং তাঁর নিকট থেকে আসমানী কালাম ধারণ করেছেন। এরপর কাদের নিকট এই আমানত অর্পণ করেছেন। এভাবে সেই যুগ থেকে এই যুগ পর্যন্ত শক্তিশালী ধারাপরম্পরা অপরিহার্য।

অন্যথায় আসমানী কালামের দাবি অবাস্তব। আজ কি ঈসায়ীদের কাছে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত এবং ইহুদিদের কাছে হযরত মুসা (আ.) পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন সূত্র আছে? যদি না থাকে তাহলে কীভাবে দাবি করা যায়, এটাই সেই কালাম যা হযরত মুসা ও হযরত ঈসা (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়েছিল? বরং স্বীকৃত সত্য হচ্ছে, যুগে যুগে তাওরাত ও ইঞ্জিলে শুধু পরিবর্তন ও পরিবর্ধনই হয়েছে, হেফাযত ও সংরক্ষণ হয়নি।

আর সর্বশেষ কথা এই যে, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আগমনের পর আল্লাহ ও বান্দার মাঝে তিনিই একমাত্র সূত্র। কারণ রাসূলগণের মাধ্যমে যে আদর্শ আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে যুগে যুগে দান করেছেন তার চূড়ান্ত ও সর্বশেষ রূপটি নবী (সা.) কে দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা : ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়িদা : ৩)।

এই আয়াতের তাৎপর্য উপলব্ধি করেই জনৈক ইহুদি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কে বলেছিল, আমীরুল মুমিনীন! এই আয়াত যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হত তাহলে ওই দিনকে আমরা উৎসবের দিবস হিসেবে গ্রহণ করতাম। আজ স্রষ্টার আনুগত্যের একমাত্র সূত্র হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)। তাঁর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া নবী-রাসূলের অনুসারী হওয়ার দাবি অসার। কারণ নবীর সম্পর্ক আদর্শের সাথে, সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের সাথে নয়।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ইবরাহীম ইহুদিও ছিলেন না, খ্রিষ্টানও ছিলেন না। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’ নিশ্চয়ই সকল মানুষের মধ্যে তারাই ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতর, যারা তাঁর অনুসরণ করেছে এবং এই নবী ও যারা ঈমান এনেছে। আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান : ৬৭-৬৮)।

বিভিন্ন প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই বাস্তবতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এক হাদীসে ইহুদিদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘আনা আহাককু বিমূসা মিনকুম’। অর্থাৎ তোমাদের চেয়ে আমি মূসা (আ.)-এর নিকটতর।

আমরা রাববুল আলামীনের কী শোকর আদায় করব যে, তিনি আমাদের জন্য তাঁর কালাম নাযিল করেছেন এবং তার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য সংরক্ষণ করেছেন। আজ শুধু মুসলিম জাতিই বলতে পারে, আল্লাহর কালাম যদি দেখতে চাও তাহলে এই যে, তা আছে আমাদের কাছে। এস! আল্লাহর কালাম পাঠ কর। তোমার হৃদয় ও মস্তিষ্কের সকল অন্ধকার দূর হোক এবং তোমার সর্বসত্তা ঐশী আলোয় উদ্ভাসিত হোক। মনে রেখ, এ কোনো ‘সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ’ নয়, এ তোমার স্রষ্টার বাণী, তোমার রবের কালাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Ismail Sagar ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:২০ এএম says : 0
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, ‘আমি তো তোমাকে জগতসমূহের জন্য কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। ’-সূরা আম্বিয়া: ১০৭
Total Reply(0)
Md Ali Azgor ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:২০ এএম says : 0
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিরান ও অনাবাদ হৃদয়গুলোকে আবাদ করলেন আল্লাহতায়ালার প্রেমের মশাল জ্বেলে। বইয়ে দিলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও হিকমত-মারেফতের হাজারও সালসাবিল। নির্যাতিত মানুষের হৃদয়ে স্থাপন করলেন জুলুম-নিপীড়ন, অন্যায়-অবিচার এবং দুশমনি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদদীপ্ত এক প্রচণ্ড বিদ্রোহ ও আন্দোলন। নির্যাতিত, অবমানিত ও লাঞ্ছিত মানবতাকে শিক্ষা দিলেন সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব এবং উপেক্ষিত, বিতাড়িত ও অসহায় মানবগোষ্ঠীকে টেনে নিলেন সেই বুকে, যে বুকে স্থান হয় কেবল প্রেম-মায়া-মমতা-ভালোবাসা-ত্যাগ-সৌহার্দ্য ও কল্যাণের। তারা মানবতার কল্যাণে নিবেদিত।
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:২০ এএম says : 0
মহান বৈপ্লবিক পরিবর্তন সমাজে ও মানুষের মননে সম্ভবপর করেছিলেন শান্তির দূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি সূচনা করেছিলেন এক গৌরবদীপ্ত মানবিক নতুন যুগের। আল্লাহতায়ালার অসীম রহমতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর নতুন যুগের আহ্বান স্থান-কাল-পাত্রের সীমাবদ্ধ গণ্ডিকে অতিক্রম করে বিশ্বজনীন হয়ে উঠেছিল।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন