বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল্লাহ ‘রাব্বুল আলামীন’-১

মাওলানা শিব্বীর আহমদ | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:২৩ এএম

পবিত্র কুরআনে কারীম আল্লাহ তা’আলার কালাম। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর ওপর নাযিল হওয়া এ কুরআন মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আগত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ। অকাট্য শ্বাশ্বত এ গ্রন্থের পুরোটা জুড়েই ছড়িয়ে আছে মানবজাতির হেদায়েতের পয়গাম। আসমানী এ হেদায়েত ও পথনির্দেশনা কখনো আদেশ-উপদেশের সুরে, কখনো ঘটনা বর্ণনার মধ্য দিয়ে কিংবা অন্য কোনো আঙ্গিকে বিবৃত হয়েছে। হেদায়েতের একটি বড় দিক বলা যায়- সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক, আল্লাহ তা’আলার পরিচয় লাভ।

আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমান-এর ওপরই নির্ভর করে একজন মুমিনের অন্য সকল বিষয়। এ ঈমানের জন্য প্রয়োজন পরিচয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা নিজেই নিজের কিছু পরিচয় উল্লেখ করেছেন। এ পরিচয়ের বিবরণ এতটাই সরল ও সাদামাটা, যা পড়াশোনার আলোবঞ্চিত একজন অতি সাধারণ মানুষও খুব সহজেই বুঝতে পারে। আবার এ বিবরণ এতটাই গভীর, যা একজন উচ্চশিক্ষিত গবেষক ব্যক্তিকে ভাবনায় বিভোর রাখতে পারে বছরের পর বছর। বিবরণের এ মোজেযা অবশ্য পুরো কুরআনেই ছড়িয়ে আছে।

পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম বাক্যটিতেই বর্ণিত হয়েছে আল্লাহ তা’আলার একটি পরিচয়-তিনি ‘রাব্বুল আলামীন’। রব অর্থ প্রতিপালক। যিনি প্রতিটি মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেন, তিনিই ‘রব’, তিনিই প্রতিপালক। আর রাব্বুল আলামীন তিনি, যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। জগৎজুড়ে যত কিছু রয়েছে, যত কাল ধরে রয়েছে, যত কাল ধরে থাকবে, যত জায়গা জুড়ে রয়েছে, তিনি সবকিছুরই প্রতিপালক।

আমরা যারা পৃথিবীতে বেঁচে আছি, স্থূল দৃষ্টিতে আমরা নানা জিনিস দেখি। নিজেদের বাইরে গাছ-পালা, পশু-পাখি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, কীট-পতঙ্গ, আকাশ-জমিন, চাঁদ-সূর্য ইত্যাদি কত কিছু দেখি! একেকটি প্রজাতির মধ্যে কত বৈচিত্র! এক মানুষেরই কত ধরণ! নারী-পুরুষ, শিশু-যুবক-বৃদ্ধ, সাদা-কালো, লম্বা-খাটো, চিকন-মোটা, ধনী-গরীব, উঁচু বংশীয় আর নিচু বংশীয়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শাসক-শাসিত- বৈচিত্রের আরো কত দিক! একেকজনের প্রয়োজন একেকরকম। চাহিদা সবার একরকম নয়।

কিন্তু যিনি রব ও প্রতিপালক, তিনি যেমন বৈচিত্রপূর্ণ এ মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতির এ বিচিত্রতাও তাঁরই সৃষ্টি। জগতের শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যবিধানের জন্যে এ বিচিত্রতা অবধারিতও ছিল। বৈচিত্র সৃষ্টি করে তিনিই জানিয়ে দিয়েছেন - আমিই পার্থিব জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যেন একজন আরেকজনকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারে। (সূরা যুখরুফ : ৩২)।

কথা হল, মহান আল্লাহ মানবজাতির এ বৈচিত্র রক্ষা করেই সকলের চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। সৃষ্টির সূচনা থেকেই তিনি মিটিয়ে যাচ্ছেন বিচিত্র মানুষের বিচিত্র চাহিদা। এখনো মেটাচ্ছেন। মেটাবেন আগামী দিনেও, যতদিন পৃথিবী টিকে থাকে ততদিন এবং পরকালেও। সেখানেও তো তিনিই রব, তিনিই প্রতিপালক। পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত কত মানুষ জন্ম নিয়েছে এর প্রকৃত হিসাব কি কারও পক্ষে করা সম্ভব? আর কত মানুষ জন্ম নেবে ভবিষ্যতে, এর কল্পনাও তো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আগে-পরের সব হিসাব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার কাছেই আছে।

প্রতিটি মানুষের জন্ম, জন্মের পর নানা বয়সের নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে মৃত্যু- সবকিছুর হিসাবই তাঁর কাছে রয়েছে। শুধুই কি হিসাব, বরং এ সব তো তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। এভাবে জগতের এক দুর্বল ও ক্ষুদ্র সদস্য মানুষকে নিয়ে ভাবতে থাকলেও আল্লাহ তা’আলার রবুবিয়্যাত ও প্রতিপালন গুণের সীমা-পরিসীমার কল্পনায় অক্ষমতা স্বীকার করতে হয় আমাদের। পাশাপাশি অকপটে স্বীকার করতে হয় তাঁর কুদরত শক্তি ও প্রতিপালনের অসীমতাকে। তিনিই আমাদের রব, তিনি রাব্বুল আলামীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন