শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বরকতময় জীবন লাভের উপায়-২

মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৩ এএম, ৮ নভেম্বর, ২০২২

ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত হয় সততার দ্বারা। একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা বলে অচল মাল চালিয়ে দিলে বা মালের গুণগত মান সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাময়িকভাবে বেশি লাভ করতে সক্ষম হলেও, পরবর্তীতে ক্রেতা সঠিক তথ্য জানার পর উক্ত ব্যবসায়ীকে বর্জন করে। ফলে উক্ত ব্যবসায়ী উক্ত ক্রেতা থেকে ভবিষ্যতে আরো বহু দিন যেসব লাভ অর্জন করতে সক্ষম হতো তা থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে সততা বর্জনের কারণে সে বঞ্চিত হয়। এটাই হল তার বরকত মোচন। ক্রেতাও অসততার ফলে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।

বোখারী শরীফে হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রা. কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : তারা (ক্রেতা ও বিক্রেতা) উভয়ে যদি সত্য বলে এবং দোষত্রুটি পরিষ্কার করে ব্যক্ত করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং গোপন করে তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মোচন হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী : ২০৭৯)।

খাবারে বরকত অর্জন করার জন্য খাবার শুরু করার পূর্বে আল্লাহর নাম নিয়ে ও আল্লাহ কর্তৃক বরকত দানের বিষয়ে দু’আ করে খাবার শুরু করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। খাবার সামনে আসলেও এরূপ দু’আ রয়েছে। খাবার শুরু করার সময়ও এরূপ দ’ুআ রয়েছে।

খাবার সামনে আসলে ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীমা রাযাক্বতানা ওয়াক্বিনা আযাবান্নার’ দু’আটি পাঠ করা সুন্নত। এ দু’আটির অর্থ হল-হে আল্লাহ, তুমি আমাদের যে রিযিক দান করেছ, তাতে বরকত দাও। এবং জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর। (কিতাবুল আযকার : ৬৫০)। খাবার শুরু করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ’ দ’ুআটি পাঠ করা সুন্নত। এ দ’ুআটির অর্থ হল, আল্লাহর নামে আল্লাহর বরকতের সাথে খাওয়া শুরু করছি।

খাবারে আরো বরকত হয় একত্র খাওয়ার দ্বারা। হযরত ওয়াহশী ইবনে হারব্ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম (সা.)-এর কতিপয় সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা খানা খাই কিন্তু তাতে তৃপ্তি হয় না যে? তখন রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা সম্ভবত ভিন্নভিন্নভাবে খানা খাও? তারা বললেন, জী। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা একত্র মিলে খানা খাও এবং আল্লাহর নাম নিয়ে খানা খাও। তাতে তোমাদের খাবারে বরকত দান করা হবে। (সুনানে আবু দাউদ : ৩৭৬৪)।

খাবারে আরো বরকত হয় পড়ে যাওয়া খাদ্যের টুকরা উঠিয়ে (প্রয়োজনে ধুয়ে) খেলে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ফায়দা বয়ান করে বলেছেন : তোমাদের জানা নেই, তোমাদের খাদ্যের কোন অংশে বরকত রয়ে গেছে। সেমতে হতে পারে, যে অংশ পড়ে গেছে তার মধ্যেই বরকত রয়ে গেছে। অতএব সেটা তুলে খেয়ে নাও।
রিযিকে বরকত হয় আত্মীয়-স্বজনের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা। হযরত আনাস রা. কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি নিজ জীবিকার বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে। (সহীহ বুখারী : ২০৬৭)। উল্লেখ্য, রিযিক দ্বারা শুধু খাবার উদ্দেশ্য নয়; বরং মানুষ জীবনে খাবার, ধন-সম্পদ, পোশাক-পরিচ্ছদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, শান্তি-নিরাপত্তা যা কিছুই ভোগ করে সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত।

বিয়ে-শাদীতে বরকত হয় অতিরিক্ত ব্যয় বর্জন করার দ্বারা। শুআবুল ঈমান গ্রন্থে হযরত আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয় সে বিবাহ বেশি বরকতময় যে বিবাহে ব্যয় কম।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী : ৬১৪৬)।

সম্প্রতি বিয়ে-শাদীতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের অপচয় হয়। সেইসাথে গান-বাদ্য, ভিডিও বেপর্দিগী ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পাপ কাজ করা হয়। এসব কারণে বিয়ে-শাদীর বরকত নষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দাম্পত্য জীবনে সুখশান্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়া এই বরকতহীনতারই বহিঃপ্রকাশ।

এভাবে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে বরকত আসে তা শরীয়তে খুব সুন্দরভাবে নির্দেশিত হয়েছে। এ সবগুলোর মূল কথা হল, রাসূলুল্লাহ (সা.) সুন্নতের অনুসরণ। এর মাধ্যমেই জীবনের সকল ক্ষেত্রে বরকত আসে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন