লক্ষ্মীপুর জেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে নিয়োগ ফলাফলে চরম তথ্য গোপন ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে নিয়োগের চুড়ান্ত ফলাফলে সাবেক চর লরেঞ্চ ইউনিয়ন যাহা বর্তমান ৪ নং চর মার্টিন ইউনিয়নের উত্তর চর মার্টিন ইউনিটে হোমায়রা বেগমকে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। হোমায়রা কমলনগর উপজেলার ৮ নং চর কাদিরা ইউনিয়নের ম্যারিজ রেজিস্ট্রার (কাজী)আবদুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর বাবার বাড়ি সূদুর রংপুর জেলায় অবস্থিত।
এ বিষয়ে অপর প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থী মুমতাহিনা প্রিয়া, খাদিজা আক্তার,শারমিন সুলতানা জেলা প্রশাসক বরাবর পৃথক পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ বিবরণে জানা যায়, চুড়ান্ত উত্তীর্ণ হোমায়রা ৮ নং চর কাদিরা ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কাজী আবদুর রহমানের স্ত্রী। তাঁর বসতবাড়ী ও স্থায়ী ঠিকানা চর কাদিরা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডস্থ চর পাগলা গ্রামে।
সম্পূর্ণ তথ্য গোপন করে প্রতারনা আশ্রয় নিয়ে নাগরিকত্ব সনদ ও অন্যান্য প্রমানাদি জাল জালিয়াতি করে স্ক্যানিং বা টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে কাগজপত্র দাখিল করে অসদুপায়ে নিয়োগ হাসিল করেন।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সুস্পষ্ট বিধান হচ্ছে 'পরিবার কল্যাণ সহকারি' পদে নিয়োগ আবেদন, নিয়োগ লাভে বিজ্ঞাপ্তিতে চাহিত ইউনিটের অধিভুক্ত বাসিন্দা হতে হবে।ইউনিট বা অধিক্ষেত্র বহির্ভূত কেউ কোনভাবেই নিয়োগ লাভ বা আবেদনই করতে পারবেননা'।সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত হোমায়রা অন্য ইউনিয়নের অধিবাসি হয়েও সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে দূর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নিয়োগ ফলাফল চুড়ান্ত বাছাইকৃত হয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য যে,অভিযুক্ত হোমায়রার বাবার বাড়ি রংপুর জেলায় হওয়ায় সঙ্গত কারণেই তিনি স্বামীর ঠিকানায় আবেদন করার যোগ্য। তাঁর স্বামী চর কাদিরা ইউনিয়নের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার। আর একজন ম্যারিজ রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন সে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
এ বিষয়ে অন্যান্য প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী শারমিন সুলতানা ও খাদিজা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, 'তথ্য গোপনের মাধ্যমে অন্য এলাকার বাসিন্দা দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের ইউনিটে চাকুরির আবেদন ও নিয়োগ ফলাফলে স্থান করে নেয় যা আমাদের বৈধ অধিকার খর্ব করা হয়েছে '।
এ দিকে অভিযোগকারী প্রার্থীগণ আশংকা করে বলেন, 'অনৈতিক কোন উপায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি তদন্তকে প্রভাবিত করে নিয়োগ হাসিল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন'।
অভিযুক্ত হোমায়রা ও তাঁর স্বামী, বাবা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে ভেরিফাই করার পাশাপাশি সরেজমিনে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাঁর নিয়োগ ফল বাতিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিদ্ধন্ধি প্রার্থীগন জেলা প্রশাসকের দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ হোমায়রার স্বামী কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ও রামগতি চর কলাকোপা কামিল মাদরাসার শিক্ষক কাজী আবদুর রহমানের কাছে স্ত্রীর তথ্য গোপন ও অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেননা বলে জানান।তাছাড়া কিভাবে কোন উপায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে তা তাঁর বোধগম্য নয় বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী জানান, তথ্য গোপনের মাধ্যমে পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে উত্তর চর মার্টিন ইউনিটে চর কাদিরা ইউনিয়নের জনৈক মহিলা নিয়োগ ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে শুনেছি। যেহেতু ইউনিটের বাইরে কেউ আবেদন করার সুযোগ নাই সেহেতু ভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা, চর মার্টিন ইউনিয়ন বা নির্দিষ্ট ইউনিট কোটায় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণকৃত প্রার্থীর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপ পরিচালক ডাঃ আশফাকুর রহমান জানান,' তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে যাছাইয়ের নিমিত্তে উত্তীর্ণ অভিযুক্ত প্রার্থীদের বিভিন্ন ডকুমেন্টস আনতে বলা হয়েছে '।
অভিযোগ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন আকন্দকে জানতে চাইলে তিনি জানান ' দুটি অভিযোগ আসছে যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে'।
উল্লেখ্য ২০২১ সালে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের দুটি পদে জনবল নিয়োগেে বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিগত ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষা ও ২৩,২৪ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।একই দিন রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন